Image description
 

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোর অধিকাংশ নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে হওয়া উচিত বলে মনে করে বিএনপি। দলটি বলেছে, বেশিরভাগ প্রস্তাব সাংবিধানিক সংস্কার সংশ্লিষ্ট। ২৭টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে পাঁচটির সঙ্গে একমত অথবা নীতিগতভাবে একমত। এগুলোর মধ্যে তিনটি প্রস্তাব বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিএনপি ইসির ক্ষমতা খর্ব চায় না। সে কারণে ভবিষ্যতে সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য আলাদা স্বাধীন সীমানা নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করেছে দলটি। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ আগের মতো ৯০ দিন হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে অভিমত বিএনপির।

গত ২৩ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে জমা দেওয়া নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার ওপর বিএনপির দেওয়া মতামত পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে দলটি বলেছে, ‘নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন’—এই শিরোনামটি সঠিক নয়। বিএনপি মনে করে, শিরোনামটি ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন’ হওয়া উচিত।

বিএনপি ওইদিন মোট পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর দলীয় মতামত জমা দিয়েছে। দলটি সংবিধান সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার ওপর স্প্রেডশিটে একমত/একমত নই/আংশিকভাবে একমতে টিকচিহ্ন দিয়ে মতামত জানানোর পাশাপাশি মন্তব্যে সেটার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাও দিয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার ওপর স্প্রেডশিটে কোনো টিক চিহ্ন দেয়নি বিএনপি। শুধু মন্তব্যের ঘরে সংক্ষিপ্তভাবে মতামত প্রকাশ করেছে। একইসঙ্গে ঐকমত্য কমিশনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠি দিয়ে এর ব্যাখ্যাও দিয়েছে দলটি। সেখানে বলা হয়েছে, স্প্রেডশিটটি টিকচিহ্ন দিয়ে পূরণ করতে গিয়ে দেখা যায়, কেবলমাত্র টিক দিয়ে দলের পূর্ণাঙ্গ মতামত সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। এতে বরং ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থেকে যায়। এমতাবস্থায় ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন’ কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনের ওপর বিএনপির বিস্তারিত মতামত ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ বরাবর শিগগির প্রেরণ করা হবে।

 

বিএনপির মতামত পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইসি গঠন বিষয়ে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার উত্তরে দলটি বলেছে, নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে বর্তমানে বলবৎ আইনটি সংশোধন কিংবা নতুন করে প্রণয়ন করা যেতে পারে। তবে তা নির্বাচিত জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণয়ন করতে হবে।

 
 

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, একটি স্থায়ী জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে। এ বিষয়ে বিএনপি বলেছে, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাবটি সাংবিধানিক সংস্কার কমিশনের বিষয়, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের নয়। সংবিধান সংশোধন করে কাজটি করতে হবে বিধায় নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। তবে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক প্রতীয়মান হয়।

 

প্রাক্তন দুইবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের অযোগ্য করার প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন। বিষয়টি সাংবিধানিক সংস্কার সংশ্লিষ্ট বলে মতামত দিয়েছে বিএনপি।

কমিশন জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষের সদস্য এবং স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচিত প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত ‘বৃহত্তর নির্বাচকমণ্ডলীর’ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব করেছে। এর জবাবে বিএনপি বলেছে, বিষয়টি সাংবিধানিক সংস্কার সংশ্লিষ্ট। নির্বাচিত জাতীয় সংসদ বিষয়টি পর্যালোচনা করে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ চার মাস এবং এই মেয়াদকালে জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন করার প্রস্তাবে বিএনপি বলেছে, জনগণের প্রতিনিধির মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা সাংবিধানিক বিধান। তাই এ ক্ষেত্রে আগের মতো ৯০ দিন মেয়াদেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার হওয়া বাঞ্ছনীয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান। সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে শুধু জাতীয় নির্বাচন করা আবশ্যক, অন্য কোনো নির্বাচন নয়।

কমিশন সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি আলাদা স্বাধীন সীমানা নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ গঠনের যে প্রস্তাব করেছে, তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ নির্বাচন কমিশনের অন্যতম সাংবিধানিক দায়িত্ব। এই দায়িত্বের জন্য পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের সুযোগ নেই। এতে বরং দ্বৈতশাসন ও প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি করবে, যা অনভিপ্রেত।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তরে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত বিএনপি। দলটি বলেছে, সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দায়িত্ব ইসির কাছে হস্তান্তর করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবে বিএনপি বলেছে, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে একটি সংসদীয় কমিটির কাছে দায়বদ্ধ করার অবকাশ নেই। তা ছাড়া এমন কিছু করা উচিত হবে না, যাতে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়।

প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিষয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত করার লক্ষ্যে মানবতাবিরোধী (ট্রাইব্যুনাল) আইন এবং আরপিও সংশোধন করার প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে বিএনপি বলেছে, সংবিধান ও আরপিওতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা বিধিবদ্ধ আছে। তাই এ মুহূর্তে প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা নিয়ে নতুন কিছু যোগ-বিয়োগ অনাবশ্যক। অসংখ্য নারী-শিশুসহ ছাত্র-জনতা হত্যাকারী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নির্বাচনে অযোগ্যতার জন্য প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন হবে।