Image description
একনেক সভা শেষে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বে-টার্মিনালসহ ১৬ প্রকল্প অনুমোদন

চট্টগ্রাম বে-টার্মিনালের অবকাঠামো উন্নয়নসহ ১৬ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এসব বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৩ হাজার ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৬ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিলের ৪ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সন্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সরকারের মধ্যে আলোচনা আছে। ভারত থেকে যে পরিমাণ পানি আসে এতে মহাপরিকল্পনা নিলে কতটুকু সাফল্য আসবে সেটির এখনো সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হয়নি। চীনের আগ্রহ আছে। প্রকল্প নয়, অনেক আগে একটি নকশাও দিয়েছিল চীন। কিন্তু তিস্তা মহাপরিকল্পনা বিষয়ে আমাদের কাছে ব্লু প্রিন্টও আছে। এছাড়া আর কিছুই নেই। ব্রিফিংয়ে এ উপস্থিত ছিলেন, পরিকল্পনা সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুনসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা।

ব্রিফিং এ পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানান, বে-টার্মিনালের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ঋণ হিসেবে দেবে ৯ হাজার ৩৩৩ কোটি এবং সরকারি তহবিল থেকে খরচ হবে ৪ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দর আসলে সমুদ্র বন্দর নয়। এটি নদী বন্দর। কেননা কর্নফুলী নদীর মধ্য দিয়ে জাহাজ এই বন্দরে আসে। কাজেই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সমুদ্র বন্দর দরকার। যদিও মাতারবাড়ীতে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে, তবে সেটি তৈরি হতে অনেক সময় লাগবে। এজন্য বে টার্মিনালটির অবকাঠামো উন্নয়নে মেগা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে একটি প্রকল্প আজ অনুমোদন পেল। আরো একটি প্রকল্প নেওয়া হবে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনার শিপের ( পিপিপি) মাধ্যমে। সব মিলিয়ে এখানে চারটি টার্মিনাল হবে এবং এটি মেগা প্রকল্প হবে। এটির মেয়াদ ধরা আছে ৬ বছর। কিন্তু প্রকল্পটি যাতে দ্রুত শেষ হয় সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমস্যা হলো অবকাঠামো। কেননা কোন প্রকল্প নিলে দীর্ঘ মেয়াদেও কারণে সেটি শেষ না করতেই আর একটি অবকাঠামোর প্রয়োজন দেখা দেয়।

তিনি বলেন, যে কোন বিদেশী বড় ঋণ নিতে হলে ছোট পরামর্শকের। বোঝা ঘাড়ে নিতেই হবে। সেটি না হলে তারা ঋণ দিতে চায় না। আমাদের বাধ্য হয়েই বিদেশী ঋণের প্রকল্পে পরামর্শক নিতেই হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে রাজনৈতিক ভাবে যুক্ত করায় প্রায় ৫০ শতাংশ প্রকৃত ভাতা পাওয়ার যোগ্য নয়। উপকারভোগী বাছাইয়ে প্রভাব বিস্তার করা হয়েছিল। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বর্তমানে বিশ^ব্যাংক অনুদান দিচ্ছে। তবে আগামীতে অনুদান পাওয়া নিয়ে চিন্তা আছে।

একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো- জরুরী ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় মাল্টি-সেক্টর প্রকল্প, চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন (১ম পর্যায়) এবং চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন। এছাড়া গ্রীন রেলওয়ে পরিবহন প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা, তিতাস ও বাখরাবাদ ফিল্ডে ২টি গভীর অনুসন্ধান কূপ খনন, বাংলাদেশ ভূতাত্তিক জরিপ অধিদপ্তরের খনন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণ। আরো আছে- বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণ যন্ত্রপাতি উন্নযন, বাংলাদেশ টেকসই পুনরুদ্ধার, জরুরি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া প্রকল্প (কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিএডিসি), বাংলাদেশ টেকসই পুনরুদ্ধার, জরুরি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া প্রকল্প (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) এবং বাংলাদেশ টেকসই পুনরুদ্ধার, জরুরি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া প্রকল্প (বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড)। এছাড়া অনুমোদন পেয়েছে বাংলাদেশে কৃষি খাত রূপান্তরের টেকসই ও সহনশীল বিনিয়োগে কারিগরি সহায়তা কর্মসূচি, চট্টগ্রাম মহানগরীর পযঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প (১ম পর্যায), সবার জন্য বাসযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর প্রকল্প। চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্প, উন্নত সহনশীলতা, অন্তর্ভুক্তি ও লক্ষ্যভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা জোরদারকরণ প্রকল্প।