Image description

বিশ্বের শতাধিক দেশের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশি পণ্যে এ শুল্ক বসেছে ৩৭ শতাংশ। যদিও আপাতত এটা তিন মাসের জন্য স্থগিত রয়েছে। এ শুল্ক সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ জোর দিচ্ছে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর ওপর।

দেশের খাদ্যশস্য আমদানিকারক ও কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবিলায় একটি বড় উদ্যোগ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র থেকে খাদ্যশস্য আমদানি বাড়ানো। সরকারের নীতি সহায়তা পেলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, ভুট্টা, সয়াবিন, মসুর, মটর ডাল, বার্লি, তেলজাতীয় ফল, শস্যবীজ এবং ফল আমদানি কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বছরে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে, অথচ আমদানি হচ্ছে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ তিন গুণের বেশি।

সরকার চাইলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বলে সামান্য কিছু ভর্তুকি বা কোনো নীতি সহায়তা, যেভাবে কিছু খরচ কমবে সেটা করে দিলেই সেটা সম্ভব। তখন বড় আমদানি হলে বাণিজ্য ঘাটতি অনেক কমবে।- বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী

আমদানিকারকরা বলছেন, প্রতি বছর বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খাদ্যশস্য আমদানি করছে। গত বছর (২০২৪ সাল) প্রায় ৭২ লাখ ৭৫ হাজার টন গম আমদানি করা হয়েছে। সয়াবিন আমদানি হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টন। এছাড়া বছরে প্রায় ৫ লাখ টন ভুট্টা, ৫ লাখ টন ডাল, ১ থেকে দেড় লাখ টন বার্লিসহ আরও প্রায় ৫ লাখ টন অন্য খাদ্যশস্য আমদানি হচ্ছে বিশ্ববাজার থেকে।

 

এমন বড় আমদানির তথ্য দিচ্ছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাও (এফএও)। এ সংস্থার হিসাবে বিশ্ববাজার থেকে প্রায় সোয়া কোটি টন খাদ্যপণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এ খাদ্য আমদানি ব্যয়ের সবচেয়ে বড় অংশ দখল করে আছে গম, ভোজ্যতেল ও গুঁড়া দুধ। বাংলাদেশ বিশ্বের খাদ্যশস্য আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে। আর যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে প্রথম। এ অবস্থায় সরকার চাইলে খাদ্যশস্যের সবচেয়ে বড় উৎস হয়ে উঠতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

এ বিষয়ে কথা হয় দেশের শীর্ষস্থানীয় খাদ্যশস্য আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেসরকারি ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর ৬০ থেকে ৮০ হাজার টন গম আমদানি করছে কানাডা, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র পাশাপাশি, দু’দেশের গমের মানও কাছাকাছি। শুধু পরিবহন খরচ, যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর কিছুটা ভেতরে হওয়ায় আমরা কানাডা থেকে গম নিচ্ছি। এর পরিমাণ প্রায় বছরে ২০ থেকে ৩০ লাখ টন।’

সরকার যদি নীতিগত সুবিধা দেয় আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি পূরণ সম্ভব। সেজন্য ব্যবসায়ীদের পণ্যের খরচ সামজস্যপূর্ণ করতে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে দুই দেশের। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের প্রিমিয়াম বেশি। জাহাজ ভাড়া বেশি হয়। সেগুলো কমানোর কার্যক্রম নিতে হবে।- টি কে গ্রুপের ফাইন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন ডিরেক্টর মোহাম্মদ শফিউল আতহার তসলিম

তিনি বলেন, ‘সরকার চাইলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বলে সামান্য কিছু ভর্তুকি বা কোনো নীতি সহায়তা, যেভাবে কিছু খরচ কমবে সেটা করে দিলেই সেটা সম্ভব। তখন বড় আমদানি হলে বাণিজ্য ঘাটতি অনেক কমবে।’

 

আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘শুধু গম নয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর সয়াবিন তেল, তেলবীজ, মসুর ডাল, মটর ডাল, বার্লিও আমদানি করা যেতে পারে। কিছু পণ্য আমি নিজেই আমদানি করেছি। এখন বড় পরিসরে আমদানির জন্য শুধু নীতি সহায়তা ও দুই দেশের সরকারের সদিচ্ছা দরকার।’

আরেক বৃহৎ খাদ্যশস্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টি কে গ্রুপের ফাইন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন ডিরেক্টর মোহাম্মদ শফিউল আতহার তসলিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকার যদি নীতিগত সুবিধা দেয় আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি পূরণ সম্ভব। সেজন্য ব্যবসায়ীদের পণ্যের খরচ সামজস্যপূর্ণ করতে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে দু-দেশের। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের প্রিমিয়াম বেশি। জাহাজ ভাড়া বেশি হয়। সেগুলো কমানোর কার্যক্রম নিতে হবে। সেটা হলে হয়তো সরকারের কিছুটা খরচ বাড়বে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক থেকে মুক্তি মিলবে।’

যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পোশাক সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে, এটা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। এ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে হবে আমদানির ক্ষেত্রে আমরা তাদের বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। এর কোনো বিকল্প নেই।- কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম

এদিকে শুধু বেসরকারি আমদানি নয়, সরকারও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে গম ও সামাজিক সুরক্ষায় পণ্য আমদানি করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে, সেক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে। কারণ খাদ্য অধিদপ্তরের বিদেশ থেকে কেনা গম, টিসিবির সয়াবিন তেল ও মসুর ডালের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম বড় বাজার।

 

এসব বিষয়ে টিসিবির যুগ্ম পরিচালক ও মুখপাত্র হুমায়ুন কবীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চাইলে যেসব পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি হয় সেসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে। আবার সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে ওই দেশ থেকে পণ্য আনা যেতে পারে। তবে এটা মন্ত্রণালয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত।’

এসব বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পোশাক সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে, এটা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। এ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে হবে আমদানির ক্ষেত্রে আমরা তাদের বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। এর কোনো বিকল্প নেই।’

তিনি বলেন, ‘যেসব পণ্য আমরা অন্য দেশ থেকে আনছি, সম্ভব হলে অবশ্যই সেটা যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে নেবো। সেটা সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের পরিপালন করা দরকার। সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সঠিক কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, বাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতি পূরণে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে ‘