
কক্সবাজারের আলোচিত উপজেলা উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে পাহাড় ধসজনিত ঝুঁকিতে আছেন ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার। এদের মধ্যে অতিঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ৩২২ পরিবার। অতিঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি)। তারই অংশ হিসেবে ১৫০ পরিবারকে সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) 'সওয়াব'। ইতোমধ্যে ওই রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য শেড নির্মাণ কাজ শেষ করে এনেছে তারা।
তবে পাহাড় ধসজনিত অতি ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে একটি চক্র। ওই চক্রটি প্রচার করছে, নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য ওই সব শেড তৈরি করা হচ্ছে।
উখিয়ার ১৪ নম্বর ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ক্যাম্প ইনচার্জ) মো. ফারুক আল মাসুদ আমার দেশকে জানান, এই ক্যাম্পের ৫টি ব্লকে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৩২২ পরিবারকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ২০০ পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এই সব ব্লকে গত বছর পাহাড় ধসে ৭ জনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে একজনের মরদেহই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, বর্ষা মৌসুম আসার আগেই তাদের সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। সাওয়াব নামের একটি এনজিওকে শেড নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা নির্ধারিত স্থানে শেড নির্মাণের কাজ শেষ করে এনেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, উখিয়া উপজেলার থাইংখালী এলাকার ১৪ নম্বর ক্যাম্পের ই-ব্লকের খেলার মাঠ এলাকায় ১৪টি শেড নির্মাণের কাজ চলছে। শেডের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এসব শেডের প্রতিটি ঘরে ৫ জনের একেকটি পরিবার বসবাস করবে। এসব শেডে অতিঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোর মধ্যে ১৫০ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় অধিবাসী ও রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, যেখানে শেড নির্মাণ চলছে সেই এলাকাটি খেলার মাঠ নামেই পরিচিত। এখানে নিয়মিত খেলাধুলা হতো। এখানে কোনো গাছ কিংবা অন্যকোনো স্থাপনা ছিল না। খেলার মাঠের সেই সমতল ভূমিতে শেড নির্মাণ করা হচ্ছে। পাশের খালি জমিতে মাটি ভরাট করে খেলার মাঠ তৈরি করা হচ্ছে।
পাশের রোহিঙ্গা বসতির শেড মাঝির বাবা আলী মিয়া জানান, এটি ছিল খেলার মাঠ। এখানে কোনো ধরনের গাছ ছিল না। সেই খালি মাঠে নতুন শেড নির্মাণ করা হচ্ছে। পাশের এলাকার সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী গুরা মিয়াও একই কথা জানিয়েছেন। খেলার মাঠে শেড তৈরি করা হচ্ছে। পাশের চাষের জমিতে মাঠ তৈরির কাজ চলছে।
শেড নির্মাণে নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থা 'সওয়াব' এর প্রকল্প সমন্বয়ক মো. আতা উল্লাহ জানান, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সরিয়ে আনতে বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাছে সহযোগিতা চেয়েছিল। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে 'সওয়াব' বিদেশি সাহায্যকারীদের সহযোগিতায় শেড নির্মাণ কাজে এগিয়ে এসেছে।
তিনি আমার দেশকে বলেন, আমরা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার ও ক্যাম্প ইনচার্জের অনুমতি পেয়ে তাদের দেখানো জমিতে শেড নির্মাণের কাজ করছি। 'আমানাহ ভিলেজ' নাম দিয়ে ওই শেড তৈরি করা হচ্ছে।
মো. আতা উল্লাহ জানান, নির্মাণাধীন ১৪টি শেডে অতিঝুঁকিপূর্ণ ১৫০টি পরিবারকে সরিয়ে আনা হবে। বেসরকারি সংস্থা ‘সওয়াব’ ওখানে কাজ করতে এসে দুইজন স্থানীয় দখলদারকে পেয়েছিল। তাদেরও ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তাদের দাবি, তারপরও স্থানীয় একটি চক্র নতুনভাবে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই অপপ্রচারে একজন জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন।
সূত্র মতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৪ এর ব্লক-ই’তে রোহিঙ্গাদের জন্য ১৫০টি শেল্টার নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরো থেকে গত ২৮ জানুয়ারি এই অনুমোদন হয়েছে। ইতোপূর্বে ২০২৪ সালের ২৮ নভেম্বর শেল্টার সেক্টর কর্তৃক শেল্টার প্রকল্পটি জেআরপি (জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান) থেকেও অনুমোদন গ্রহণ করা হয়। পরে তা চলতি বছরের ০৪ মার্চ ক্যাম্প ইনচার্জের (সিআইসি) অনুমোদন নিয়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়।
বেসরকারি সংস্থা ‘সওয়াব’ এর জেনারেল ম্যানেজার লোকমান হোসাইন তালুকদারও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর চৌধুরী দাবি করছেন, সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে এসব শেড নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি স্থানীয় অধিবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
উখিয়ার ১৪ নম্বর ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ক্যাম্প ইনচার্জ) মো. ফারুক আল মাসুদ জানান, পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই নতুন শেডে পুনর্বাসন করা হবে। তিনি নিশ্চিত করেন, কোনো নতুন রোহিঙ্গাকে নতুন শেডে পুনর্বাসন করা হবে না।