
বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি অন্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। তবে সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে অবৈধ অভিবাসীদের আটক করে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এতে রেমিট্যান্সের ওপর যেমন আঘাত আসছে তেমনি আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব অবৈধ অভিবাসীদের কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের শ্রমবাজার নষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। এরপরই রয়েছে মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েত, কাতার, লিবিয়া, লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের সিংহভাগই আসে এসব দেশ থেকে। এই দেশগুলোতে যেমন বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে শ্রমিক রপ্তানি করা হয় তেমনি অবৈধভাবে সাগর পথে এসব দেশে পাড়ি জমান অসংখ্য বাংলাদেশি। সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, লিবিয়াসহ অনেক দেশই অবৈধ অভিবাসীদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এরই মাঝে কয়েকটি দেশ থেকে দফায় দফায় এসব অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। এটি রেমিট্যান্সের জন্য একটি বড় ধাক্কা। পাশাপাশি এসব দেশে নষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমবাজার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে, নৌপথে, স্টুডেন্ট ভিসা কিংবা ট্যুরিস্ট ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গিয়ে অনেকে কাজ শুরু করেন। আবার অনেকেই চুক্তিভিত্তিক কাজে গিয়ে চুক্তি শেষ হওয়ার পর বিদেশে থেকে যায়। ফলে তখন আর তাদের কাজ করার বৈধতা থাকে না। আবার একজন শ্রমিক বৈধভাবে বিদেশে গিয়ে যেখানে কাজ করার কথা সেখানে কাজ না করে অধিক উপার্জনের লোভে অন্য এলাকায় গিয়ে কাজ করে। যদিও তার কাছে বৈধ ভিসা রয়েছে, তবুও সে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হয়। এসব কারণে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। অবৈধভাবে বিদেশ যাত্রা পথ বন্ধ করা না গেলে বৈধভাবে শ্রমিক রপ্তানির পরিমাণ কমে যাবে। শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সম্মান ও বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে। ফলে বিদেশে শ্রমবাজার ঠিক রাখতে হলে এসব কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে।
গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা যেসব কর্মী বিদেশে পাঠাই, তাদের ৮০ শতাংশ সমস্যা আমরা ঢাকা থেকে তৈরি করে পাঠাই। ২০ শতাংশ সমস্যা তৈরি হয় যাওয়ার পরে। কিন্তু সেই ১০০ শতাংশ সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব কিন্তু আমার মিশনগুলোর ওপর এসে পড়ে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) এর সাবেক সভাপতি গোলাম মুস্তাফা বলেন, অবৈধ অভিবাসীদের কারণে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সম্মান ও বিশ্বাসযোগ্যতা হুমকির মুখে পড়ছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যারা শ্রমিক ভিসায় এসব দেশগুলো যেতে চায় তাদের মধ্যে এই সচেতনতা বাড়াতে হবে। পাশপাশি বিদেশে দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে শ্রমিকদের সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরত আনার পর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করা উচিত। সর্বোপরি অবৈধভাবে বিদেশ গমন রোধ করা গেলে অবৈধ অভিবাসী সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।