Image description
ফিলিস্তিন সংকট

উত্তর গাজার অন্যতম প্রধান আল-আহলি আরব ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সেখানকার পরিস্থিতি সংকটময় হয়ে উঠেছে। ওই হাসপাতাল থেকে রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে; কিন্তু তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আংশিকভাবে চালু থাকা শেষ ওই হাসপাতালটিতে শত শত রোগী আর আহত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে গতকাল রোববার ভোরে সেখানে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। শুধু এ হাসপাতাল নয়, ২০২৩ সালে গাজায় দখলদার বাহিনী আক্রমণ শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৫ হাসপাতালে তারা হামলা চালিয়েছে। এতে উপত্যকার চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে।

আল-আহলি হাসপাতালের চিকিৎসাকর্মীরা জানান, হামলায় হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ, অভ্যর্থনাকেন্দ্রসহ অন্যান্য স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দেওয়ার মতো তাদের অবস্থা নেই। তাই চিকিৎসা কর্মীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তাদের সেবা দিতে হচ্ছে।

হাসপাতালটি রোগীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল। ইসরায়েলের বোমা হামলা এবং ভয়াবহতার আঘাত থেকে বেশ কিছুদিন দূরে ছিল বলে জানান তারা; কিন্তু রোববার এখানেও হামলা চালায় ইসরায়েল। এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের সময় এ হাসপাতালে বিস্ফোরণের এক ঘটনায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছিলেন।

 

গতকাল চিকিৎসকরা জানান, যারা এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছেন তাদের ঘরবাড়ি, আবাসিক ভবনও ধ্বংস হয়ে গেছে ইসরায়েলি হামলায়। এখন তাদের শুধু থাকার জায়গা নেই তাই নয়, বরং চিকিৎসা গ্রহণের জন্য উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবাও আর অবশিষ্ট থাকল না।

 
 

হাসপাতালে হামলার ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে হতাহত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে গাজার বেসামরিক জরুরি পরিষেবা। হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি।

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো এই জায়গা ছেড়ে যাচ্ছে। তাদের কাউকে কাউকে হাসপাতালে থাকা অসুস্থ স্বজনদের নিয়ে যেতে দেখা যায়; যদিও এই ছবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।

হামাস পরিচালিত গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর এক বিবৃতিতে এই হামলাকে জঘন্য ও নোংরা অপরাধ হিসেবে অভিহিত করে নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্যসেবা খাতের অবশিষ্ট অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য ইসরায়েল একটি পদ্ধতিগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইচ্ছাকৃতভাবে ৩৫টি হাসপাতাল ধ্বংস করেছে।

গাজার অবশিষ্ট ফিলিস্তিনি খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে ইসরায়েল আল-আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার পর এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে যুক্তরাজ্যের প্যালেস্টাইন মিশনের প্রধান হুশাম জোমলট বলেন, এই হামলা একক কোনো আক্রমণ ছিল না। অ্যাংলিকান হাসপাতালের বোমা হামলার দুটি লক্ষ্য রয়েছে—গাজা শহরের শেষ ও আংশিকভাবে চালু থাকা হাসপাতালটি ধ্বংস করা এবং রোববারে গাজায় অবশিষ্ট ফিলিস্তিনি খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানানো।

৩৫টি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। হামাসনিয়ন্ত্রিত গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ উপত্যকায় এখন পর্যন্ত ৩৫টি হাসপাতালে হামলা করেছে কিংবা আগুন দিয়েছে ইসরায়েল।

ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতালগুলোর একটি তালিকা রোববার প্রকাশ করেছে গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর। তালিকায় সর্বশেষ হামলার শিকার গাজা নগরীর আল-আহলি আরব ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালের নামও রয়েছে। গতকাল এ হাসপাতালে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

তালিকায় আরও রয়েছে গাজা নগরীর আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্স, আল-কুদস হাসপাতাল, তার্কিশ-ফিলিস্তিনি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল, কামাল আদওয়ান হাসপাতাল, আল-আওদা হাসপাতাল, জর্ডান ফিল্ড হাসপাতাল, মধ্য গাজার জাফা হাসপাতাল, দক্ষিণ গাজার নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সসহ মোট ৩৫টি হাসপাতালের নাম।

বেশিরভাগ এলাকায় হামলা শুরু

এরই মধ্যে শনিবার রাফাহকে বিচ্ছিন্ন করে গাজার বিভিন্ন অংশে নির্বিচারে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল গাজার খান ইউনিস ও এর আশপাশ এলাকা খালি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে দখলদার বাহিনী। তারা সেখানে ‘বাফার জোন’ করার ঘোষণা দিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের ১৮৮তম ব্রিগেড কমবেট টিল দক্ষিণ গাজার অবকাঠামো ধ্বংস করে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযান চালাচ্ছে, যার ভিডিও ও ছবি প্রকাশ করেছে তারা। সেখান থেকে হামাস রকেট ছুড়েছে দাবি করে এমন অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে হামাস এ ধরনের রকেট হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

টানা দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিয়ে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় আবারও হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে তারা গাজায় আরও বড় এলাকা দখল করেছে। হাজারো গাজাবাসীকে নতুন করে বাস্তুচ্যুত করেছে।

শনিবার ইসরায়েল কার্তজ বলেন, রাফা ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী সাবেক ইহুদি বসতি ‘মোরাগ এক্সিস’ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্পন্ন করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এর মধ্য দিয়ে গাজার খান ইউনিস থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফা থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গাজা উপত্যকার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূমিজুড়ে রয়েছে রাফা।