
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রেসিডেন্সির প্রথম মেয়াদে চীনের ওপর শুল্ক বসিয়েছিলেন। সে সময় ভিয়েতনামের ব্যবসায়ী হাও লে একটি সুযোগ দেখেছিলেন। কারণ, তাঁর কোম্পানি চীনা রপ্তানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিল সে সময়। এবার যখন পশ্চিমা দেশগুলো ক্রমশ চীনা রপ্তানিতে বাধা দিচ্ছে, তখন হাও লের কোম্পানির মতো শত শত কোম্পানি সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে।
লের কোম্পানির নাম এসএইচডিসি ইলেকট্রনিকস। তারা প্রতি মাসে ২০ লাখ ডলারের যন্ত্রাংশ আমেরিকায় রপ্তানি করে। এর মধ্যে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের সরঞ্জাম উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ট্রাম্প ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ শুল্ক বসালে সেই আয়ের পথ বন্ধ হতে পারে। এই পরিকল্পনা জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। লে বলছেন, এটি তাঁর ব্যবসার জন্য খুবই খারাপ খবর। এটা তাঁর ব্যবসার জন্য ‘বিপর্যয়’ ডেকে আনবে।
তাঁর কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও বিক্রি করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চীনা পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারি না। এটি কেবল আমাদের সমস্যা নয়। অনেক দেশীয় কোম্পানি অভ্যন্তরীণ বাজারে হিমশিম খাচ্ছে।’
২০১৬ সালে ট্রাম্প শুল্ক বসানোর পর সস্তা চীনা পণ্যে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বাজার ভরে যায়। এই পণ্যগুলো আসলে আমেরিকার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। সে সময় অনেক চীনা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অনেকগুলো দেশের স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে এই পরিস্থিতি অন্য ব্যবসার জন্য নতুন সুযোগও তৈরি করে। অনেক কোম্পানি বিশ্বজুড়ে সরবরাহ চেইনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। বহু কোম্পানি চীনের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে চাইছিল। কিন্তু এখন আবার ট্রাম্প নিজেই সেই দরজাগুলো বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছেন। তিনি এই সুযোগগুলোকে একটি অগ্রহণযোগ্য ফাঁক হিসেবে দেখছেন।
এটি ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল এক ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে হিস্যা দাবি করছে। কিন্তু তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মধ্যে আটকে পড়েছে। চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। আর আমেরিকা তাদের প্রধান রপ্তানি বাজার। দেশগুলোর আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এমন চুক্তি করতে চাইতে পারে তাদের সঙ্গে, যার ফলে চীন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গত সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়া সফর করেছেন। এই সফর আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এর গুরুত্ব বেড়েছে। তিন দেশই সি–কে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। তবে ট্রাম্প এটিকে দেখছেন আমেরিকাকে ‘বিপদে ফেলার’ ষড়যন্ত্র হিসেবে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে এসেছে, হোয়াইট হাউস ছোট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে। ওয়াশিংটন এই দেশগুলোকে বেইজিংয়ের সঙ্গে লেনদেন সীমিত করতে চাপ দেবে বলে জানা গেছে। কিন্তু চীন ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্যের পরিমাণ এতই বেশি যে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হতে পারে।
সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে চীন রপ্তানি থেকে রেকর্ড সাড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর ১৬ শতাংশই এসেছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় দেশগুলো থেকে এবং এই অঞ্চলই চীনের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। বেইজিং এই অঞ্চলে অনেক প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। ভিয়েতনামে রেললাইন, কম্বোডিয়ায় বাঁধ এবং মালয়েশিয়ায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেছে চীন। এগুলো দেশটির ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের অংশ। এর উদ্দেশ্য, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করা।
