Image description
 

প্রায় ১৭ বছর পর পরিবারের সঙ্গে নির্ভয়ে ঈদ কাটাবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেই সঙ্গে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়ে যুগপৎ আন্দোলন-সংগ্রামের সহযোগীদের সঙ্গেও ঈদ কাটাবেন তারা। ঈদকে কেন্দ্র করে যার যার সংসদীয় আসনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে জনসংযোগ করবেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। পাশাপাশি ১৭ বছরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন তাদের পরিবারের পাশে ঈদ উপহার নিয়ে দাঁড়াবে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

এর আগে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সময়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা হয় জেলে না হয় আত্মগোপনে ঈদ উদযাপন করেছেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে রাজনীতির মাঠে সবচেয়ে ভালো সময় পার করছে বিএনপি। বিপ্লবের পর একটা মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করবে দলটির নেতাকর্মীরা। সেই সঙ্গে নির্বাচন সামনে হওয়ায় নেতাকর্মীদের চাঙা করা ও এলাকার মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে সংসদীয় এলাকায় ঈদ করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাদের দাবি, গত ১৫ থেকে ১৭ বছর পর একটি বাধাহীন ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছেন তারা। ফ্যাসিস্ট শাসনের সময়ে তারা ঠিকমতো পরিবার ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। কোথাও দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারেননি। পাঁচজন দাঁড়িয়ে কথা বললেই বলা হতো ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মিটিং করেছে’। সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হতো।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, সংস্কারের নামে যাতে নির্বাচন পিছিয়ে না যায় সেজন্য নির্বাচনের লক্ষ্যে মাঠে থাকবে বিএনপি। ঈদকে সামনে রেখে প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগ করবেন। তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতেও নির্দেশনা রয়েছে। পাশাপাশি বিগত সময়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা নিহত ও আহত হয়েছে তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

দলটির এক শীর্ষ নেতা জানান, আসন্ন ঈদে সারা দেশে সব সংসদীয় আসনের সব প্রার্থীকে নিজ এলাকায় অবস্থান করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঈদের দিনগুলোতে নেতাকর্মীদের আবারও চাঙা করতে কাজ করছেন নেতারা। ঈদ আয়োজনের মধ্যেই দেওয়া হবে দলের নির্দেশনা।

দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ উপহার নিয়ে ইতোমধ্যে তৃণমূলে ছুটেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে খুন, গুম ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের খোঁজ নিতে ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পাজামা-পাঞ্জাবি ও শাড়ি উপহার দিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে টিম গঠন করা হয়েছে। দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সারা দেশে অসহায়-দুস্থদের জন্য বস্ত্র ও খাবার বিতরণ কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপির নেতারা।

এর আগে রোজার শুরুতে ইফতার পার্টি ও বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে ছিল বিএনপি। দলটি প্রথম রোজায় এতিম ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সম্মানে ইফতার আয়োজন করে। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, গুম-খুনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার, কূটনৈতিকদের সম্মানে ইফতার ও সাংবাদিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মানে ইফতার আয়োজন করে বিএনপি।

এদিকে প্রতি বছর দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে ঈদ উদযাপন শুরু হয় দলীয় নেতাকর্মীদের। তবে গত কয়েক বছর তিনি কারাবন্দি ও গুরুতর অসুস্থতার জন্য বাসায় আইসোলেটেড থাকায় নেতাকর্মীরা ঈদে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেনি। শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি সাজা থেকে মুক্তি পেলেও দলীয় নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ থাকছে না। তিনি বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা জানিয়েছে, ঈদের পরে পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে খালেদা জিয়ার দেশে আসার কথা রয়েছে।

বিএনপির নেতাকর্মীদের মতো যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যদলগুলোর নেতারা ছিলেন শেখ হাসিনার রোষানলে। এই দলগুলোর নেতাকর্মীরা গণতন্ত্রের আন্দোলনে যুক্ত থাকায় তাদের অধিকাংশের ঈদ কেটেছে কারাঘরে। যারা কারাঘরের বাইরে ছিলেন তারাও স্বাভাবিকভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। আর যারা বাইরে ছিলেন তাদেরকে প্রশাসনের লোক দিয়ে হয়রানি করা হতো।

ঈদ উপলক্ষে দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেওয়া হতো না অভিযোগ গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ২০১৯ সাল থেকে স্বাভাবিকভাবে আমরা ঈদ করতে পারিনি। কোনো ঈদ জেলে, আবার কোনো ঈদ আত্মগোপনে থেকে করতে হয়েছে।

এবার মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করার জন্য নিজ সংসদীয় আসন ঝিনাইদহ আছেন জানিয়ে রাশেদ খান বলেন, ঈদ এলে সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়। রাজনীতিবিদরা যেহেতু নির্বাচন করেন, তাই তারা চাইবেন ঈদের সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানুষের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে।

বাধাহীন পরিবেশে ঈদ উদযাপনের পরিকল্পনা নিয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী আমার দেশকে বলেন, হাসিনামুক্ত বাংলাদেশে এবার বাধাহীন ঈদ করব। গত ১৫ বছর এটা আমরা পারিনি। মন খুলে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের সৌজন্য বিনিময় করতে পারিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ আমার দেশকে বলেন, দীর্ঘ বন্দিজীবন থেকে মুক্ত পরিবেশে বিএনপি ও সারা দেশের মানুষ এবারের ঈদুল ফিতর উদযাপন করবে। ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের মানুষকে এমনভাবে বন্দি করেছে যে, কেউ স্বাধীনভাবে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারেনি। ১৫ বছরে কেউ জেলখানায় কেউ আত্মগোপনে কেউ পরিবারের প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ঈদ উদযাপন করেছে। এবার শেখ হাসিনামুক্ত বাংলাদেশে আমরা বাধাহীন ঈদ উদযাপন করব।

ঈদে নেতাকর্মীদের কী নির্দেশনা দেওয়া আছে এমন প্রশ্নে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঈদ ঘিরে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা সেতুবন্ধ তৈরি হয়। এর মাধ্যমে দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো যায়, আবার জনমতও সৃষ্টি করা সম্ভব। বিএনপি সেটাই করবে।