
Maskwaith Ahsan (মাস্কওয়াইথ আহসান)
২০২৪ সালের ৫ অগাস্টের পর থেকে ভারতের গদি মিডিয়ায় বাংলাদেশ সম্পর্কে যে খবরাখবর প্রচারিত হয়; তা দেখে বাংলাদেশের একজন স্কুল ছাত্রও জানে কি সব উদ্ভট আর আজগুবি খবরের সমারোহ সেসব মিডিয়ায়।
বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকার সংস্থাগুলোকে প্রতিদিন ব্যস্ত থাকতে হয় গদি মিডিয়ার বানোয়াট খবরগুলো চিহ্নিত করে সবাইকে জানাতে। এমনকি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়গুলোকেও মাঝে ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যা ভাষণের প্রেক্ষিতে বিবৃতি দিতে হয়।
কিন্তু বাংলাদেশ মিডিয়ায় হাসিনার ১৫ বছরের ভারতমোদী শাসনকালে গদি মিডিয়ার কপি পেস্ট জার্নালিজম করে এমন এক বদ অভ্যাস তৈরি হয়েছে; যা প্রায় নয়মাসেও কাটেনি। ভারত তোষক হেড অফ দ্য নিউজেরা কেউ পলায়নে, কেউ কারাগারে, কেউ বরখাস্ত; কিন্তু ভারতীয় হাইকমিশনের নিমন্ত্রণগুলো দল বেঁধে ছবি তুলে যারা পিকনিক করতো; তারা ঠিকই রয়ে গেছে; বাংলাদেশের মিডিয়ায় ভারতের প্রচারণা বয়ে নিয়ে যাবার জন্য।
কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার কাভারেজে; বাংলাদেশ মিডিয়ার সোর্স হবার কথা রয়টার্স ও অন্যান্য বিদেশী সংবাদ সংস্থা; যাদের সাংবাদিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মিডিয়ার কাশ্মীর কাভারেজে দেখবেন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার উদ্ধৃতি ও ফুটেজ। সাংবাদিকতার আন্তর্জাতিক আচরণবিধি মেনে সে সব সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে।
অথচ বাংলাদেশের কিছু মিডিয়া ভারতের মোদী প্রভাবিত গদি মিডিয়াকে উদ্ধৃত করে একের পর এক খবর প্রচার করে চলেছেন। খোদ ভারতের লোক গদি মিডিয়াকে বিশ্বাস করে না; তারা ইউটিউবে পেশাদার সাংবাদিকদের স্বাধীন বিশ্লেষণে আস্থা রাখে; অথচ বাংলাদেশ মিডিয়ার অগাধ আস্থা ভারতীয় মিডিয়ার ওপর। কাশ্মীর কাভারেজ ইউটিউবে সাজানো রয়েছে; ভারতীয় মিডিয়া ও বাংলাদেশ মিডিয়ার ভাষ্যে কোন স্বাতন্ত্র্য নেই। বাংলাদেশ মিডিয়া ভারতীয় মিডিয়ার জোয়াল কাঁধে নিয়ে বয়ানের ভূমি কর্ষণ করছে। ঠিক যেমন বৃটিশ আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদার কলকাতায় থাকতো; আর পূর্ব বঙ্গের কৃষক জোয়াল কাঁধে নিয়ে জমিদারের জমি চাষ করে ফসল জমিদারের গোলায় তুলে দিয়ে আসতো।
