
কলকাতায় হত্যার শিকার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহের খণ্ডিতাংশের সঙ্গে তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের ডিএনএ মিলে গেছে। ডিএনএ টেস্টের এই রিপোর্ট ভারতীয় পুলিশের কাছ থেকে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গত বছর নভেম্বরে আনারের মেয়ে ডরিন কলকাতায় গেলে সেখানকার সিআইডি কার্যালয়ে তার ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয়। তারপর ডরিন ও আনারের ডিএনএ নমুনা যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয় সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে।
বিষয়টি নিয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আনারের ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট এখনো আমরা হাতে পাইনি। অপেক্ষায় আছি। তবে মামলাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি।
এদিকে মামলার বাদী আনারের মেয়ে ডরিন এখন নিজেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ডরিন আড়ালে রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডরিন আওয়ামী লীগ নেতার মেয়ে হওয়ায় ভয়ে আছেন। কারণ বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডরিনের এক আত্মীয় কালের কণ্ঠকে জানান, বাবা হত্যার মামলা নিয়ে ডরিন বেশ তৎপর ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি নিজেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁরাও ডরিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। ডরিন কারো ফোনও রিসিভ করছেন না।
ডরিনের মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদকও একাধিকবার ফোন করলে তিনি ধরেননি।
আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু, আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া, শিলাস্তি রহমান, তানভীর ভুঁইয়া, ফয়সাল ও মোস্তাফিজুরকে গ্রেপ্তার করা হয় বাংলাদেশে। ভারতের পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন জিহাদ হাওলাদার আর ডিবির তথ্যের ভিত্তিতে নেপালে গ্রেপ্তার হন সিয়াম। তারা সবাই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
ডরিনের ওই আত্মীয় আরো জানান, আনার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শিমুল বিশ্বাস। কারাগার থেকে তিনি নিজের লোকজন দিয়ে ডরিনসহ আনারের আত্মীয়-স্বজনকে মামলা উঠিয়ে নিতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।
আনার হত্যাকাণ্ড তদন্তে বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা যান কলকতায়। আবার কলকাতার তদন্তকারীরা আসেন বাংলাদেশে। গত বছর ২৩ মে ভারতীয় কর্মকর্তারা এসে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজির সঙ্গে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে দীর্ঘ সময় কথা বলেন।
উল্লেখ্য, গত বছর ১২ মে ভারতে যান সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। তিনি ওঠেন সেখানকার পূর্বপরিচিত গোপাল বিশ্বাসের পশ্চিমবঙ্গের বরাহনগরের বাড়িতে। পরদিন ১৩ মে চিকিৎসা করানোর কথা বলে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন তিনি। কিন্তু ওই দিন রাতেই নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের বহুতল আবাসনের ‘বিইউ-৫৬’ ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে তাঁকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
এরপর গত বছর ২২ মে আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানায় আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।