Image description
 

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে আদালতের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণার পর খুলনা নগরবাসীর হৃদয়ে আশা জেগেছে, বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) মেয়র হিসেবে পাবেন তারা। সেই আশা ব্যক্ত করে অনেককে সামাজিকমাধ্যমে স্ট্যাটাসও দিতে দেখা যাচ্ছে।

 

২০১৮ সালের ১৫ মে অনুষ্ঠিত কেসিসি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে অংশ নেন খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মঞ্জু। খুলনা শহরের বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের দাবি, ন্যায়বিচারের মাধ্যমে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে কেসিসি মেয়র ঘোষণা করুক আদালত।  

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে গা-ঢাকা দেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়ররা। আওয়ামী লীগ সমর্থিত নগরকর্তারা পালিয়ে গেলে তাদের অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অপসারণ আদেশে দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশন মেয়রবিহীন হয়।

এরপর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল বাতিল চেয়ে দায়ের করা মামলার রায়ে বিএনপির বন্দরনগরী শাখার সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেন চট্টগ্রামের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) রায়ে বলা হয়েছে, রায় ঘোষণার ১০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করতে হবে।

অপরদিকে চলতি বছরের ২৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে জয়ী ঘোষণা করেন আদালত। ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক অংশ নিয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। ২০২০ সালের ৩ মার্চ ডিএসসিসি নির্বাচন বাতিল চেয়ে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন ইশরাক।

অনুরূপভাবে ২০১৮ সালের ১৫ মে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) নির্বাচনে বিএনপি’র ধানের শীষ প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে অংশ নেন খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ওই নির্বাচনে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থী ছিলেন তালুকদার আব্দুল খালেক। নির্বাচনের দিন ভোট শুরু হওয়ার পরপরই সকল ভোট কেন্দ্র দখল করে নেয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। প্রতিপক্ষের এজেন্ট বের করে দেওয়া, দল বেঁধে বুথে ঢুকে ব্যালটে সিল মারা, বাবার সঙ্গে শিশুর ভোট দেওয়া, দল বেঁধে জাল ভোট দেওয়া, ভোটারদের প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মারতে বাধ্য করা, দুপুরের আগেই ব্যালট শেষ হওয়াসহ নানা ঘটনা ঘটে এ নির্বাচনে। সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধাসহ ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে দুপুরের আগেই বিএনপি’র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। ওই ভোটের বিষয়ে তিনি খুলনার যুগ্ম-জেলা জজ ১ম আদালত (নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে) মামলা দায়ের করেন।

মামলায় বিবাদী করা হয় তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং কর্মকর্তা কেসিসি নির্বাচন-২০১৮, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কাস্তে প্রার্থী মিজানুর রহমান বাবু, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রার্থী মো. মুজাম্মিল হককে।

সেই মামলার বিবাদীদেরকে আদালতের পক্ষ থেকে কয়েক দফা সমন প্রেরণ করা হলেও তারা হাজির হননি আদালতে। অতঃপর খুলনার যুগ্ম-জেলা জজ ১ম আদালত গত ৮ এপ্রিল (মঙ্গলবার) পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিবাদীদের বিরুদ্ধে বিকল্প পদ্ধতিতে সমন জারি করেন। আগামী ২৪ এপ্রিল বিবাদীদের সশরীরে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জবাব প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে। ওই সমনে আদালত স্পষ্ট করে বলেছেন যে, নির্ধারিত তারিখে হাজির হয়ে জবাব প্রদানে ব্যর্থ হলে বিবাদীদের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মঞ্জুর সমর্থকরা মনে করছেন, মেয়র পদ ফিরে পাওয়ার মামলায় আরো একধাপ এগিয়ে গেলেন ত্যাগী, জনবান্ধব ও ক্লিন ইমেজের নেতা খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। খুলনা যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতের এক আদেশের মাধ্যমে জানানো হয়েছে আগামী ২৪ এপ্রিল খুলনা সিটির সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সহ ছয় জন বিবাদী আদালতে উপস্থিত না হলে একতরফাভাবে এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। আগামী ২৪ এপ্রিল তারিখ তালুকদার আব্দুল খালেকের আদালতে উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। অতএব একতরফা রায়ে বর্ষীয়ান জননেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু হতে যাচ্ছেন খুলনার নির্বাচিত মেয়র। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের আমলে মামলায় রায় বাধাগ্রস্ত করা হলেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সবাই ন্যায় বিচার পাচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুলনা বিএনপির তৃণমূলের সংগঠক নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে মেয়র হিসেবে দেখতে চেয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন কেউ কেউ।

২০১৮ সালের কেসিসি নির্বাচনে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মিডিয়া সেলের প্রধান ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার ও চট্টগ্রামের ২টি মামলার রায় ভুক্তভোগী পক্ষের অনুকূলে আসায় খুলনার মানুষের মধ্যেও এক ধরনের শক্ত প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু বিচার ব্যবস্থায় পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের মত অন্যায় প্রভাব বিস্তারের কোনো সম্ভাবনা নাই। সেহেতু মামলায় আমরা ন্যায়বিচার পাব বলে আশা রাখি ইনশাআল্লাহ। আমাদের কাছে শক্ত যে রেফারেন্স আছে এই ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের ভোট ডাকাতি, সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে সিল মারাসহ ভোটের অনিয়মের অসংখ্য ভিডিও রয়েছে। তা দিয়ে আমাদের এ মামলায় জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

রোববার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোল্লা গোলাম মওলা বাংলানিউজকে বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগকে শেখ হাসিনার দাসে পরিণত করেছিল। যে কারণে মানুষ ন্যায়বিচার পায়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সবাই ন্যায় বিচার পাচ্ছেন। আমরা আশা করি ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবার ন্যায় বিচার পাবেন। চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ধানের শীষের দুই প্রার্থীকে আদালত বিজয় ঘোষণা করেছে। এই দুটি রেফারেন্স এর ভিত্তিতে আমরা মনে করি আমাদের প্রার্থীকেও জয়ী ঘোষণা করা হবে।

উল্লেখ্য, প্রায় ৪৫ বছরের অধিক সময় ধরে খুলনায় বিএনপি এবং নজরুল ইসলাম মঞ্জু একে অপরের পরিপূরক হয়েই ছিলেন। ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল কর্মী, ১৯৮৭ সাল থেকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এরপর ১৯৯২ সাল থেকে ১৭ বছর সাধারণ সম্পাদক ২০০৯ সালে আহ্বায়ক এবং ওই বছরেই সভাপতি হন তিনি। নজরুল ইসলাম মঞ্জু এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের রাজপথের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯৮৫ সালের দিকে তিনি খুলনা মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক হন। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন মঞ্জু। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৩০টি অধিক। ছিলেন কারাবন্দিও। দীর্ঘ ২৮ বছর খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন নজরুল ইসলাম। এর মধ্যে ১৬ বছর সাধারণ সম্পাদক ও ১২ বছর ছিলেন সভাপতি। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে খুলনা-২ থেকে সংসদে নির্বাচিত হন মঞ্জু। খুলনা  বিএনপির এখন সবচেয়ে বর্ষীয়ান নেতা তিনি।