
১১-২০তম গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের জন্য নবম পে-কমিশন গঠন করে বেতন-ভাতার অসঙ্গতি দূর করার অনুরোধ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে খোলা চিঠি লিখেছেন সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক আব্দুল মালেক।রোববার (৩০ মার্চ) তিনি এ খোলা চিঠি লেখেন। চিঠিটি প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টিগোচর করতে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে সমন্বয়ক আব্দুল মালেক লেখেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। জানি না আমার এ চিঠি আপনার কাছে পৌঁছাবে কি না। সব সরকারি কর্মচারী রাষ্ট্র কাঠামোর একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সেই জনমদুখী কর্মচারীদের কিছু প্রাণের আকুতি আপনার কাছে পেশ করছি।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও তৎকালীন সচিবদের স্বৈরাচারী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে ২০১৫ সালের পে-স্কেলে। চরমভাবে বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে সেই পে-স্কেল। কর্মচারীদের কাছ থেকে তিনটি টাইম স্কেল ও একটি সিলেকশন গ্রেড কেড়ে নিয়ে দুটি উচ্চতর গ্রেড নামে তামাশার সৃষ্টি করা হয়েছিল।
‘তৎকালীন আওয়ামী সরকারের আমল থেকে কর্মচারী অঙ্গন ও নানান পেশাজীবী সংগঠন রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিল বেতন-ভাতার বৈষম্য দূর করার জন্য। কিন্তু আওয়ামী সরকার কখনোই দাবি দাওয়ার বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। দীর্ঘ ১০টি বছর সরকারি কর্মচারীরা, বিশেষ করে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীরা নানান প্রতিকূলতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সংগ্রাম করে আসছে। খেয়ে না খেয়ে কর্মচারীরা সরকারি সেবা দিয়ে আসছেন।
এতে আরও বলা হয়, সরকার পতনের পর যখন বৈষম্যবিরোধী সরকারের প্রধান হিসেবে আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই কর্মচারীদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল যে, এবার বুঝি বৈষম্য দূর হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, আপনি সরকারপ্রধান হওয়ার পর থেকেও বিভিন্ন সময় সরকারি কর্মচারীরা দাবি দাওয়া পেশ করে আসছেন। তাদের অভাব-অভিযোগ, দুঃখ-কষ্ট নানাভাবে আপনার কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নেতৃবৃন্দ ও কর্মচারীরা ব্যর্থ হয়েছেন। আপনার কাছ পর্যন্ত আমাদের দুঃখ কষ্টের কথা পৌঁছেনি।
‘৮২৫০ টাকা বেতনসহ সর্বসাকুল্য ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একজন ২০তম গ্রেডের কর্মচারী কোনোভাবেই ঊর্ধগতির বাজারে টিকে থাকতে পারে না। ১১-২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা নানাভাবে আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারবর্গের কাছে হেয়প্রতিপন্ন হন। কারণ তারা অভাব-অভিযোগ পূরণ করতে সক্ষম নন। এবারের ঈদে হাজার হাজার কর্মচারী রয়েছেন, যারা যে বেতন-বোনাস পেয়েছেন; তা দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ শেষে নিজের গায়ে একটা পাঞ্জাবি কিনে পরার সামর্থ্য হয়নি।’
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে আব্দুল মালেক লেখেন, ‘আপনি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। আপনি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী একজন মানুষ। আপনার কাছে যদি আমরা একটু শান্তি না পাই, আপনার কাছেও যদি আমরা ন্যায়বিচার না পাই, তাহলে আপনার শান্তিতে প্রাপ্ত পুরস্কার আমাদের কাছে কতটুকু গুরুত্ব বহন করবে?’
‘আপনার কাছে একটাই ফরিয়াদ, কর্মচারীদের দুঃখ-কষ্টের কথা বিবেচনা করে, দীর্ঘ ১০ বছর যে কর্মচারীরা নানা দুঃখ-কষ্টে জীবনযাপন করছেন, তাদের জীবন মানোন্নয়নের জন্য এবং সৃষ্ট বৈষম্য দূর করার জন্য নবম পে-কমিশন গঠন এবং পে-কমিশন বাস্তবায়নের পূর্ব পর্যন্ত মহার্ঘ্য ভাতা বাস্তবায়ন করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।’