Image description
 

পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়কে পুলিশের চেকপোস্টে কাগজপত্র দেখানোর সময় বেপরোয়া গতিতে আসা প্রাইভেটকারের চাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মহতাসিম মাসুদ নিহত হওয়ার ঘটনায় হওয়া দুই মামলার মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার তদন্ত শেষ করেছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। তবে সার্ভার জটিলতার কারণে রিপোর্টটি আদালতে জমা দিতে পারছেন না তারা। অন্যদিকে মেডিকেল রিপোর্ট, ভেহিক্যাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্তের জন্য ভুক্তভোগীর বাবার করা মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ বলছে, সার্ভার সংক্রান্ত সমস্যার কারণে প্রতিবেদন সম্পন্ন হলেও এখনো সেটি জমা দেওয়া হয়নি। এছাড়া ভুক্তভোগীর বাবার করার মামলার তদন্ত তিন রিপোর্টের কারণে আটকে আছে। এর মধ্যে ভেহিক্যাল রিপোর্ট পেয়ে যাবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও মেডিকেল রিপোর্টের জন্য হাসপাতালে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তারা।

অন্যদিকে নিহতের পরিবারের দাবি, দেরিতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কারণে এরই মধ্যে একবার আসামিদের জামিনে মুক্তি দিয়েছিল আদালত। তদন্ত প্রতিবেদনগুলো দ্রুত জমা দিলে এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার পাবেন তারা।

গত বছরের ১৯ ডিসেম্বরে রাতে ঢাকার পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়কে ঘুরতে গিয়ে প্রাইভেট কার চাপায় প্রাণ হারান বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ। এই ঘটনায় আহত হন তার দুই বন্ধু বুয়েটের আহসানউল্লাহ হলের অমিত সাহা ও মেহেদী হাসান। ঘটনার সময় মদ্যপ অবস্থায় প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে মুবিন আল মামুন। সেসময় ঘটনাস্থল থেকে মামুনের পাশাপাশি তার বন্ধু মিরাজুল করিম ও আসিফ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন মুবিন ও মিরাজুলের ডোপ টেস্টে ফল ‘পজিটিভ’ আসে। বর্তমানে তারা তিনজনই কারাগারে আছেন।

 

সম্প্রতি এই ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। তবে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা জামিনের বিরোধীতা করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি চেম্বার জজ আদালত ওই আসামিদের জামিন স্থগিত করেন।

 

প্রাইভেটকার চাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত: সার্ভার জটিলতায় প্রতিবেদন জমা দিতে পারছে না পুলিশ

 

আলোচিত এই ঘটনার চার মাস হতে চলল। ঘটনার সময় হওয়া দুই মামলার সবশেষ তথ্য জানতে ঢাকা টাইমস যোগাযোগ করে মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তা রূপগঞ্জ থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, “মাদকের তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তবে সার্ভার জটিলতার কারণে এটি বের করতে পারছি না। আশা করছি খুব শিগগিরই আদালতে এটি জমা দিতে পারব।”

 

“আর নিহতের বাবার করা মামলায় মেডিকেল রিপোর্ট, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও ভেহিক্যাল রিপোর্ট (যানবাহনের রিপোর্ট) এখনো পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে রিপোর্টের জন্য তাগিদ দিচ্ছি। আগামী সপ্তাহে ভেহিকেল রিপোর্ট আনতে যাব। এরপর দ্রুতই মামলার তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন আদালতে পাঠানো হবে।” বলেন তিনি।

 

ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে নিহত শিক্ষার্থীর বাবা মাসুদ মিয়া বলেন, “তদন্তে ধীরগতি আসামিদের উপকার করছে। ধীরগতির সুযোগ নিয়েই আসামিরা সাধারণত আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে যায়; আমাদের মামলায়ও তা হয়েছিল। কিন্তু বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে জামিন নিয়ে বের হতে পারেন নাই বলে আমি মনে করি।”

 

প্রাইভেটকার চাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত: সার্ভার জটিলতায় প্রতিবেদন জমা দিতে পারছে না পুলিশ

 

তিনি বলেন, “বেশকিছু দিন ধরে শুধু শুনছি মাদক মামলার তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে দ্রুত মামলার চার্জশিট দিলে আমাদের জন্য ভালো হতো। আর এই নির্মম হত্যার বিচার মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এমন নিষ্ঠুর অপরাধ আর না ঘটে।”

 

উল্লেখ্য, গত ১৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে বুয়েটের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ তার দুই সহপাঠীকে নিয়ে ৩০০ ফুট সড়কে মোটরসাইকেলে ঘুরতে যান। পুলিশের চেকপোস্টে তাদের সিগন্যাল দিলে তারা গাড়ি থামান। এসময় গাড়ির কাগজ দেখানোর সময় বেপরোয়া গতিতে আসা একটি প্রাইভেটকার চেকপোস্টের ব্যারিকেড ভেঙে তাদের মোটরসাইকেলটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মুনতাসিম মাসুদের। গুরুতর আহত হন তার দুই সহপাঠী বন্ধু অমিত সাহা এবং মেহেদি হাসান খান।

 

পরে পুলিশ প্রাইভেটকার চালক মুবিন আল মামুন, তার দুই বন্ধু মিরাজুল করিম ও আসিফ চৌধুরীকে বিদেশি মদের বোতলসহ গ্রেপ্তার করে।

 

এ ঘটনায় নিহতের বাবা মাসুদ মিয়া বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।

 

পরে মদ্যপ অবস্থায় ছিল কিনা তা যাচাইয়ের জন্য ডোপ টেস্ট করতে ২০ ডিসেম্বর দুপুরে তাদের তিনজনকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। ডোপ টেস্টে প্রাইভেটকার চালক মুবিন আল মামুন ও মিরাজুল করিমের রিপোর্ট পজেটিভ আসে। তবে আসিফ চৌধুরীর রিপোর্ট নেগেটিভ।

 

পরে ২১ ডিসেম্বর বিকালে রূপগঞ্জ থানার এএসআই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে মাদক সেবন ও বহনের অপরাধে মুবিন আল মামুন ও মিরাজুলকে এবং মাদকদ্রব্য সরবরাহে সহায়তার অভিযোগে আসিফ চৌধুরীকে আসামি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন।

 

 

(ঢাকাটাইমস