
অন্তর্বর্তী সরকারের সাত উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার দুজন বিশেষ সহকারীর উপস্থিতিতে ঢাকঢোল পিটিয়ে গত ২৬ মার্চ উদ্বোধন করা হয় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড - সন্দ্বীপ রুটের ফেরি সার্ভিস । তবে উদ্বোধনের মাস ঘুরতে না ঘুরতেই এই রুটে ফেরি বন্ধ হওয়ার পথে । নদীপথে চলাচলের উপযোগী ফেরি সমুদ্রে চালু করলেও দুর্ঘটনার শঙ্কায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন ( বিআইডব্লিউটিসি ) ।
বিআইডব্লিউটিসির চট্টগ্রাম জোনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার গোপাল চন্দ্র মজুমদার বলেন , ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাগর উত্তাল থাকে । এ সময় সাগর পাড়ি দিয়ে এই ফেরি চলাচল সম্ভব নয় । সীতাকুণ্ড- সন্দ্বীপ রুটে যে ফেরি চলাচল করছে , তা নদীপথের জন্য তৈরি করা । সাগর পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতা নেই । এখন এই ফেরি চালালে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে । তাই এ সময়ে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে সরকারকে জানানো হয়েছে । সরকারের নির্দেশনা এলে যেকোনো সময় ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে । বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা জানান, সন্দ্বীপ রুটের ১৩ কিলোমিটার সাগরে চলাচলের মতো উপযোগী ফেরি বিআইডব্লিউটিসির নেই । সরকারের আগ্রহে চাঁদপুর থেকে কপোতাক্ষ নামের একটি ফেরি এনে সীতাকুণ্ড - সন্দ্বীপ রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে । তবে মার্চের মাঝামাঝি থেকে এ রুটে এই মানের ফেরি চলাচল বিপজ্জনক । বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষও ( বিআইডব্লিউটিএ ) ।
সংস্থাটির চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন , সমুদ্রে চলাচলের উপযোগী ফেরি না থাকায় উদ্বোধনের মাত্র এক মাসের মধ্যে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যাবে এই ফেরি চলাচল । কারণ বর্তমানে যে ফেরিটি চলছে , তা নদীতে চলাচল উপযোগী । এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সন্দ্বীপ চ্যানেলের মতো উত্তাল সমুদ্রে এই ফেরি চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ । বিআইডব্লিউটিসি গোপাল চন্দ্র বলেন , সমুদ্রে চলাচল উপযোগী ফেরি নির্মাণের চিন্তা করছে সরকার । বিদেশ থেকে নকশা এনে তা বাংলাদেশেই নির্মাণ করা হবে । এই কোস্টাল ফেরি নির্মাণ - সংগ্রহের জন্য ইতিমধ্যে প্রকৌশলীদের নিয়ে কমিটি কর্মকর্তা গঠন করা হয়েছে ।
জানা গেছে , সন্দ্বীপের প্রায় চার লাখ অধিবাসী যাতায়াতের জন্য স্পিডবোট বা ছোট্ট নৌকার ওপর নির্ভরশীল । তাও জোয়ার - ভাটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয় ; যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে । তাই দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের যাতায়াতের কষ্ট লাঘবের দাবি জানিয়ে আসছিলেন বাসিন্দারা । সন্দ্বীপের বাসিন্দা ফাওজুল কবির খান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগ পাওয়ার পর চট্টগ্রাম - সন্দ্বীপ রুটে ফেরি চলাচলের উদ্যোগ নেন । উপদেষ্টা নিজেই তদারকি করেন এ প্রকল্পের কাজ । এই ফেরি সার্ভিসটি ঘিরে দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের সঙ্গে চট্টগ্রামের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগের চরম দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন বলে আশায় বুক বেঁধেছিলেন সন্দ্বীপবাসী । হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত কাদাজল মাড়িয়ে স্পিডবোট বা ট্রলারে ওঠার বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাবেন এই রুটে প্রতিদিন চলাচল করা হাজারো মানুষ । সমীক্ষা ছাড়াই ২০০ কোটির প্রকল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন , কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে নেওয়া ২০০ কোটি টাকার এ প্রকল্প থেকে আশানুরূপ সুফল পাবেন না দ্বীপবাসী; বরং টাকার অপচয়ই হবে ।
জানা গেছে , সড়ক বিভাগ , বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি আলাদাভাবে নিজস্ব মেরামত ও রাজস্ব তহবিল থেকে টাকা খরচ করে বাস্তবায়ন করছে প্রকল্পটি । বিআইডব্লিউটিএ জানায় , চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া উপকূলে বেড়িবাঁধ থেকে সমুদ্রের প্রায় ৭০০ মিটার গভীর পর্যন্ত দুই লেনের প্রশস্ত একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে । একইভাবে সন্দ্বীপ উপজেলার গুপ্তছড়া উপকূলে নির্মাণ করা হয়েছে ৬০০ মিটারের আরেকটি সড়ক । বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন , কোনো রকম পূর্বপরিকল্পনা ও সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া সমুদ্রের টাইডাল জোনে নির্মিত সড়কটি গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা বলছেন , মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত উত্তাল থাকে বঙ্গোপসাগর । এ সময়ে সন্দ্বীপ চ্যানেলে ফেরি পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই । নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সমুদ্র যখন শান্ত থাকে , তখন ফেরি পরিচালনা করা যাবে । তাও জোয়ার - ভাটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তিত হবে সময়সূচি ।