Image description

ইতালিতে যাওয়ার আশায় দালাল চক্রের ‘কম খরচের’ প্রলোভনে লিবিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার হাউসদী এলাকার তিন যুবক। কিন্তু স্বপ্নভঙ্গ হয় নির্মম বাস্তবতায়।

লিবিয়ায় বন্দীশিবিরে আটকে রেখে দিনের পর দিন তাদের ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। পরে পরিবার থেকে আদায় করা হয় মোটা অংকের মুক্তিপণ। এরপর থেকে নিখোঁজ ওই তিন যুবক।

নিখোঁজ তিন যুবক হলেন— মধ্য হাউসদী গ্রামের বাবুল ফকিরের ছেলে মারুফ হোসেন, তার ভাগ্নে মহিউদ্দিন মোড়ল ও প্রতিবেশী যুবক সোলায়মান আকন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অল্প টাকায় ইতালি পৌঁছে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই তিন যুবককে লিবিয়ায় নিয়ে যান স্থানীয় দালাল বাবুল মাতুব্বর ও হাওয়া বেগম। লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর তাদের তুলে দেওয়া হয় একটি মানব পাচারকারী চক্রের হাতে। এরপরই শুরু হয় ভয়াবহ নির্যাতন। একাধিকবার নির্যাতনের বর্ণনা শুনিয়ে মোবাইল ফোনে পরিবার থেকে টাকা আদায় করে দালালরা।

নিখোঁজ সোলায়মান আকনের মা সালমা আক্তার জানান, তার ছেলেকে বন্দি করে দফায় দফায় মুক্তিপণের টাকা আদায় করেছে। বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে তারা দালালদের প্রায় ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এরপরও ছেলের কোনো খোঁজ পাননি। উল্টো হাওয়া বেগম ও বাবুল মাতুব্বর তাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন।

নিখোঁজ মারুফ হোসেনের বাবা ও মহিউদ্দিন মোড়লের মামা বাবুল ফকির বলেন, প্রথমে কম খরচে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে প্রলুব্ধ করে দালালরা। পরে লিবিয়ায় আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করে। ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে তারা ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায় করেছে। এরপরও ছেলে ও ভাগ্নের কোনো খোঁজ নেই।

জানা গেছে, বাবুল মাতুব্বর দীর্ঘদিন ধরে মাদারীপুর শহরের চরমুগরিয়া বন্দর শাখা সোনালী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। মামলা হওয়ার পর থেকে তিনি কর্মস্থলেও অনুপস্থিত। হাওয়া বেগম তার স্ত্রী। তাদের একটি চক্র আছে, যারা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে মানবপাচার করে থাকেন। প্রথম ধাপের দালালরা গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল মানুষদের অল্প টাকা ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখায়। এরপর তাদের ফাঁদে পা দিলেই তারা ভুক্তভোগীদের লিবিয়া পাঠিয়ে সেখানকার মাফিয়াদের হাতে তুলে দেয়। এরপর ভুক্তভোগীদের বন্দি শিবিরে আটকে রেখে নির্যাতন করে মোটা অংকের টাকা আদায় করে তারা। এই নির্যাতনে অনেকেই প্রাণ হারায়।

নিখোঁজ তরুণদের স্বজনরা জানান, ছয় মাস আগে হাওয়া বেগম ও বাবুল মাতুব্বরের ফাঁদে পা দেন মারুফ হোসেন, মহিউদ্দিন মোড়ল ও সোলায়মান আকন। তাদের ইতালি পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় নেওয়া হয়। সেখানে প্রথম কিছু দিন সঙ্গে স্বজনদের যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এরপর তাদের ওপর দালাল চক্র অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরিবারের লোকজন তাদের প্রাণ রক্ষায় ভিটা-মাটি বিক্রি করে, চড়া সুদে টাকা নিয়ে দালাল চক্রকে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও নিখোঁজদের কোনো হাদিস পাচ্ছে না পরিবারগুলো। তারা বেঁচে আছেন কিনা, সেটি নিয়েও পরিবারের সদস্যরা সন্দিহান।

তাদের আরও অভিযোগ, হাওয়া বেগম ও বাবুল মাতুব্বরের নামে একাধিক মামলা করলেও এখনো গ্রেপ্তার হয়নি কেউ। বরং তারা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও দুজনের একজনকেও পাওয়া যায়নি।

মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল হোসেন বলেন, এই ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ হুমকি দিয়ে থাকলে সেটাও গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখা হবে।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাছান বাংলানিউজকে বলেন, মানবপাচারের মতো স্পর্শকাতর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশ তৎপর রয়েছে।