
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকটি পয়েন্টে রেলের তেল চুরির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তেল চোরচক্র। অভিযোগ রয়েছে, কোটি কোটি টাকার তেল চুরি হলেও নীরব রেলওয়ে পুলিশ। বরং তাদেরকে সহায়তার অভিযোগ ছড়িয়েছে আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি ও সার্কেল এএসপি’র বিরুদ্ধে। ওসি মো. জসীম উদ্দীন খন্দকারের সঙ্গে চোরদলের নেতা সোহরাবের যোগাযোগের বিষয়টি সামনে এসেছে একটি অভিযানের পর। তাদের মধ্যে কথা হয় হোয়াটসঅ্যাপে। সোহরাব সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য। এমন অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় পরিস্থিতিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি আবদুর রউফ খান আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে এক মতবিনিময় সভা করেন। রেলওয়ে পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সদর উপজেলার কোড্ডা এবং কসবার ইমামবাড়ি রেলস্টেশন এলাকায় ট্রেন থামিয়ে ইঞ্জিন থেকে তেল চুরি করে নেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ রয়েছে, আখাউড়া রেলওয়ে পুলিশ, লোকোসেড ও স্টেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের ম্যানেজ করেই প্রতিদিন এই তেল চুরি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় রেলওয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত ৭ই এপ্রিল রাতে তেল চুরিতে জড়িতদের ধরতে অভিযান চালায় আখাউড়া রেলওয়ে থানা পুলিশ। অভিযানকালে কোড্ডা রেলওয়ে ব্রিজের পশ্চিম পাশে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ৬০৩ নম্বর কন্টেইনার ট্রেনের অনির্ধারিত যাত্রাবিরতিতে ইঞ্জিন থেকে তেল নামানো হচ্ছে দেখতে পায় পুলিশ। পুলিশকে দেখামাত্র চালক ট্রেন চালাতে শুরু করে। পুলিশ সংকেত দিলেও ট্রেন থামেনি। এ সময় একটি প্লাস্টিকের বড় ড্রামে ২০০ লিটার ও একটি ছোট ড্রামে ১০ লিটার তেল উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া তেল চুরিতে ব্যবহৃত একটি বড় পাতিল ও একটি বাঁশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় পরদিন আখাউড়া রেলওয়ে থানার এসআই শোভন কুমার নাগ বাদী হয়ে ওই কন্টেইনার ট্রেনের ২ চালক ও ট্রেনের গার্ডসহ ৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন। আসামিরা হলেন- কন্টেইনার ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার) মো. নাসির উদ্দিন, সহকারী চালক (সহকারী লোকোমাস্টার) আবদুর রাজ্জাক, ট্রেনের গার্ড (পরিচালক) মো. ওমর ফারুক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের কোড্ডা গ্রামের মৃত জিলু মিয়ার ছেলে পারভেজ ওরফে জাফর (৩১), ইসমাইল কাজীর ছেলে কাজী রতন (৪৫), মৃত সেলিম মিয়ার দুই ছেলে মুরাদ মিয়া (২৮) ও ইসহাক মিয়া (৩০) এবং মৃত হেফজু মিয়ার ছেলে শামিম (৪৭)। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলার আসামি করা হয়নি সোহরাবকে।
অভিযোগ উঠেছে, অভিযানের রাতে এবং পরদিন সকালে রেলওয়ে থানার ওসি মো. জসীম উদ্দীন খন্দকার এবং তেল চোরচক্রের প্রধান ইউপি সদস্য সোহরাবের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কয়েকবার কথা হয়। তাদের মধ্যে কথাবার্তা হওয়ার পরই মামলা থেকে বাদ পড়ে তেল চোর সিন্ডিকেটের প্রধান সোহরাব মেম্বারের নাম। আর এ জন্য ওসি জসীম উদ্দীন খন্দকার এবং আখাউড়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. এরশাদুর রহমান সোহরাবের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ নেন বলে অভিযোগ-আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া নির্বিঘ্নে তেল চুরি করতে মাসে রেলওয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তাদের লাখ দেড়েক টাকা দেয়া হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। সোহরাব ছাড়াও তেল চুরিতে নাম রয়েছে কোড্ডা গ্রামের মৃত শাহ আলমের ছেলে বিপ্লব, ইব্রাহিম ভুইয়ার ছেলে জামির ভুইয়া, ইসমাইল কাজীর ছেলে কাজী রতনের। পূর্বাঞ্চল রেলপথে যাত্রীবাহী ও মালবাহী প্রায় ২৫টি ট্রেন চলাচল করে। একটি ট্রেনের ইঞ্জিনে ৩ হাজার লিটার পর্যন্ত তেল নেয়া যায়। ট্রেনচালক ও গার্ডের সহায়তায় নির্ধারিত পয়েন্টে ট্রেন থামিয়ে ইঞ্জিন থেকে তেল নামিয়ে নেয়া হয়।
এ বিষয়ে আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি মো. জসীম উদ্দীন খন্দকার বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। ভালো কাজ করতে গিয়ে পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। আমার চাকরি জীবনে কোনো পানিশমেন্ট নেই। তেল চুরির সিন্ডিকেট থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ সত্য নয়। তেল চুরি হবে এমন সংবাদ পাওয়ামাত্রই ওইদিন দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং রাতে আমার টিম নিয়ে তেল উদ্ধার করেছি। আসামিরা আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে তেল রেখে পালিয়ে যায়। ফলে কাউকে আটক করা যায়নি। আখাউড়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. এরশাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তেলচুরির সিন্ডিকেট থেকে আমি কোনো টাকা নেয় না। আমার নামে যদি কেউ নিয়ে থাকে বিষয়টি আমার জানা নেই।