
Ibrahim Mahmud (ইব্রাহিম মাহমুদ)
চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে একটা আহত গ্যাং তৈরি হইসে গত কয়েক মাস ধরেই।
এই গ্যাংয়ের লিডার আছে দুইজন। একজনের নাম শরীফ আরেকজন হিল্লোল।
লুৎফুজ্জামান বাবর হাসপাতালে গেলে আহত একটা ছেলেকে যেই ছেলেটা ধমকাচ্ছিল, তার নামই হিল্লোল।
এই দুই লিডারের আছে বিরাট আমলনামা। সেই আমলের খাতা খোলার আগে কীভাবে একটা গ্যাং জুলাইয়ের আহত যোদ্ধা থেকে স্বার্থান্বেষী দুষ্টচক্র হয়ে উঠলো তা জানাটাও জরুরি মনে করি।
ব্যক্তিগতভাবেই আমি চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে গেছি দুইবার। একবার আমাদের জুলাই রেকর্ডসের কাজে আর অন্যবার গেছিলাম ‘আহতদের লোন মওকুফ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একজন মুরুব্বির সাথে কথা বলতে, যিনি জুলাইয়ের পর থেকেই কাজ করতেছিলেন চক্ষুবিজ্ঞানে।’
আমি যেদিন চক্ষুবিজ্ঞানের ডিরেক্টরের রুমে যাই মিটিংয়ে, সেদিনও হাসপাতালে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে এই শরিফ-হিল্লোল গ্যাং ও অন্য আহতরা।
আহতদের এমন আচরণ আমার কাছে প্রথমত অড লাগলেও পরে যখন সবকিছু জানতে পারি ওখানকারই দায়িত্বশীল একজন আপুর থেকে, বিষয়টা বোধগম্য হয়।
মূলত, জুলাইয়ের প্রতি দরদ থেকেই পাঁচ তারিখের পরে নানান জায়গা থেকে নানান সোর্স হয়ে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য কাজ করে বিভিন্ন প্রাইভেট অর্গানাইজেশন ও ইন্ডিভিজ্যুয়াল পার্সন।
এমনই অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বেসরকারি উদ্যোগে আসা টাকা বন্টন করা হয় চক্ষুবিজ্ঞানে থাকা আহতদের মধ্যে। অতিরিক্ত ক্যাশ ফ্লো থাকায়, সুস্থ্য হওয়ার পরেও চক্ষুবিজ্ঞানে জোর করে থেকে যায় প্রায় একশো আহত।
হাসপাতাল তাদের সাথে জোরাজুরি করতে পারে না কারণ তারা তো জুলাইয়ের আহত! মামার বাড়ির সব আবদার করে বসে এসব আহতরা। তারও কয়েকদিন পরে, বিভিন্ন ইস্যুকেন্দ্রিক মব তৈরিতেও ব্যবহৃত হতে থাকে তারা। সেসব কাজের ব্যাপারে তাদের সাথে কারো আর্থিক লেনদেন হয়েছে কিনা প্রমাণ ছাড়া তা বলতে পারবো না।
হিল্লোর আর শরিফ গ্যাংয়ের অপকর্মের মধ্যে অন্যতম প্রধান কিছু ঘটনা আপনারাই হয়তো মনে করতে পারবেন।
(১)
৪ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের উপর হামলা করে শরিফ ও তার চ্যালাপ্যালারা। ওইখানে অধিকার পরিষদেরও প্রোগ্রাম থাকায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষ বলে এই ঘটনাকে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও পরবর্তীতে শরিফ ও তার সহযোগীদের পরিচয় বেরিয়ে আসে। তখন, বিপ্লবী পরিষদের খোমেনি এহসান সরাসরি ক্লেইম করেন, শরিফ গং দিয়ে বিপ্লবী পরিষদের উপর হামলা করিয়েছে তৎকালীন জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দায়িত্বশীল সার্জিস আলম। এবং বিভিন্ন সময়ে শরিফ ও হিল্লোলকে দেখা গেছে সার্জিস আলমের সাথে।
