
বিগত শাসনব্যবস্থা কেবল ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট’ (মানিয়ে নেওয়া) করতে বলেছে এবং ‘ইয়েস’ বলতে শিখিয়েছে—এমন মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান গভর্ন্যান্স সিস্টেম (শাসনব্যবস্থা) আমাদের অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে বলে। বিপরীতে আমাদের এমন একটা গভর্ন্যান্স লাগবে যেখানে “ইয়েস”ও বলা যাবে, আবার “নো”ও বলা যাবে। ...বিগত ব্যবস্থা আমাদের কেবল অ্যাডজাস্টমেন্টই করতে বলেছে এবং ইয়েস বলতে শিখিয়েছে।’
আজ শনিবার দুপুরে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ক্ষমতায়ন: নেতৃত্ব, ঐক্য এবং প্রবৃদ্ধির পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তব্য দেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত ওই সেমিনারের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।
সেমিনারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা এখন এমন একটা অবস্থায় আছি, যেখানে ইয়ুথরা একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠছে এবং এটাই হওয়ার কথা ছিল। আমরা যা বলি, তার সঙ্গে তরুণদের বক্তব্যের একটা গ্যাপ (দূরত্ব) রয়েছে, এটাকে আমাদের কমাতে হবে।’
বাংলাদেশের তরুণেরা সব মোহের ঊর্ধ্বে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে এবং ৫ আগস্ট এনেছে বলেও উল্লেখ করেন এই উপদেষ্টা। এ প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া তিনজন উপদেষ্টার (এখন দুজন) বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বলতে কোনো দ্বিধা নেই, যখন আমরা ক্যাবিনেট মিটিংয়ে বসি, তখন তারা যে মতামত দেয়, ওদের মতামতটা খুব শার্প (তীক্ষ্ণ) হয়, খুব প্রিসাইজ (যথাযথ) হয় এবং টু দ্য পয়েন্ট হয়, কারণ ওরা আসলে জানে ওরা কী চাচ্ছে।’
বাংলাদেশে সরকারব্যবস্থার সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক দেখতে পাওয়া যায় না বলেও সেমিনারে মন্তব্য করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘আমি যেটা চাইব, সেটাই আমার শাসকেরা করবেন—এটাই আমি গভর্ন্যান্স (শাসনব্যবস্থা) মনে করি এবং আমি মনে করি, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের তরুণেরা সেই রকম একটা যাত্রায় আছে।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের গভর্ন্যান্স বলতে আসলে আমরা কী বুঝি, আমরা কী আমলাতন্ত্র বুঝি, নাকি জুডিশিয়ারি (বিচার বিভাগ) বুঝি, নাকি বৃহত্তর পরিসরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বুঝি? গভর্ন্যান্স কি মানুষকে বাদ দিয়ে চলতে পারে, নাকি একজন সচিব যা স্বাক্ষর করবেন, সেটা গভর্ন্যান্স? নাকি মানুষ যা বলবে, সেটাও গভর্ন্যান্সের অংশ? আমি আসলে এসব বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশের গভর্ন্যান্সের কোনো মিল খুঁজে পাই না।’
মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন হয়েছে
আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, চব্বিশের আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশে শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়নি, গভীর মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনও হয়েছে। পুরোনো সমস্যার মধ্যে ফিরে যাওয়া যাবে না—এ মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন এসেছে। এখন নিজের এবং নিজেদের ওপর আস্থা রাখলেই সামনের পথগুলো খুঁজে বের করা যাবে।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, পরিবর্তনের সুফল নিতে হলে প্রান্তিক মানুষের ক্ষমতায়ন এবং কৃষির উন্নতির মাধ্যমে বিদ্যমান অর্থনৈতিক কাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে। পাশাপাশি এখানে ‘ইফেকটিভ গভর্ন্যান্স’ (কার্যকর শাসনব্যবস্থা) ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং আরও বেশি জন-অংশগ্রহণমূলক করতে হবে।
সেমিনারে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, চব্বিশের যে আকাঙ্ক্ষা, সে আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গড়তে হলে পূর্ববর্তী ইতিহাস থেকে শিখতে হবে। বুঝতে হবে কেন ’৫২, ’৭১, ’৯০-এর আকাঙ্ক্ষাগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি।
তরুণদের আকাঙ্ক্ষাকে বুঝতে হবে উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, তরুণদের সেই আকাঙ্ক্ষায় আছে নতুন বাংলাদেশ গড়া এবং সে আকাঙ্ক্ষার কথা দুঃখজনকভাবে রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে না। ফলে একটা দূরত্ব থেকেই যাচ্ছে।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সহ-উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুর রব খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক অনিন্দিতা ঘোষাল, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সালেহ শাহরিয়ার। সেমিনারে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির ‘নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড ফিজিশিস্ট’ হারুনুজ্জামান।