Image description
গাজার পাশে ঢাকা

এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। সব দল-মতের নেতারা একমঞ্চে। রাজপথে সাধারণ মানুষের স্রোত। সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান যেন জনসমুদ্র। ইসরাইলি বর্বরতার শিকার গাজাবাসীর পক্ষে হাতে হাত ধরে গর্জে উঠেছিল পুরো ঢাকা। এ যেন গাজার পাশে পুরো বাংলাদেশ। লাখ লাখ মানুষের মিছিল আর স্লোগানে শনিবার রাজধানী হয়ে উঠেছিল প্রতিবাদের নগরী। ফিলিস্তিন সলিডারিটি মুভমেন্টের আয়োজনে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি ঘিরে গতকাল সকাল থেকে সড়কে ঢল নামে সাধারণ মানুষের। সব সড়কের স্রোত গিয়ে মিশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বাসে, ট্রেনে, ট্রাকে করে হাজারো মানুষ রাজধানীর বাইরে থেকেও যোগ দেন এই মিছিলে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেলা তিনটায় শুরু হওয়া জনজমায়েত ঠিক এক ঘণ্টার মধ্যে ঘোষণাপত্র পাঠ ও মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। অনুষ্ঠান মঞ্চে জনপ্রিয় ধর্মীয় বক্তা, আলেমসমাজের প্রতিনিধি, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলের নেতারা দাঁড়িয়ে কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন। সেখানে ছিলেন হেফাজতসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও। বেলা চারটার কিছু আগে যখন গণজমায়েতে মোনাজাত শুরু হয় তখনো উদ্যানমুখী জনস্রোত আসছিল চারপাশ থেকে। জাতীয় পতাকা, ফিলিস্তিনের পতাকা, প্ল্যাকার্ড, ব্যানারসহ মিছিলে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আয়োজকরা জানিয়েছেন, ৫ই আগস্ট পতিত শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ঢাকায় সবচেয়ে বড় গণজমায়েত হয়েছে গতকাল। লাখো মানুষের এই সমাগমে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী। সড়কে যান চলাচলের সুযোগ ছিল না অনেক জায়গায়। সড়কে শুধু দেখা গেছে মানুষের স্রোত। 

ইসলামিক ব্যক্তিত্ব ড. মিজানুর রহমান আজহারী ও শায়খ আহমদুল্লাহসহ কয়েকজন ধর্মীয় নেতার আহ্বানে আয়োজিত কর্মসূচিতে শিশু-কিশোর থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। মনুষ্যত্বের প্রশ্নে এক হয় এদেশের সব মতের মানুষ। 

মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। আর ঘোষণাপত্র পাঠ শেষে  মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় কয়েক লাখ মানুষের এ সমাবেশ। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব আব্দুল মালেক মোনাজাত পরিচালনা করেন। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন লাখো মানুষ। সবার মোনাজাতে আকুতি ছিল ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানদের মুক্তির কামনা।  মোনাজাতে বলা হয়, ফিলিস্তিনে ইসরাইল যে নৃশংসতা চালাচ্ছে, তা মানবতার ওপর চরম আঘাত। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, যেন তিনি নির্যাতিত মুসলমানদের রক্ষা করেন এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতার আলো দেখান। এ সময় গাজায় চলমান ইসরাইলি হামলা বন্ধ হওয়া, ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের উদ্ধার ও আহতদের সুস্থতা, শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের জীবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ, বিশ্ব নেতাদের বিবেক জাগ্রত হওয়া, নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত আগ্রাসনের বিচার চেয়ে দোয়া করা হয়েছে।

বিকাল ৩টায় মূল প্রোগ্রাম শুরুর কথা থাকলেও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখ লাখ মানুষ সকাল থেকেই সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। এর আগে বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে মার্চ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী ও শায়খ আহমদুল্লার নেতৃত্বে লাখো মানুষ। এতে অংশ নেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এনসিপির উত্তারাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর শায়খ চরমোনাই মুফতি ফয়জুল করীম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক প্রমুখ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাঁচটি প্রবেশ পথ দিয়ে মানুষ প্রবেশ করেন। তবে জনতার এ ঢল ছেয়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পল্টন, নীলক্ষেত, বঙ্গবাজার, পল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ, শাহবাগ, ফার্মগেট, সাইন্সল্যাব, তেজগাঁও পর্যন্ত। পিকআপ ভ্যানে করে মানুষকে স্লোগান দিতে দিতে উদ্যানের দিকে যেতে দেখা গেছে। তেজগাঁও এবং খিলগাঁও এলাকায় প্রচুর মানুষ ট্রেনের ছাদে চড়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে যোগ দেন। বিপুল মানুষের এ জনসমাগমের কারণে এসব এলাকায়  বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। কর্মসূচি ঘিরে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন প্রদর্শনের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতায় বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। বয়কটের ডাক দেন ইসরাইলি পণ্য। কর্মসূচি থেকে ভারতে বিতর্কিত ওয়াক্‌ফ বিল পাসেরও বিরেধিতা করা হয়। 
‘মার্চ ফর গাজা’ সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ও বক্তব্য দেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। 

