
Anwar Hossain Manju (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু)
মাওলানা মোহাম্মদ আলী (১৮৭৮-১৯৩০) ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন। তিনি হিন্দ-মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯২৩ সালে তিনি কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৩০ সালে তিনি লন্ডনে গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন যে, তিনি পরাধীন ভারতে কবরস্থ হতেও চান না। এ সফরকালে ঘটনাচক্রে তিনি অসুস্থ হয়ে লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী তার মরদেহ ভারতে না গিয়ে ফিলিস্তিনে বায়তুল মাকদাসে দাফন করা হয়।
তিনি অত্যন্ত রসিক ছিলেন। তার রসিকতার দুটি ঘটনা উপস্থাপন করা হলো:
মাওলানা মোহাম্মদ আলী একবার ভারতীয় লোকসভায় গেছেন। যেহেতু তিনি লোকসভার ছিলেন না, অতএব, তিনি দর্শক গ্যালারিতে বসেছেন। লোকসভা অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন লোকসভার প্রথম নির্বাচিত স্পিকার (১৯২৫) বিঠালভাই প্যাটেল। মাওলানাকে দর্শক গ্যালারিতে দেখে তিনি তাঁর আসন থেকে উঠে দাঁড়ান এবং লোকসভা সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘পার্লামেন্টে সভাপতির আসনে যিনি থাকেন দর্শক গ্যালারিতে গুরুত্বপূর্ণ কে এসেছেন তা দেখা রীতির মধ্যে পড়ে না। কিন্তু আমি সকল রীতি প্রথা ভঙ্গ করে বলতে চাই যে, মাওলানা মোহাম্মদ আলীর উপস্থিতিতে আজ আমরা কতটা সম্মানিত বোধ করছি। আমি আশা করিÑ সেদিন খুব দূরে নয়, যেদিন আমরা তাকে দর্শক গ্যালারির পরিবর্তে নির্বাচিত সদস্য হিসেবে আমাদের মাঝে দেখতে পাব।’
সদস্যরা ডেস্ক চাপড়ে ও আনন্দধ্বনি করে মাওলানাকে অভিনন্দন জানান। মাওলানা মোহাম্মদ আলী, যিনি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আইনসভা বয়কটের আহ্বান জানিয়েছিলেন, তিনি মাথা ঝুঁকিয়ে সকলের অভিনন্দন গ্রহণ করে উত্তর দেন, ‘পার্লামেন্টে আমার নাম উল্লেখ করায় আমি যথেষ্ট সম্মানিত বোধ করছি। কিন্তু আমি যেখানে আছি সেখানে অবস্থান করাকেই প্রাধান্য দেবো, যাতে এখান থেকে আপনাদের সবার ওপর দৃষ্টি রাখতে পারি।’
**
আরেকবারের ঘটনা, মাওলানা মোহাম্মদ আলী কায়রোর আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করার পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া গাউন পরে পার্লামেন্টের কেন্দ্রীয় হলে আসেন। গাউন দেখতে বোরকার মতো ছিল এবং পেছন থেকে মাওলানাকে দেখে একজন মহিলার মতো লাগছিল। তখন কেন্দ্রীয় হলে একটি বার ছিল, যেখানে কম মূল্যে পানীয় পাওয়া যেত। কিছুটা মাতাল হয়ে পড়া এক সদস্য মাওলানাকে খোঁচা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, ‘আমার মনে হচ্ছিল, আমাদের মাঝে একজন বেগম সাহেবাকে পেয়ে আমরা ধন্য হয়েছি। পেছন থেকে আপনাকে দেখতে একজন মহিলার মতো লাগছে।’
মাওলানা তাকে বলেন, ‘আপনাকে হতাশ করতে হচ্ছে বলে আমি দুঃখিত। আমার স্ত্রী কখনো হিজড়াদের সমাবেশে আসতে সম্মত হবেন না।’