(২)
সরকার আহতদের টাকা দেয় না বলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে একবার হামলার ঘটনা ঘটে। সেই হামলায়ও নেতৃত্ব দেয় এই হিল্লোল আর শরিফ গ্যাং।
পরবর্তীতে সার্জিস আলম তাদেরকে প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করিয়ে দেয়। সেই ছবিতে সার্জিস আলমের আছে হিল্লোর ও শরিফের সাথে। (ছবি কমেন্টে সংযুক্ত)
(৩)
একবার আহতরা চক্ষুবিজ্ঞানের কাছেই রাস্তা ব্লক করে রাখে। সারাদেশ সিমপ্যাথি দেখায় তাদের উপর। দাবি করা হয় তারা চিকিৎসা পাচ্ছে না। আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছে না। যার কোনোটাই সত্য না।
সেই অবরোধের হোতাও এরাই।
(৪)
তার কিছুদিন পরে মেট্রোরেল স্টেশনে পুলিশ ও মেট্রোরেল কর্মকর্তাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। সেই হামলায়ও সরাসরি জড়িত হিল্লোল ও শরিফ। তার স্পষ্ট ফুটেজও আছে আমার কাছে। (কমেন্টে লিংক সংযুক্ত)
*
এই ধরণের বহু ঘটনার সাথে জড়িত আছে হিল্লোল ও শরিফের গ্যাং। আপাতদৃষ্টিতে ধারণা করি লুৎফুজ্জামান বাবরের উপস্থিততিতেও এই ধরণের ঘটনা ঘটিয়ে আহত অথচ সুস্থ্য স্বার্থান্বেষীরা কিছু সিম্প্যাথি কুড়াবার চেষ্টা করেছে। আরো ইম্পর্ট্যান্টলি এইখানে ওদের টাকার ধান্দা আছে নিশ্চিত। স্যাবোটেজ এড়াতে টাকা (সহযোগিতার জন্য) দিতে পারতেন বাবরও। ইমেজ খারাপের বিষয় তো আছেই। যেভাবে ইজ্জত নিয়ে কেটে পরা যায়।
*
পাঁচ তারিখের আগে ও পরের বাস্তবতা ভিন্ন। আমরাই বিভিন্ন সময়ে সমালোচনা করেছি কেন জুলাই ফাউন্ডেশন ওয়ার্ক করতেসে না। তার অন্যতম একটা কারণ এটাও যে আহত ও তাদের পরিবার, এমনকি শহীদের পরিবার টাকার লোভ সামলাতে পারে নাই। টাকা পেয়েও মিডিয়ার সামনে এসে কান্নাকাটি, দোষারোপ করেছে। কয়েকদিন আগেও স্বয়ং আবু সাঈদের ভাই মিডিয়ার সামনে এসে দেদারসে মিথ্যাচার করে গেসে সরকারের নামে জাস্ট তাকে টেন্ডার দেয়া হয় নাই এইজন্য! চিন্তা করেন একটাবার। ভাইয়ের রক্ত বেঁচে টেন্ডার কেনার মত দুঃসাহস সে করে ফেলসে।
*
এই ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে, প্রশাসনকে বলবো দ্রুত চক্ষুবিজ্ঞান থেকে এই এক্সপায়ার্ড আহতদের সিট বাতিল করুন। এর পেছনে যদি সার্জিস আলমসহ আরো অনেক নাম বের হয়ে আসে (অবশ্যই আসবে আস্তে আস্তে সব), তাদেরকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দেবো— জুলাই বেঁচে ব্যবসা অনেক করসেন। জনগণ খুব ভালো করে বোঝে কে বিপ্লবী আর কে বিপ্লবের দোকানদার। আহত ও শহীদদের প্রতি মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে গাদ্দারি করলে একচুলও ছাড় দেয়া হবে না কাউকে।