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা হলো- আল্লাহ্‌র নামে শুরু করছি যিনি পরাক্রমশালী, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী, যিনি মজলুমের পাশে থাকেন, আর জালেমের পরিণতি নির্ধারণ করেন। আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা- যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি-সমবেত হয়েছি গাজার মৃত্যুভয়হীন জনগণের পাশে দাঁড়াতে। আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসের সামনে দেয়া আমাদের জবাব, একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ। এই পদযাত্রা ও গণজমায়েত থেকে আজ আমরা চারটি স্তরে আমাদের দাবিসমূহ উপস্থাপন করবো-

আমাদের প্রথম দাবিগুলো জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের প্রতি- বলা হয়: যেহেতু-জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় সকল জাতির অধিকার রক্ষার, দখলদারিত্ব ও গণহত্যা রোধের সংকল্প প্রকাশ করে এবং-আমরা দেখেছি, গাজায় প্রতিদিন যে রক্তপাত, যে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, তা কোনো একক সরকারের ব্যর্থতা নয়- বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার ফল; এবং-এই ব্যর্থতা শুধু নীরবতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়- বরং পশ্চিমা শক্তিবলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদার ইসরাইলকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে এই গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে; এবং- এই বিশ্বব্যবস্থা দখলদার ইসরাইলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে; সেহেতু আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের প্রতি জোরালো দাবি জানাচ্ছি: সেহেতু আমরা মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসি’র মতো মুসলিম উম্মাহ্‌র প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর নিকট দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই।

দাবিগুলো হলো- ইসরাইলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সকল সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে, জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে, গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরাইলকে একঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে, জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াক্‌ফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে। 

এ প্রসঙ্গে বলা হয়, কারণ- গাজার রক্ত প্রবাহে আমরা লজ্জিত হওয়ার আগেই, গাজার পাশে দাঁড়ানোই উম্মাহ্‌র জন্য সম্মানের একমাত্র পথ। এবং- যে নেতৃত্ব আজ নীরব, কাল ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য হবে।

তৃতীয় দাবিগুলো বাংলাদেশ সরকারের প্রতি করা হয়: যেহেতু-বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, যার স্বাধীনতা- সংগ্রামের ভিত্তিতেই নিহীত রয়েছে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেতনা এবং আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিনের প্রশ্নে বাংলাদেশ কেবল মানবতার নয়-ঈমানের পক্ষেও এক ঐতিহাসিক অবস্থানে আছে এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সরকারের দায়িত্ব, জনগণের ঈমানি ও নৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং বাংলাদেশের জনগণ গাজার পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে, তাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নীরবতা এই জনআকাঙ্ক্ষার প্রতি অবজ্ঞার শামিল। সেহেতু আমরা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই।

দাবিগুলো হলো- জায়নবাদী ইসরাইলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে, যুদ্ধবিরতি নয়-গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে, পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে, ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে। কারণ- এই মুহূর্তে বিশ্বব্যবস্থা যে ন্যায়ের মুখোশ পরে আছে, গাজার ধ্বংসস্তূপে সেই মুখোশ খসে পড়েছে।

দ্বিতীয় দাবিগুলো মুসলিম উম্মাহ্‌র নেতৃবৃন্দের প্রতি জানানো হয়- যেহেতু-আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিন কেবল একটি ভূখণ্ড নয়-এটি মুসলিম উম্মাহ্‌র আত্মপরিচয়ের অংশ এবং-গাজা এখন কেবল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর নয়- এটি আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার বেদনাদায়ক প্রতিচ্ছবি এবং উম্মাহ্‌র প্রতিটি সদস্য, প্রতিটি রাষ্ট্র এবং প্রতিটি নেতৃত্বের উপর অর্পিত সেই আমানত- যা আল্লাহ্‌ প্রদত্ত ভ্রাতৃত্ব ও দায়িত্বের সূত্রে আবদ্ধ এবং ইসরাইল একটি অবৈধ, দখলদার, গণহত্যাকারী রাষ্ট্র- যা মুসলিমদের প্রথম কিবলা ও একটি পুরো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে, এবং ভারতের হিন্দুত্ববাদ আজ এই অঞ্চলে জায়নবাদী প্রকল্পের প্রতিনিধিতে পরিণত হয়েছে-মুসলমানদের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত দমন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে, এবং ভারতে সমপ্রতি ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি আইনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক অধিকার হরণ- যা উম্মাহ্‌র জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা। 

