Image description

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন দীর্ঘ ৩২ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা থাকলেও ছাত্রদলের জাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের দাবিতে পিছিয়ে যায়। শুধু পদ বাড়ানো ছাড়া গঠনতন্ত্র সংস্কারের সব ক্ষমতা নির্বাচিত সংসদের। এদিকে, নতুন রোডম্যাপে এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে তফসিল ও মে মাসের ২১ তারিখের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত কী হয় তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা, বলছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

 

জাকসুর সংস্কার কেবল নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই করতে পারবে এটি গঠনতন্ত্রে বলা আছে। ১৭ ধারা ‘গঠনতন্ত্র সংস্কার’-এ উল্লেখ আছে ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র সংস্কারের ব্যাপারে কমপক্ষে দশ দিনের নোটিস দিতে হবে। বিশেষ সাধারণ সভায় উপস্থিত সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশের অনুমোদনক্রমে সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করা যাবে। এরকম সভায় সংসদের মোট সদস্যের এক-তৃতীয়াংশের উপস্থিতিতেই সভার জন্য কোরাম হবে।’

 

অপরদিকে, ১৯ ধারায় বলা আছে ‘এই গঠনতন্ত্রে উল্লেখ নেই এমন কোনো বিষয়ের সম্মুখীন হলে, সে বিষয়ে সভাপতি সিদ্ধান্ত নেবেন এবং তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।’ সরাসরি গঠনতন্ত্রের একটি ধারায় উল্লেখ করা আছে তাই জাকসুর সভাপতি তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তার ক্ষমতাবলে জাকসুর সংস্কার করতে পারবেন না। এদিকে সংস্কারে কতটুকু উপাচার্য তার নিজ ক্ষমতা বলে করতে পারবেন তা জানানো হয়নি শিক্ষার্থীদের। তাই শিক্ষার্থীদের গঠনতন্ত্র সংস্কারে উপাচার্য ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা না দিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

 

এ বিষয়ে নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে গঠিত পরিবেশ পরিষদের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জাকসু নির্বাচন কেন্দ্রিক বেশকিছু বিষয়ে কথা বলেছে। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা নিয়ে কথা হয়েছে। হল থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বের করা নিয়ে কথা হয়েছে । এছাড়াও বর্তমান যে গঠনতন্ত্র রয়েছে তার সংস্কারের বিষয়ে কথা হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা নতুন কিছু পদ সৃষ্টির বিষয়ে বলেছেন। সেই সঙ্গে কিছু মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে বলেছেন।’

 

এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছে, বিদ্যমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেবল পদের সংখ্যা উপাচার্য বাড়াতে পারবেন। তাই নতুন কমিটির কাজ হবে কেবল কতগুলো পদ বাড়ানো যাবে তা নিয়ে। এর বাইরে কোনো সংস্কারের সুযোগ নেই এই সংস্কার কমিটির। সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশে জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এটাই আমরা চাই। আর কোনো তালবাহানা চাই না।

 

জাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘গঠনতন্ত্র সংস্কারের ক্ষমতায় বলা আছে নির্বাচিত প্রতিনিধি লাগবে। তবে জাকসু যেহেতু ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তাই আর জাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধি এখন আর নেই। আর নির্বাচনের জন্য শিক্ষার্থীরা সংস্কার দাবি করেছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ফোরামে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে কমিটি হয়েছে। এখতিয়ারের মধ্যে ন্যূনতম সংস্কার করা হবে।’

 

জাকসুর প্রথম প্রকাশিত রোডম্যাপ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচন কমিশন গঠন, খসড়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে। তবে বিপত্তি বাধে তফসিল ঘোষণার আগে। গত ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা থাকলেও ছাত্রদলের জাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের দাবিতে পিছিয়ে যায় তফসিল ঘোষণা। এরপর নির্বাচনের নতুন রোডম্যাপ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নতুন ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে তফসিল ও মে মাসের ২১ তারিখের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।