
আজারবাইজানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাংলাদেশ মধ্য এশিয়া ও রাশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে কানেক্টিভিটি (যোগাযোগ) বাড়াতে চায়। এরই অংশ হিসেবে, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও আজারবাইজানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের আলোচনা, ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠক, যেখানে কানেক্টিভিটিকে প্রধান গুরুত্ব দেওয়া হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামীকাল ২৯ এপ্রিল ঢাকায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন, আর আজারবাইজানের পক্ষে উপস্থিত থাকবেন ডেপুটি ফরেন মিনিস্টার এলনুর মামাদভ, যিনি ২৭ এপ্রিল রাতে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ফরেন অফিস কনসালটেশনে দুদেশের সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, তবে বাংলাদেশের মূল এজেন্ডা থাকবে কানেক্টিভিটি। বাংলাদেশ আজারবাইজানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে চায়, বিশেষ করে মধ্য এশিয়া অঞ্চলে কানেক্টিভিটি বাড়ানোর মাধ্যমে বাণিজ্যসহ সব খাতে সহযোগিতা জোরদার করতে চায়। আজারবাইজানের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী, আর এ দেশটির সঙ্গে কানেক্টিভিটি বাড়াতে পারলে মস্কো কেন্দ্রিক আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও জোরালো হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আজারবাইজানের অধিকাংশ বিমান রাশিয়া হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে। ঢাকার সঙ্গে বাকুর সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু হলে বাংলাদেশ সহজেই রাশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে যেতে পারবে, ফলে মধ্যপ্রাচ্য ঘুরে মস্কোয় যাতায়াতের প্রয়োজন হবে না। আজারবাইজানের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন বাড়বে, তেমনি মানুষের চলাচলও বাড়বে।
সরকারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, আজারবাইজান বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী, আমরাও তাদের সঙ্গে কানেক্টিভিটি এবং বাণিজ্য বাড়াতে চাই। আজারবাইজানও আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য করতে চায়। তারা প্রযুক্তি বিনিময়, আইসিটি সেক্টরে সহযোগিতা এবং জ্ঞান বিনিময়ের বিষয়ে আগ্রহী।
এফওসি বৈঠকে জয়েন্ট কোপারেশন, ট্রেড কোপারেশন এবং শিক্ষা কোপারেশন নিয়ে সমঝোতা স্মারকগুলোর বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বর্তমানে আজারবাইজানের শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ থাকলেও, সেখানে কিছু বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। যদিও সরকারের কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই, তবে ধারণা করা হচ্ছে আজারবাইজানে প্রায় হাজারখানেক বাংলাদেশি কৃষিভিত্তিক কাজ করছে।
আজারবাইজানের ডেপুটি ফরেন মিনিস্টার এলনুর মামাদভ সোমবার (২৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এর সঙ্গে বৈঠক করবেন। পরদিন মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) তিনি বাংলাদেশ ও আজারবাইজানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের আলোচনা এ অংশ নেবেন।
এছাড়া ঢাকা সফরের সময়, আজারবাইজানের ডেপুটি ফরেন মিনিস্টার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশ-আজারবাইজানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে একটি লেকচার দেবেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
গত বছরের নভেম্বরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজারবাইজান সফর করেন। সফরের সময়, তিনি বাকুতে অনুষ্ঠিত কপ-২৯ সম্মেলনে অংশ নেন এবং আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে, প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ বাংলাদেশ-আজারবাইজানের সম্পর্ক গভীরতর করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রেসিডেন্ট ইলহাম জানিয়েছিলেন, এক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি দল বাংলাদেশে পাঠাতে আগ্রহী তিনি। সেই দল আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করবে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কীভাবে দুদেশের সহযোগিতার বহর বাড়ানো যায়। বাংলাদেশে বাণিজ্য বাড়ানো ছাড়াও ঢাকায় এক আবাসিক দূতাবাস খোলার পরিকল্পনা আছে আজারবাইজানের।