মালয়েশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী টেংকু জাফরুল আজিজ বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা চীন ও আমেরিকার মধ্যে কাউকে বেছে নিতে পারি না। যদি কোনো বিষয় আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে আমরা নিজেদের রক্ষা করব।’
ট্রাম্প নতুন করে বিশাল শুল্কের ঘোষণা দেওয়ার পর দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলো নড়েচড়ে বসেছে। তারা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে আলোচনা শুরু করেছে। ভিয়েতনামের নেতা তো লামের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি এটিকে ‘খুব ফলপ্রসূ’ আলাপ বলেছেন। তো লাম মার্কিন পণ্যের ওপর থেকে সব শুল্ক তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
আমেরিকার বাজার ভিয়েতনামের জন্য জরুরি। ভিয়েতনাম ইলেকট্রনিকস শিল্পে ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। স্যামসাং, ইন্টেল ও ফক্সকনের মতো কোম্পানি দেশটিতে কারখানা স্থাপন করেছে। তাইওয়ানভিত্তিক কোম্পানি ফক্সকন টেক জায়ান্ট অ্যাপলের হয়ে আইফোন তৈরি করে।
এদিকে, থাই কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনে গেছেন। তাঁদের পরিকল্পনা হলো, আমেরিকা থেকে আমদানি ও বিনিয়োগ বাড়ানো। আমেরিকা তাদের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। তাই তারা ৩৬ শতাংশ শুল্ক এড়াতে চাচ্ছে। ট্রাম্প যে কোনো সময় এই শুল্ক আবার চালু করতে পারেন বলে ভয় তাদের। থাই প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বলেছেন, ‘আমরা আমেরিকাকে বলব, থাইল্যান্ড শুধু রপ্তানি করে না, আমরা তাদের বিশ্বস্ত মিত্র ও অর্থনৈতিক অংশীদার। আমেরিকা আমাদের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে ভরসা রাখতে পারে।’
ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করলেও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান পাল্টা ব্যবস্থা নেবে না। তারা ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা কিছু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বরং, তারা আমেরিকার কাছে নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরবে। টেংকু জাফরুল আজিজ বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা আমেরিকার উদ্বেগ বুঝতে পারছি। আমাদের দেখাতে হবে, আসিয়ান এবং বিশেষ করে মালয়েশিয়া আমেরিকার জন্য একটি সংযোগ সেতু বা মধ্যস্থতাকারী হতে পারে।’
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। তারা এই ভূমিকা ভালোভাবেই পালন করেছে। চীন ও আমেরিকা—দুই পক্ষের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ থেকে তারা লাভবান হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের স্থগিত শুল্ক সেই ধারা ব্যাহত করতে পারে।
মালয়েশিয়ার কথাই ভাবা যাক। গত কয়েক বছরে আমেরিকা ও অন্য দেশ থেকে চিপ প্রস্তুতকারকেরা সেখানে বিনিয়োগ করেছে। ওয়াশিংটন চীনের কাছে উন্নত প্রযুক্তি বিক্রি বন্ধ করেছে বলেই মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগের এই বাড়বাড়ন্ত। গত বছর চীন মালয়েশিয়া থেকে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের চিপ আমদানি করেছে। এই চিপগুলো চীনে ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরিতে কাজে লাগে। যেমন: আইফোন। এসব পণ্য সাধারণত আমেরিকায় রপ্তানি হয়।
মালয়েশিয়ার ওপর ট্রাম্প ২৪ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে মার্কিন বাজারে কয়েক শ কোটি ডলারের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে এখানেই শেষ নয়: জাফরুল আজিজ বলেন, ‘যদি এমন পরিস্থিতি থেকেই যায়, তাহলে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ নিয়ে নতুন করে ভাববে। এর প্রভাব কেবল মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে।’
