
গ্রীষ্মকালে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এবার গ্রীষ্মে সরকারি হিসাবে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ধরা হয়েছে। বর্তমানে চাহিদা কমবেশি ১৫ হাজার মেগাওয়াট। এর বিপরীতে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ফলে দেশে এখনই লোডশেডিং হচ্ছে। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোডশেডিংও বাড়বে।
বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামাঞ্চলে সকাল থেকে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। সকাল-দুপুর ও রাত যে কোনো সময় লোডশেডিং হচ্ছে। আগে থেকে লোডশেডিংয়ের তথ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর কথা থাকলেও গ্রাহক কিছুই জানতে পারছে না। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় মৌসুমি ঝড়বৃষ্টির কারণে সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে লোডশেডিং হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা। বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া লোডশেডিংয়ের কারণে চলতি বোরো মৌসুমে সেচ পাম্পগুলো ঠিকমতো চালানো যাচ্ছে না। ফলে আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এদিকে, রাজধানী ঢাকায়ও লোডশেডিং হচ্ছে। রামপুরা, বাসাবো, খিলগাঁও, উত্তরখান, টঙ্গী ও পুরান ঢাকার কিছু এলাকায় গতকাল লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গত সপ্তাহে এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, লোডশেডিং যাতে না হয়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু জ্বালানির সংকট রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানির সংস্থান করতে। তারপরও কিছু লোডশেডিং হবে। তিনি বলেন, দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর শর্টকাট সমাধান নেই। তাই অনেকগুলো গ্যাসকূপ সংস্কার করে উৎপাদন কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে। তবে তা পর্যাপ্ত হবে না। এজন্য আমদানি বাড়ানো প্রয়োজন। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে। এখন যত বেশি সম্ভব কয়লা ও এলএনজি আমদানি করে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন বৃদ্ধির চিন্তা করা হচ্ছে। এরপর পরিস্থিতি বুঝে জ্বালানি তেলে জোর দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের চিত্র থেকে দেখা যায়, গতকাল বিকেল ৩টায় দেশের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ৫০ মেগাওয়াট। আর উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৮৮৫ মেগাওয়াট। এই সময় ১৫৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। এদিন সকাল ৬টায় ১২ হাজার ৭৮০ মেগাওয়াট চাহিদা ছিল, এই সময় লোডশেডিং করা হয়েছে একশ মেগাওয়াট। চলমান সেচ মৌসুমের কারণে গভীর রাতে লোডশেডিং হচ্ছে বেশি। গতকাল রাত ১টায় আড়াইশ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি হিসাবে একশ মেগাওয়াট বলা হলেও মাঠের চিত্র ভিন্ন।
পিডিবির এক কর্মকর্তা জানান, গরম আর একটু বাড়লেই লোডশেডিং প্রকট হবে। আশঙ্কা করছেন এবার দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং হতে পারে। প্রতিবারের মতো এবারও গ্রীষ্মে সরকার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে আছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মাত্রাতিরিক্ত আমদানিনির্ভরতার কারণে সরকার বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে পারবে কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা শঙ্কায় আছেন।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, রমজানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সরকার ভালো সামাল দিতে পারলেও এবার গ্রীষ্মে এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের শঙ্কা করছি। গরম এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। ঝড়বৃষ্টির কারণে বিদ্যুতের চাহিদাও কম। গরম যখন পুরোপুরি পড়বে, তখন বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা বোঝা যাবে। তবে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালালে তখন খরচ বাড়বে। এজন্য সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। তখন চাপ কমাতে সরকারকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে যেতে হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেসকোর রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চল মিলে বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে ৩০-৩৫ শতাংশ কম আসছে জাতীয় গ্রিড থেকে। পুরো অঞ্চলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করতে হচ্ছে নেসকোকে। এ অঞ্চলের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো মোট চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ পাচ্ছে। ফলে গ্রাহক ৬-৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আর্থিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।