দাবিগুলো হলো- বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘এক্সেপ্ট ইসরাইল’- শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে, সরকারের ইসরাইলি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে, রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে, জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে, যেহেতু হিন্দুত্ববাদ আজ শুধু একটি স্থানীয় মতবাদ নয়- বরং আন্তর্জাতিক জায়নিস্ট ব্লকের অন্যতম দোসর, পাঠ্যবই ও শিক্ষা নীতিতে আল-আক্‌সা, ফিলিস্তিন, এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্ম নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয় নিয়ে গড়ে ওঠে।

এ প্রসঙ্গে বলা হয়, কারণ- রাষ্ট্র কেবল সীমানা নয়, রাষ্ট্র এক আমানত। আর এই আমানত রক্ষা করতে না পারলে ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করে না। 
আমাদের সর্বশেষ দাবিগুলো নিজেদের প্রতি যা মূলত একটি অঙ্গীকারনামা: যেহেতু- আমরা বিশ্বাস করি, আল-কুদস কেবল একটি শহর নয়- এটি ঈমানের অংশ, এবং আমরা জানি, বাইতুল মাকদিসের মুক্তি অন্য কারও হাতে নয়- আমাদেরই কোনো প্রজন্মের হাতে তা লেখা হবে, এবং আমরা বুঝি, জায়নবাদের প্রতিষ্ঠা মূলত আমাদের নিজেদের আত্মবিস্মৃতির ফল, এবং আজ যদি আমরা প্রস্তুত না হই, তাহলে আল্লাহ না করুন কাল আমাদের সন্তানরা হয়তো এমন এক বাংলাদেশ পাবে- যেখানে হিন্দুত্ববাদ ও জায়নবাদ একত্রে নতুন গাজা তৈরি করবে, এবং গাজা আমাদের জন্য এক আয়না-যেখানে আমরা দেখতে পাই, কীভাবে বিশ্বাসী হওয়া মানে কেবল বেঁচে থাকা নয়, সংগ্রামে দৃঢ় থাকা, সেহেতু আমরা এই মাটির মানুষ, এই মুসলিম ভূখণ্ডের নাগরিক, এই কওমের সন্তান এবং সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহর সদস্য- একটি অঙ্গীকার করছি।

দাবিগুলো হলো- আমরা সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বয়কট করবো- প্রত্যেক সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে যারা ইসরাইলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে, আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করবো- যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সকল প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে, ইনশাআল্লাহ্‌, আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলবো- যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে, আমরা বিভাজিত হবো না- কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না।

এ প্রসঙ্গে বলা হয়, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়। আমরা শুরু করবো নিজেদের ঘর থেকে- ভাষা, ইতিহাস, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমাজ- সবখানে এই অঙ্গীকারের ছাপ রেখে। আমরা মনে রাখবো, গাজার শহীদরা কেবল আমাদের দোয়া চান না-তারা আমাদের প্রস্তুতি চান।

শেষকথা: শান্তি বর্ষিত হোক গাজার সম্মানিত অধিবাসীদের ওপর- তাদের ওপর, যারা নজিরবিহীন সবর করেছেন, যারা অবিচল ঈমানের প্রমাণ দিয়েছেন। যারা ধ্বংসস্তূপের মাঝেও প্রতিরোধের আগুন জ্বেলেছেন বিশ্বের নীরবতা ও উদাসীনতার যন্ত্রণা হাসিমুখে বুকের মাঝে ধারণ করেছেন। শান্তি বর্ষিত হোক তাদের ওপর, যারা নাম রেখে গেছেন ইজ্জতের খতিয়ানে- শান্তি বর্ষিত হোক হিন্দ রজব, রীম এবং ফাদি আবু সালেহসহ সকল শহীদেরর ওপর, যাদের রক্ত দ্বারা গাজার পবিত্রভূমি আরও পবিত্র হয়েছে, যাদের চোখে ছিল প্রতিরোধের অগ্নিশিখা। শান্তি বর্ষিত হোক বাইতুল মাকদিসের গর্বিত অধিবাসীদের ওপর, যাদের হৃদয়ে এখনো ধ্বনিত হয় ‘আল-কুদস লানা’, আল কুদস আমাদের! গাজার জনগণকে অভিনন্দন- আপনারা ঈমান, সবর আর কোরবানির মহাকাব্য রচনা করেছেন। দুনিয়াকে দেখিয়েছেন- ঈমান আর তাওয়াক্কুলের শক্তি আমরা, বাংলাদেশের মানুষ- শাহ জালাল আর শরীয়াতুল্লাহর ভূমি থেকে দাঁড়িয়ে, আপনাদের সালাম জানাই, আপনাদের শহীদদের প্রতি ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানাই, আর আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় এই দোয়া- হে আল্লাহ, গাজার এই সাহসী জনপদকে তুমি সেই পাথর বানিয়ে দাও, যার ওপর গিয়ে ভেঙে পড়বে জায়োনিস্টদের সব ষড়যন্ত্র।