ইন্দোনেশিয়ার ওপরও ৩২ শতাংশ শুল্ক ধার্য করতে পারেন ট্রাম্প। ইন্দোনেশিয়ায় প্রচুর নিকেল আছে। এ কারণে দেশটি বৈদ্যুতিক গাড়ির সরবরাহ চেইনে বড় ভূমিকা নিতে চায়।
কম্বোডিয়াকে সবচেয়ে বেশি শুল্কের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাদের ওপর ৪৯ শতাংশ শুল্ক বসতে পারে। কম্বোডিয়াকে চীনের মিত্র ভাবা হয়। কম্বোডিয়া এই অঞ্চলের অন্যতম দরিদ্র দেশ। তবে দেশটি ট্রানজিট হাব হিসেবে বেশ উন্নতি করেছে। যেসব চীনা কোম্পানি আমেরিকার শুল্ক এড়াতে চায়, তারা ফ্রেন্ডশোরিংয়ের অংশ হিসেবে কম্বোডিয়াকে ব্যবহার করছে। কম্বোডিয়ায় পোশাক কারখানার ৯০ শতাংশই চীনাদের মালিকানাধীন বা তারাই চালায়। এই কারখানাগুলো মূলত আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি করে।
মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের অর্থনীতিবিদ ডরিস লিউ বলেছেন, ট্রাম্প শুল্কগুলো স্থগিত রেখেছেন। কিন্তু ‘যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে! তিনি বলেন, এটি এই অঞ্চলের জন্য একটি সতর্কবার্তা। শুধু আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমালেই হবে না। কোনো একক বাণিজ্য অংশীদারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতাও কমাতে হবে। এর জন্য ভারসাম্য আনা দরকার।
এই অনিশ্চিত সময়ে সি চিনপিং এক দৃঢ় বার্তা দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, ‘আসুন আমরা হাত মেলাই।’ আমেরিকার ‘ধমক’ প্রতিরোধ করি। তবে এটা সহজ হবে না। কারণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বেইজিংয়েরও বাণিজ্য বিরোধ আছে।
ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ী ইসমা সাবিত্রী চিন্তিত। চীনের ওপর ট্রাম্প ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। তিনি বলেন, এর মানে হলো—চীনা পণ্য এখন অন্য বাজারে যাবে। ইসমা মনে করেন, এতে চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা বাড়বে। কারণ, তারাও আর আমেরিকায় পণ্য পাঠাতে পারছে না।
হেলোপপি নামের একটি পোশাক ব্র্যান্ডের মালিক ইসমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো ছোট ব্যবসাগুলো খুব চাপে পড়েছে। অত্যন্ত সস্তা চীনা পণ্যের কারণে আমরা টিকে থাকতে লড়াই করছি।’ হেলোপপির একটি জনপ্রিয় পায়জামার দাম ৭ দশমিক ১০ ডলার। ইন্দোনেশীয় রুপিতে এটা ১ লাখ ১৯ হাজার। ইসমা জানান, তিনি চীন থেকে আসা একই ডিজাইনের পায়জামা প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হতে দেখেছেন।
সিঙ্গাপুরের আইএসইএএস ইউসুফ-ইসহাক ইনস্টিটিউটের গবেষক নগুয়েন খ্যাক জিয়াং বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চীনের খুব কাছে। এখানকার বাণিজ্য ব্যবস্থা উন্মুক্ত। বাজারও দ্রুত বাড়ছে। তাই এটি চীনা পণ্যের ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে অনেক দেশ চীনের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না। এতে তাদের দুর্বলতা আরও বাড়ে।
চীনা পণ্যের দাম কম, তাই ক্রেতারা খুশি। পোশাক, জুতা, ফোন—সবকিছুর দাম কম। কিন্তু হাজার হাজার স্থানীয় ব্যবসা এই কম দামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে না। থাইল্যান্ডের একটি গবেষণা সংস্থা বলছে, গত দুই বছরে প্রতি মাসে দেশটিতে শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়েছে।
একই সময়ে ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় আড়াই লাখ টেক্সটাইল শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। সেখানকার বাণিজ্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, প্রায় ৬০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। স্রিটেক্স ছিল এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় টেক্সটাইল কারখানা। সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
