Image description
 

ঈদের আগে আজ ছিল রমজানের শেষ শুক্রবার। দুদিন পরেই আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা, কিন্তু বাজারে নিত্যপণ্যের চড়া দামে অস্বস্তিতে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে, সব ধরনের মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে বেশি। একইসাথে, ঈদ বাজারে ক্রেতাদের চাহিদার কেন্দ্রে থাকা শসা ও গাজরের দামও ঊর্ধ্বমুখী। আর লেবুর উচ্চমূল্য এখনও স্থির, যা ভোগান্তি তৈরি করছে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর। ক্রেতারা বলছেন, দাম বাড়লেও ঈদ উপলক্ষে কিনতেই হচ্ছে প্রয়োজনীয় পণ্য। আর এমন এক পরিস্থিতিকে সঙ্গে নিয়েই দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় ঈদের আগের মুহূর্তের বাজারের চিত্র। 

EP9K4MJuবেড়েছে সব ধরনের মুরগির মাংসের দাম

ঈদকে কেন্দ্র করে বেড়েছে সব ধরনের মুরগির মাংসের দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার থেকে শুরু করে সব মাংসের দাম বেড়েছে ১৪ টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত।

আজ বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া আজকে ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ২২৫-২৩৭ টাকা, কক মুরগি ৩০৩-৩১৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩১৫-৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৬২০-৬৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১১৫ টাকা, সাদা ডিম ১০৫-১১০ টাকা

অর্থাৎ, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১৪-১৭ টাকা, কক মুরগির দাম বেড়েছে ২০-২৩ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। আর ভিন্ন ভিন্ন দোকানে দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া গরুর মাংসের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ২০ টাকা করে। আর খাসির মাংস এখনও উচ্চ মূল্যেই স্থির রয়েছে। একইসাথে দাম বাড়ার প্রবণতার মধ্যে রয়েছে ডিমও। গত সপ্তাহে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির লাল ডিম ১১০-১১৫ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও আজকে ১১৫ টাকার নিচে আর পাওয়া যাচ্ছে না। আবার সাদা ডিম গত সপ্তাহে ডজনপ্রতি ১০৫ টাকায় বিক্রি হলেও আজকে কিছু কিছু দোকানে ১১০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। 

দেশি মুরগির দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে রাইসা চিকেন হাউজের বিক্রেতা বলেন, এখন এমনিই একটু দাম বেড়েছে। দেশি মুরগির দামতো এমনিই বেশি।

কিন্তু এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৭০ টাকা কেন বাড়লো জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশি মুরগি তো আর ফার্মের মতো অ্যাভাইলেবল থাকে না। কিন্তু ঈদের সময় এই মুরগির চাহিদা থাকে বেশি। তাই দেশি মুরগির দাম বাড়ে বেশি।

ব্রয়লার, কক আর লেয়ার মুরগির দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বি-বাড়িয়া চিকেন হাউজের বিক্রেতা মো. সুলতান বলেন, ঈদতো চলেই আসছে। তাই এখন একটু দাম বাড়ছে। সব মুরগির দামই বাড়ছে। এই সিজনে এরকম থাকেই। ঈদের পরে আবার দাম কমে যাবে।

ডিমের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে সাইদ ডিম ঘরের বিক্রেতা মো. সামিউল ইসলাম বলেন, ডিমের দাম বাড়তে শুরু করেছে। হয়তো ঈদের পর আরও দাম বাড়তে পারে। কারণ রোজার মাসে ডিমের চাহিদা ছিল কম, প্রায় সব বেকারি বন্ধ ছিল। এখন সেগুলো খুলবে, চাহিদা বাড়বে, তাই দামও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে সব ধরনের মুরগির মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ক্রেতারা। মতিউর রহমান নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যবসায়ীরা বলছেন তাদের নাকি বেচাকেনা নাই। বাজারে নাকি লোক নাই। তাহলে মুরগির দাম বাড়িয়েছে কেন?  মানুষ কম থাকলে তো মাংসের দাম কমার কথা ছিল। তারা তো সেটা করছে না।

আরেক ক্রেতা পলাশ হুসাইন বলেন, আসলে দাম বেড়েছে; ঈদের আগে সবসময়ই দাম বাড়ে। আমরা বাধ্য কিনতে, তাই বিক্রেতারা আমাদের জিম্মি করে। এটা মেনে নিয়েই আমরা বাজার করতে আসি। রাগ-অভিমান করে কোনও লাভ নেই।

নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য নিয়েই আসছে ঈদ"}">সবজির দামও রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী

কেবল মাংসের বাজারই না, ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে সবজির বাজারও। ঈদকে কেন্দ্র করে বেড়েছে সবজির দাম। শসা, লেবু, গাজরসহ অন্যান্য বেশ কিছু সবজির দামই বেড়েছে।

আজকের বাজারে প্রতি কেজি টক টমেটো ৩০ টাকা, দেশি গাজর ৪০ টাকা, শিম ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০ টাকা, শসা ৮০-১৩০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, সজনে ১৪০-১৫০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা,  চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ১২০ টাকা, ঝিঙা ১২০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৭০-৮০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৩০ টাকা, লেবু বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা করে।

এক্ষেত্রে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে দেশি গাজরের দাম বেড়েছে ১০ টাকা, শসার দাম বেড়েছে ৩০-৫০ টাকা, উচ্ছের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, করলার দাম বেড়েছে ২০ টাকা, পটোলের দাম বেড়েছে ১০-২০ টাকা, ধুন্দলের দাম বেড়েছে ৪০ টাকা, ঝিঙার দাম বেড়েছে ২০ টাকা, কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এছাড়া প্রতি পিসে চালকুমড়ার দাম বেড়েছে ১০ টাকা, ফুলকপির দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।

যদিও সবজির এই দাম বেড়ে যাওয়াকে স্বাভাবিকই বলছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, এই সময়ে এই দাম বেড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। কয়েক দিন পরেই আবার ঠিক হয়ে যাবে।

Z5nIz718"}">Z5nIz718বেড়েছে পেঁয়াজ-আদা-রসুনের দামও

আজকে মান ও আকারভেদে প্রতি কেজি নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। এর মধ্যে ছোট আকারের পেঁয়াজ ৪০ টাকা এবং বড় আকারের পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আজকে প্রতি কেজি নতুন সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা, নতুন লাল আলু ২০ টাকায়। নতুন বগুড়ার আলু ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আজকে নতুন দেশি রসুন ১০০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ দরে বিক্রি হচ্ছে।

এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের তুলনায় দেখা যায় আজকে প্রতি কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫ টাকা, সাদা আলুর দাম বেড়েছে ৫ টাকা, দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদার দাম বেড়েছে ২০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। 

দাম নিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে দাম সামান্য বেড়েছে। তবে আর বাড়বে বলে মনে হয় না। কারণ এখন বাজারে অনেক মাল আছে।

এদিকে আজকের বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ মাছ ৮০০ (৪০০ গ্রাম)-২৮০০ টাকা (এক কেজি), রুই মাছ ৩৫০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৬০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ১০০০-১৫০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, কৈ মাছ (চাষের) ৩০০-১২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৮০০-১২০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, মেনি মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, চিতল মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, সরপুঁটি মাছ ২৫০-৫০০ টাকা, কাজলী মাছ ১৪০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

অপরিবর্তিত রয়েছে মুদিপণ্যের দাম

খেসারির ডাল ও ছোলা বাদে আজকে মুদিপণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। আজকের বাজারে প্রতি কেজি বুটের বেসন ১৪০ টাকা, অ্যাংকর বেসন ৮০-৯০ টাকা, ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১২০ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, কাজু বাদাম ১৬৫০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২৭০০ টাকা, কাঠ বাদাম ১২২০ টাকা, কিশমিশ ৬০০-৭০০ টাকা, দারুচিনি ৫২০ টাকা, লবঙ্গ ১৪০০ টাকা, কালো গোল মরিচ ১৩০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ১৬০০ টাকা, জিরা ৬০০ টাকা, প্যাকেট পোলাও চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১২০ টাকা, খোলা চিনি ১১৫  টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় খেসারি ডালের দাম কমেছে ১০ টাকা এবং ছোলার দাম কমেছে ৫ টাকা। 

নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য নিয়েই আসছে ঈদ"}">এছাড়া আজকে মানভেদে প্রতি কেজি খোলা চিকন সেমাই ১০০ টাকা, প্যাকেট চিকন সেমাই ৪৫ (২০০ গ্রাম) টাকা, খোলা লাচ্ছা সেমাই প্রতি কেজি ১৫০-১৮০ কেজি টাকা, প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই প্রতি কেজি ৫০০-১৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।