Image description

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ ও চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হন। ওই ঘটনায় করা মামলা ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত বাসচালক জামির হোসেনকে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় বেপরোয়া চালনার কারণে অবহেলাজনিত মৃত্যুর জন্য (পরিকল্পিত নরহত্যা নয়) দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

এ ছাড়া সাভারে এক নারীকে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগে ২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মীর হোসেন মীরু নামের আরেক চালককে ফাঁসির আদেশ দেন সিএমএম আদালত। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে পরিবহন শ্রমিকরা রাজধানীসহ কয়েকটি জেলায় গাড়ি চালানো বন্ধ রাখেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে গাবতলী বাস টার্মিনালের পাশের একটি পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। অচল করে দেয় পুরো এলাকা।

গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পরও পরিবহন শ্রমিকদের আচরণ বদলায়নি। বরং আরো বেড়েছে বলে তথ্য মিলছে। গত ১৭ এপ্রিল রাজধানীর গাবতলী এলাকায় একটি পিকআপের কাগজ পরীক্ষা করাকে কেন্দ্র করে পরিবহন শ্রমিকরা হামলা চালিয়েছে পুলিশের ওপর। এতে এক সার্জেন্টসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিবহন শ্রমিকরা প্রধান সড়কে গাড়ি আড়াআড়ি করে রেখে দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় আশপাশের এলাকার পুলিশও ওই এলাকা ত্যাগ করে।

জানা গেছে, চারজন পুলিশ সদস্য আহত হলেও পুলিশের তরফ থেকে মামলা করা হয়নি। দারুস সালাম থানার ওসি রকিব উল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, কোনো মামলা হয়নি। অপর এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মামলা ও গ্রেপ্তার করতে গেলে তারা পুরো রাজধানীতে ঝামেলার সৃষ্টি করতে পারে। 

রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহ চিত্র : গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টর চৌরাস্তা এলাকায় রাইদা পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে গৃহকর্মী গেনেদা খাতুন নিহত হন। তিনি রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু যাত্রী আগে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় বেপরোয়া গতিতে রাইদা পরিবহনের দুটি বাসের প্রথমটি (ঢাকা মেট্রো-ব-১২-৩৪১৭) গেনেদা খাতুনকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি রাস্তায় পড়ে গেলে পেছনে থাকা অপর রাইদা বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-১৫২২) চাকা গেনেদা খাতুনের মাথা পিষ্ট করে। ওই সময় রাইদা পরিবহনের বিরুদ্ধে আন্দোলনও হয়েছিল। এর পরও রাজধানীতে থেমে নেই রাইদাসহ বিভিন্ন পরিবহনের রেষারেষি। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী শুধু রাজধানীতেই গত বছর প্রাণ হারিয়েছে সাত হাজার ২৯৪ জন মানুষ। যাদের বেশির ভাগই বাসের রেষারেষির বলি হয়েছে।

আওয়ামীপন্থী বাস মালিকরা বিশৃঙ্খলার পক্ষে : জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পরিবহন সেক্টরের রাজা শাজাহান খানের আশকারায় পরিবহন শ্রমিকরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সরকারের পতন হয়েছে। শাজাহান খান গ্রেপ্তার হয়ে কারাগার রয়েছেন। এর পরও সেই বেপরোয়া শ্রমিকদের বাগে আনতে পারছে না কেউ। কথায় কথায় বাস চালানো বন্ধ করে দেওয়া, পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত হওয়া তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। জানা গেছে, পরিবহন মালিকদের মধ্যে যাঁরা আওয়ামী লীগপন্থী তাঁরা চায় বিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে। ফলে রাজধানীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান।

সংস্কার কমিশন দাবি : রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা কেউ কাউকে মানে না। অনেক সংস্কার কমিশন হলো, কিন্তু এই পরিবহন সেক্টরের জন্য কোনো সংস্কার কমিশন হলো না। অথচ এই সেক্টরটি দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। আমি মনে করি এখনো সময় আছে একটি সংস্কার কমিশন করে পরিবহন সেক্টরের জন্য কাজ করার।

ভেস্তে গেছে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ : অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল পরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরানোর। গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজধানীর কয়েকটি রুটে পরীক্ষামূলক কাউন্টারভিত্তিক এক রঙের বাস সার্ভিস চালুর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে কয়েকটি পরিবহনের শ্রমিকরা নানা অজুহাত দেখিয়ে বাস চালানো বন্ধ করে দেয়। ফলে এই উদ্যোগও ভেস্তে যায়। তবে অতিরিক্ত কমিশনার ট্রাফিক মো. সারওয়ার বলেন, এই উদ্যোগ সফল করা হবে। এ ছাড়া শৃঙ্খলা ফিরবে না।