
মানুষের কষ্ট লাঘবে ২০০৩ সালে ১২ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে ধলাই সেতু । উপজেলার উত্তর রণিখাই ও পূর্ব ইসলামপুরকে একই সুতায় গেঁথেছে ধলাই নদের ওপর নির্মিত সেতুটি । তবে সেতুর গোড়া থেকে বালু তুলে এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে বালুখেকোরা । ইতিমধ্যে সেতুর বিভিন্ন পিলার থেকে মাটি সরে গেছে । স্থানীয়রা আশঙ্কা করেছেন , যেকোনো সময় সেতুটি ধসে পড়তে পারে । এটি রক্ষায় তাঁরা সংশ্লিষ্টদের দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ।
জানা যায় , কোম্পানীগঞ্জের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ধলাই নদের দুই পারের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য নির্মিত ধলাই সেতুটি ( ৪৩৪ দশমিক ৩৫ মিটার দীর্ঘ ও ৯ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থ ) ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় । সেতুর স্থায়িত্ব ধরা হয় ৭৫ বছর । এর মাধ্যমে পূর্ব ইসলামপুর , উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের অর্ধলাখ মানুষ সরাসরি সড়ক যোগাযোগের আওতায় আসে । পাশাপাশি দেশের সর্ববৃহৎ ভোলাগঞ্জ কোয়ারি থেকে পাথর পরিবহন সহজতর হয় । এ ছাড়া এই সেতু দিয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলার সঙ্গেও যাতায়াত সহজ হয় । কিন্তু এখন সেতুর গোড়া থেকে বালু তোলায় সেতুটি ধসে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছে । সেতু রক্ষায় এলাকাবাসী বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন ও মানববন্ধন এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি ও অভিযুক্তদের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দিলেও প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ।
সরেজমিনে দেখা যায় , সেতুর গোড়া থেকে অবাধে বালু উত্তোলন চলছে । পিলারের গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়েছে । স্থানীয় বাসিন্দারা জানান , সেতুটি টিকিয়ে রাখতে তাঁরা জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছেন । কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি । দিনে দিনে বালুখেকোরা আরও সক্রিয় হয়ে বালু ওঠাচ্ছে । ভারতের মেঘালয় রাজ্যের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য অবলোকন ও উমা , তুরুং ছড়ায় যাতায়াতের একমাত্র পথ এটি । বিভিন্ন সময়ে ফাটল ধরা এই সেতুর ক্ষতি হলে পর্যটকের পাশাপাশি ওই পারের অর্ধলক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি বাড়বে শতগুণ । গত ১২ মার্চ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ধলাই নদের পূর্ব পারের বাসিন্দা মো . ফয়জুর রহমান বলেন, ধলাই সেতুর নিচ থেকে বালু - পাথর উত্তোলন কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না । অবাধে বালু তোলায় সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে । ইতিমধ্যে কয়েকটি পিলারের গোড়া থেকে মাটি সরে গেছে । এভাবে চলতে থাকলে সেতুটি অচিরেই ধসে পরবে ।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির ( বেলা ) বিভাগীয় সমন্বয়কারী শাহ শাহেদা বলেন ,বর্তমানে কোম্পানীগঞ্জের যেকোনো জায়গা থেকে খনিজ সম্পদ আহরণ করা অবৈধ । সেতুর নিচ থেকে বালু- পাথর উত্তোলন আইনত নিষিদ্ধ আর পরিবেশ - প্রকৃতি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য বড় বাধা । সরকারের উচিত গুরুত্বপূর্ণ এ স্থাপনা রক্ষা করতে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া । কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেন , ‘ ধলাই সেতু রক্ষায় আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি । ' উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার বলেন , “ সেতু রক্ষায় আমরা শিগগির ধলাই সেতু এলাকায় অভিযানে নামব । ” জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান , ' ধলাই সেতুর নিচ থেকে যেন বালু উত্তোলন না হয় , সে জন্য আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি । স্মারকলিপি পাওয়ার পরে আমি সড়ক বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করছি । সেতুটি ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা নেই ।