
চীন কর্তৃক তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং তিস্তা নদী সংলগ্ন এলাকায় চীনের অর্থায়নে উপহারের এক হাজার শয্যা হাসপাতাল নির্মাণের লক্ষ্যে উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় জমি ও স্থান নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে।
এ পর্যন্ত নীলফামারীর দারোয়ানী এলাকায় ও রংপুরের মহিপুর মৌজার চর কলাগাছি এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। তবে কোন স্থানে জমি চিহ্নিত করে এই বিশেষায়িত চীনা হাসপাতাল নির্মাণে চূড়ান্ত করা হবে তা এখন ঘোষনা করা হয়নি। তবে এই হাসপাতাল নির্মানের স্থান বিশেষে দাবি করে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃস্টি হয়েছে। যা নিয়ে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলা শহরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হচ্ছে।
আজ বুধবার (১৬ এপ্রিল) পঞ্চগড় জেলাবাসীর ব্যানারে শহরের জজ কোর্ট এলাকায় গণজমায়েত শুরু হয়। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পঞ্চগড় ঢাকা মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে পঞ্চগড় শহরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় এসে শেষ হয়। পরে সেখানে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে পঞ্চগড় জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি জুলফিকার রহমানের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলাম, জেলা জাগপার সহ-সভাপতি নয়ন মাস্টার, সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাসান হাবিব, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পঞ্চগড় শাখার সভাপতি আব্দুল হাই, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি হাফেজ মীর মোর্শেদ তুহিন, গণঅধিকার পরিষদ পঞ্চগড় জেলার সভাপতি মাহফুজুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বায়ক ফজলে রাব্বি প্রমুখ বক্তব্য দেন। তারা চীনের ওই হাসপাতাল পঞ্চগড়ে নির্মানের দাবি তুলেন।
অপর দিকে একই দিন ওই চীনা হাসপাতাল ঠাকুরগাঁয়ে নির্মানের দাবি তুলে মানববন্ধন করেছেন সেখানকার সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা। সকাল ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও উন্নয়ন ফোরামের আয়োজনে চৌরাস্তায় ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
এসময় বক্তব্য দেন, ঠাকুরগাঁও উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মো. দেলাওয়ার হোসেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলমগীর, সহকারী সেক্রেটারি কফিল উদ্দিন, সমাজকর্মী মাসুদ আহম্মেদ সুবর্ণসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
এ ছাড়া গাইবান্ধায় চীনা হাসপাতাল নির্মাণের দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) উত্তরাঞ্চল সংগঠক নাজমুল হাসান সোহাগ। তার ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস লিখে ফটোকার্ড পোস্ট করেছেন তিনি। এই পোস্টে নাজমুল হাসান সোহাগ লিখেছেন, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর মধ্যে গাইবান্ধা জেলায় উল্লেখযোগ্য হাসপাতাল নেই! আমরা গাইবান্ধাবাসী নির্মিতব্য চীনের ১০০০ শয্যার হাসপাতালটি গাইবান্ধায় করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে, গাইবান্ধার আপামর জনগণ গাইবান্ধা জেলায় ওই হাসপাতালটি নির্মাণের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে দাবি করে চলছেন। এটি যেন সবার প্রাণের দাবি।
তিস্তা প্রকল্পের আশেপাশে হবে চীনের উপহারের হাসপাতালঃ বাংলাদেশের সঙ্গে ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক উপলক্ষে এক হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল উপহার দিবে চীন সরকার। সেটি দেশের রংপুর বিভাগে তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম।
গত রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।
ওই সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চীনের ১০০০ হাজারে বেডের হাসপাতাল তৈরি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, তিস্তা প্রকল্পের আশেপাশে ন্যূনতম ১২ একর জায়গা খোঁজা হচ্ছে। নীলফামারী, রংপুর এবং দিনাজপুরের মাঝামাঝি জায়গায়। তবে নীলফামারীর একটা জায়গা পেয়েছি। এটার সম্ভাবনা যাচাইয়ের একটা সমীক্ষা আমরা করবো।
জমি পরিদর্শনঃ চীনের ১০০০ বেডের ওই হাসপাতাল নির্মানে স্থান নির্ধারণ করতে জমি পরিদর্শন চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে তিস্তা নদী বিধৌত নীলফামারী জেলার দারোয়ানী নামক স্থানে ১৩০ একর জমি রয়েছে সরকারের খাস জমি। যা গত ১২ এপ্রিল সকালে ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট চীনা হাসপাতাল স্থাপনা বাস্তবায়নের জন্য জমি পরিদর্শন করেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, নীলফামারী জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নায়িরুজ্জামান সহ বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ।
অপর দিকে ১৫ এপ্রিল দুপুরে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর মৌজার তিস্তা নদীর চর কলাগাছি এলাকার ১০০ একর খাস জমি পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল, গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা।
সূত্রমতে ওই হাসপাতাল নির্মাণে চিহিৃত জমিগুলো চীনা কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শন করে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য সর্ব উৎকৃষ্ট জায়গায় নির্ধারণ করবেন বলে জানা গেছে।