
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজের দ্বিতল একাডেমিক ভবনের পলেস্তারা খসে বেরিয়ে গেছে রড। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাঠদানও বন্ধ। অথচ সেই ভবন এবং পাশের প্রশাসনিক ভবনের সংস্কারসহ বেশ কিছু মালামাল ক্রয়ের টেন্ডার আহ্বান করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। কলেজটির প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন-১ মেরামতের জন্য ব্যয় ধরা হয় ২৪ লাখ ৮৫ হাজার ১৫০ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি ওই কলেজের পরিত্যক্ত ভবনসহ দুটি ভবনের সংস্কারের টেন্ডার আহ্বানের পর কোনো কাজ না করেই প্রায় ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী। টেন্ডার অনুযায়ী দেখানো হয়েছে ৪৯ প্রকারের কাজ করা হয় কলেজে। কিন্তু টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে কাজের বিষয়ে জানে না কলেজ কর্তৃপক্ষ। আর মুখে কুলুপ এঁটেছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের দেওয়া কার্যাদেশে দেখা গেছে, তরল হ্যান্ডওয়াশের দুটি খালি বোতলের মূল্য ধরা হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, প্রতিটি পানির ট্যাব ৯ হাজার, শাওয়ার মিক্সার ৬ হাজার, ফ্যানের রেগুলেটর দেড় হাজার, ৫টি এসি স্থানান্তর ৫০ হাজার, প্রতিষ্ঠানে না থাকা সত্ত্বেও ৮টি এয়ারকুলার মেরামত বাবদ ৩৩ হাজার আর রং করার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা। এমন ক্রমিক গিয়ে ঠেকেছে উনপঞ্চাশে।
২০২৪ সালের ৭ মার্চ আহ্বান করা হয় টেন্ডার। মেসার্স পিআর প্রকৌশলী নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ১৩ জুন। কাজের মেয়াদ দেখানো হয় ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। অথচ এই সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো কাজই হয়নি বলছে কলেজে কর্মরতরা। আর মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে।
জানতে চাইলে টুঙ্গিপাড়া সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ দুলাল কিশোর বর বলেন, ‘২০২৪ সালের মে থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করি। এই সময়ের মধ্যে কলেজের মহিলা হোস্টেলের কিছু মালামাল ক্রয় ছাড়া একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের সংস্কার বা মালামাল ক্রয়ের কোনো কাজ হয়নি।’
টুঙ্গিপাড়া সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) তাহমিনা আকতার রোজি বলেন, ‘আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। একটু খোঁজখবর নিতে হবে, আসলে যেটা কেনা হয়েছে সেটা কোথায় আছে বা আদৌ আছে কি না?’
এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রতিভা সরকার বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে বলেন, ‘আমি সাক্ষাৎকার দিতে পারব না। এ বিষয়ের সঙ্গে ডিসি জড়িত, এসএসএফ জড়িত, পুলিশ জড়িত। তারা সবাই জানে। এ বিষয়ে কোনো সাক্ষাৎকার দিতে পারব না।’