নরেন্দ্র মোদীর কট্টর হিন্দুত্ববাদী শাসনটি গত এগারো বছর ধরে নানা রকম নাটক ও থিয়েটার করে ধামাচাপা দিয়েছে নিজের শাসনতান্ত্রিক দুর্বলতা। দারিদ্র্যে বিশীর্ণ দেশটিতে ফুটপাথে ভূমি থেকে উতখাত হয়ে আসা নিরন্ন মানুষের মিছিল, কৃষক আত্মহত্যার বেদনায় মুহ্যমান শস্যক্ষেত্র, কর্মসংস্থানের অভাবে যুবকের আত্মহত্যার বিষণ্ণকাল, বৈষম্য ধূসর ভারতের একদিকে আম্বানি পরিবারের আজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে বলিউড নাচছে; অন্যদিকে গ্রামের শিশুরা মাটি খেয়ে ক্ষুধানিবৃত্ত করছে। এর ওপর রয়েছে আগবাড়িয়ে সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতন, হত্যা, উচ্ছেদ। মোদীর এই নিষ্ঠুর পীড়নের ক্ষোভে জনবিক্ষোভ ঘন হলেই; তখন হঠাত একটি ঘটনার সুযোগ নিয়ে চলতে থাকে ফাঁপা যুদ্ধকান্না।
বৃটিশ আমলে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হিন্দু-মুসলমান বিদ্বেষের জ্বালানি দিয়ে ক্ষমতা কাঠামো তার ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বালিয়েছে; আরো কিছুদিন ক্ষমতায় থেকে যাবার উষ্ণতা কুড়িয়ে। স্রেফ ব্লাফ দিয়ে দেশলুন্ঠনের কালোবাজারি এইসব ব্লেম গেমের রাজনীতির। জাতীয়তাবাদের তেলে ক্ষমতার পরোটা ভাজার ৭৮ বছরের শেষ এগারো বছর মাংসের আয়োজন আছে। প্রয়োজন হলেই কে কোথায় মানুষ বলি দিচ্ছে তার কোন হিসাব নেই। মোদী মেরেও কাঁদে; মরেও কাঁদে। মিথ্যাবাদী রাখালের গল্পে প্রায়ই বাঘ এসেছে বলে ধাপ্পাবাজি করলে; যেদিন সত্যি সত্যি বাঘ আসে, সেদিন কেউ বিশ্বাস করে না।
বাংলাদেশে মোদী সমর্থিত আওয়ামী লীগ মেরেও কাঁদে মরেও কাঁদে। সিলেক্টিভ এইসব কুমীর কান্নার আসরে শেষ পর্যন্ত তা নিজ দলীয় কান্না। এ কারণে জুলাই মাসে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণী হত্যা দেখে যারা নির্বিকার ছিলো; ভারতে সংখ্যালঘুর ওপর হত্যা নির্যাতন দেখে বাংলাদেশের যাদের টু শব্দটি নেই; তারা মোদীর চোখে অশ্রু দেখলেই কেঁদে ওঠে। এই সিলেক্টিভ কান্নাটি আমাদের শিখিয়েছে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। এই মানসিক বিকৃতি ছড়িয়ে পড়েছে জনপদে।
শেখ হাসিনার ফেসবুক ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছাত্রী আর নরেন্দ্র মোদির হোয়াটস এপ ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছাত্রীদের সিলেক্টিভ জাস্টিসের কান্না দেখে নতুন প্রজন্ম যেন এই ক্যানিবালিজম না শেখে। মানুষের মৃত্যুর কোন ধর্ম গোত্র নেই; মৃত্যু মানে মায়ের বুক খালি হওয়া, পিতার বুকে ফাঁকা দালানের কষ্ট, যে মানুষটি গতকালও এই আলো হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিয়েছিলেন; যার চোখ জুড়ে আগামীর আশার স্বপ্ন ছিলো; তা আজ নেই। ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিয়েছে তার বাঁচার অধিকার। মৃত্যু মানেই শোকের; এই সাধারণ বোধটি নষ্ট করতে ক্ষমতা-কাঠামো ও মিডিয়া সক্রিয় থাকে। আমরা বনাম ওরা'র নরভোজি খেলাটা খেলে তারা দীর্ঘায়িত করতে চায় নিজের মসনদ। আমরা যেন সেইসব ক্যানিবালের ফাঁদে পা না দেই।