মুজিয়াতি নামে একজন স্রিটেক্সে ৩০ বছর কাজ করেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি চাকরি হারান। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা যখন খবরে দেখছি, আমদানি করা পণ্যে বাজার ভরে গেছে। এটি আমাদের দেশের বাজার নষ্ট করছে।’ ৫০ বছর বয়সী মুজিয়াতি এখনো কাজ খুঁজছেন। তিনি বলেন, ‘হয়তো আমাদের ভাগ্যই খারাপ ছিল। আমরা কার কাছে অভিযোগ করব? কেউ নেই।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলো সুরক্ষানীতি নিয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চীনা পণ্যের প্রভাব থেকে বাঁচতে সাহায্য চাওয়ায় সরকারগুলো পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত বছর ইন্দোনেশিয়া কিছু চীনা পণ্যে ২০০ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা ভেবেছিল। তারা একটি জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট তেমু বন্ধ করে দেয়। এটি চীনা ব্যবসায়ীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল।
থাইল্যান্ড আমদানি পণ্যে নজরদারি বাড়িয়েছে। দেড় হাজার থাই বাথের (প্রায় ৪৫ ডলার) কম দামের পণ্যে তারা অতিরিক্ত কর বসিয়েছে। এ বছর ভিয়েতনাম চীনা ইস্পাত পণ্যের ওপর দুই বার শুল্ক বসিয়েছে। ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার পর খবর এসেছে, ভিয়েতনাম কড়াকড়ি করতে চলেছে। তাদের দেশ হয়ে আমেরিকায় পাঠানো চীনা পণ্যের ওপর এই কড়াকড়ি হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যে ভয় পাচ্ছে তা প্রশমিত করা সি’র সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। দ্য ইকোনমিস্টের সাবেক বেইজিং ব্যুরো চিফ ডেভিড রেনি বিবিসিকে বলেন, ‘চীনের একটা চিন্তা আছে। আমেরিকার জন্য তৈরি পণ্য অন্য দেশে পাঠালে সেই বাণিজ্য অংশীদাররা বিরক্ত হবে। তারা হয়তো চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চীনা পণ্যের ঢল যদি এই বাজারগুলোকে ভাসিয়ে দেয়, চাকরির ক্ষতি করে—তবে তা চীনের জন্য বড় সমস্যা হবে। এটা তাদের কূটনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক মাথাব্যথার কারণ হবে।’
চীনের সঙ্গে এই অঞ্চলের সম্পর্ক সব সময় সহজ ছিল না। লাওস, কম্বোডিয়া ও যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমার ছাড়া অন্য দেশগুলো চীনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সতর্ক। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বিরোধ ফিলিপাইনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করেছে। ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মতো দেশেরও একই সমস্যা আছে। তবে এত দিন বাণিজ্য এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সেই অবস্থা বদলে যেতে পারে। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক চং জা-ইয়ান বলেন, ‘আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে ভাবতে হতো চীনকে অসন্তুষ্ট করবে কিনা। এখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।’
চীনের ক্ষতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য লাভও বয়ে আনতে পারে। ভিয়েতনামের হাও লে আবারও সুযোগ দেখছেন। তিনি বলেন, আমেরিকান ক্রেতারা এখন চীনের বাইরে নতুন সরবরাহকারী খুঁজছে। খোঁজখবর অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে সরবরাহকারী বদলাতে মাস লাগত। এখন কয়েক দিনেই সিদ্ধান্ত হয়।’
মালয়েশিয়ায় বিশাল রাবার বাগান আছে। তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেডিকেল রাবার গ্লাভস উৎপাদনকারী। রাবার গ্লাভসের প্রায় অর্ধেক বাজার তাদের দখলে। তারা তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের কাছ থেকে আরও বড় বাজার দখল করতে প্রস্তুত। মালয়েশিয়ান রাবার গ্লাভস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উন কিম হং বলেন, এই অঞ্চলের পণ্যে ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক বসেছে। এটা বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের মতোই। এটা অবশ্যই খারাপ খবর।
তবে উন কিম হাং বলেন, ‘ট্রাম্পের স্থগিত শুল্ক ফের চালু হলেও মালয়েশিয়ার লাভ হবে। গ্রাহকেরা মালয়েশিয়ার গ্লাভসের জন্য অতিরিক্ত ২৪ শতাংশ শুল্ক দিতে রাজি হবে। কারণ চীনা গ্লাভসের জন্য ১৪৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ঠিক আনন্দে নাচছি না। কিন্তু এটি আমাদের উৎপাদকদের জন্য ভালো হতে পারে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার উৎপাদকরাও এতে লাভবান হতে পারে।’