Image description

জুলাই আন্দোলনের শহিদ জসীম উদ্দিনের ১৭ বছর বয়সী কন্যা লামিয়া গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। একটি নির্মম বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে আজ আরও এক তরতাজা প্রাণ হারালো সমাজের চিরচেনা অবহেলা ও নিষ্ঠুরতার কাছে।জানা গেছে, কিছুদিন আগে বাবার কবর জিয়ারত করতে যাওয়ার পথে লামিয়া ধর্ষণের শিকার হন। সেই ভয়াবহ ট্রমা থেকে তিনি আর কখনও পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেননি।

লামিয়ার আত্মহত্যার পর জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবরিনা আফরোজ শ্রাবন্তী নিজের ফেসবুক পোস্টে লামিয়ার সঙ্গে কাটানো শেষ সময়ের মর্মস্পর্শী বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি জানান, আত্মহত্যার কয়েক ঘণ্টা আগেও তিনি লামিয়ার বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন। গল্প করেছেন, খাওয়া-দাওয়া করেছেন। বিদায়ের সময় লামিয়ার কণ্ঠে ফুটে উঠেছিল অসহায়তা ও ক্ষোভ,'আল্লাহ যা করে, সেটা নাকি ভালোর জন্যই করে। আমার কি ভালো করসে বলতে পারেন? আমার সাথে খালি খারাপই হইসে!'

সাবরিনা আফরোজের মতে, লামিয়ার মৃত্যু শুধু ধর্ষণের ঘটনার ট্রমা থেকে নয়, বরং সমাজের ফিসফাস, কটূক্তি, সন্দেহ, ও চরিত্রহরণের সংস্কৃতি তার আত্মাকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। বাসার আশেপাশের মানুষের কানাঘুষা ও নোংরা ইঙ্গিত তাকে মানসিকভাবে এমন পর্যায়ে ঠেলে দেয়, যেখানে আর বেঁচে থাকার শক্তি ছিল না।

লামিয়ার মা এ বিষয়ে বলেছিলেন, মেয়ের ইন্টার পরীক্ষা শেষ হলেই তারা দূরে কোথাও চলে যাবেন,যেখানে কেউ চিনবে না, আঙুল তুলবে না। তবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই থেমে গেল লামিয়ার জীবন।

এই ঘটনায় শুধু ধর্ষণকারীরাই নয়, বরং যারা ভুক্তভোগীর চরিত্র নিয়ে কটূক্তি করেছে, যারা তার প্রতি অবজ্ঞা ছড়িয়েছে, তারাও কম দায়ী নয়,এমন মন্তব্য করেছেন সাবরিনা আফরোজ। লামিয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ফের একবার প্রমাণ হলো, ধর্ষণের পর শুধু অপরাধ নয়, সামাজিক বৈষম্য ও অবজ্ঞাও একটি মেয়েকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

'একজন মেয়ের সম্মতি ছাড়া যদি কিছু ঘটে, সেখানে মেয়েটার অপরাধ কোথায়?'সাবরিনা আফরোজের এই প্রশ্ন গোটা সমাজের বিবেককে নাড়া দেওয়ার মতো।


লামিয়ার মৃত্যু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির চেয়েও বড়।এটি পুরো সমাজের এক নির্মম, বিকৃত মানসিকতার প্রতিচ্ছবি। যেখানে একজন নির্যাতিতাও নিরাপদ নয়, যেখানে দোষীদের বিচার অপেক্ষার চেয়েও দ্রুত হয় ভুক্তভোগীকে দোষারোপ। যেখানে ভিকটিম-ব্লেমিং আজও আমাদের নষ্ট সংস্কৃতির অংশ।