
Nabila Idris (নাবিলা ইদ্রিস)
গুমের ভুক্তভোগীদের রেজিলিয়েন্স আর ইনজেনুইটি আমাকে আর অবাক করা উচিত না — আমি তো অলরেডি শতাধিক সাক্ষ্য নিয়েছি — কিন্তু তবুও আসলে অবাক করে।
এক ভুক্তভোগী আমাকে বলেছিলেন কীভাবে একদিন জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে স্পেশালি নির্মমভাবে মারা হয়েছিল। মারধরের আগে তিনি শুনেছিলেন টর্চারিং অফিসার ফোনে খুব উত্তেজিত হয়ে কাউকে এবরশান করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। বলছিলেন, সব ব্যবস্থা তিনি করে রেখেছেন, ভদ্রমহিলা যাতে জাস্ট কাজটা করে ফেলে ইত্যাদি। ফোনালাপে যা-ই ঘটছিল তা ওই অফিসারকে এতটা অস্থির করে তোলে যে অতঃপর তার সব রাগ ওই ভুক্তভোগীর ওপর ঝাড়েন। এদিকে ভুক্তভোগী সেই কথোপকথনের সবকিছু মনে রেখে পরে আমাকে বলেছিলেন। আর আমি তো আগেই ওই কর্মকর্তার সেক্স স্ক্যান্ডাল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলাম — তাই টাইমলাইন মিলিয়ে এক্সট্রা করে নিশ্চিত করা সহজ ছিল যে এটাই সেই অফিসার যে অলরেডি আমাদের লিস্টে ছিল।
মানুষ কীভাবে কী কী মনে রাখে, সেটা শুনেও অবাক না হয়ে পারা যায় না। এক বন্দী আমাকে খুব নির্দিষ্ট করে প্রহরীদের সম্পর্কে বলছিলেন। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, "আপনার চোখ বাঁধা ছিল না?" তিনি হেসে বলেছিলেন, "হ্যাঁ, কিন্তু প্রতিটি প্রহরীর গায়ের গন্ধ আলাদা ছিল।"
আরেকজন বলেছিলেন গোপন বন্দিশালায় কীভাবে বন্দীরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতেন। সেখানে সেলগুলো মুখোমুখি ছিল। যদিও ২৪ ঘণ্টা হাতকড়া আর চোখ বাঁধা অবস্থায় রাখা হতো, যখন প্রহরীরা দূরে থাকত, তখন একটু করে চোখের বাঁধন সরিয়ে বা হাত নাড়িয়ে ইশারা করা যেত। করিডোরের মুখে লাইট বাল্ব যেই পজিশনে ছিল, তাতে কোন প্রহরী কাছে এলে তার ছায়া আগে ভেতরে এসে পড়ত, যা আগাম সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করত।
তো যখন প্রহরীরা কাছে থাকত না, তখন বন্দীরা ইশারা সহ নানা ক্রিয়েটিভ উপায়ে কথা বলতেন। একটি উপায় ছিল বাতাসে হাত দিয়ে অক্ষর লেখা। কিন্তু যেহেতু সেলগুলো মুখোমুখি ছিল, তাই অক্ষরগুলো উল্টো করে — অর্থাৎ মিরর ইমেজের মতো — লিখতে হতো। সেই বন্দী বললেন, বাতাসে লিখতে লিখতে তিনি এত দক্ষ হয়ে গিয়েছিলেন যে এখনও আয়নার মতো উল্টো করে খুব দ্রুত লিখতে পারেন। আমিও আমার ডায়েরি এগিয়ে দিলাম — তিনি মুহূর্তের মধ্যে তার পুরো নাম উল্টো করে লিখে দেখালেন। এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে অর্জিত এক অদ্ভুত দক্ষতা নিয়ে ওনার জাস্টিফাইড প্রাইড দেখতে আমার সেদিন বেশ ভালোই লেগেছিল!
কিন্তু আমরা যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি পাচ্ছি তা হলো রেজিলিয়েন্স থ্রু রিলিজিয়োসিটি। শুরুর দিকে ভেবেছিলাম স্যামপ্লিং বায়াস, হয়তো ধার্মিক মানুষরা বেশি টার্গেটেড হয়েছে বলে আল্লাহর কথা এত বারবার আসছে জবানবন্দিতে? কিন্তু পরে দেখলাম এটা অতি সরলীকরণ হয়ে যাচ্ছে — অনেকেই আসলে বন্দিত্বের মধ্যেই অধিক ধর্মপরায়ণ হয়ে উঠেছিলেন। অনেকেই বলেন তারা বন্দিত্বে থাকাকালীনই নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করেন, নতুন করে সূরা মুখস্থ করেন, ইত্যাদি... সবই চোখ বাঁধা-হাতকড়া পরা অবস্থায়। যখন দুনিয়ার সব আশা নিভতে বসেছিল, তখন তারা আল্লাহর কাছে আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিলেন। একজন তো বললেনই যে তারা অনেকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন — তাদের বন্দী রাখতে রাখতে দরকার হলে অফিসাররা ক্লান্ত হয়ে যাবে, কিন্তু বন্দীরা ক্লান্ত হবে না।
এই যে অসীম সাহস... এটাই কিন্তু বাংলাদেশ!