Image description

দেশের তৃতীয় আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম প্রায় ৯ বছর আগে চালু হয়েছে। প্রতিনিয়ত এই বন্দরে দেশি-বিদেশি জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে আমদানি। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাজস্ব আহরণ।

 
এই সময়ে আমদানি পর্যায়ের ভ্যাট ও কাস্টম ডিউটিসহ প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। তবু বন্দর ব্যবহারকারীরা কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব সেবা পাচ্ছে না।

 

বন্দর চালুর প্রায় ৯ বছর পরেও পায়রায় পূর্ণাঙ্গ কাস্টম হাউস নির্মিত হয়নি। যদিও ২০১৬ সালে এনবিআর পায়রা বন্দরের অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলোকে কাস্টম হাউস পায়রার অধিক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করেছিল।

 
সেটি কার্যকর না হওয়ায় বর্তমানে খুলনা ভ্যাট কমিশনারেটের অধীনে স্বল্প পরিসরে শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হচ্ছে।

 

পূর্ণাঙ্গ কাস্টম হাউস নির্মাণপ্রক্রিয়া আটকে থাকায় এই বন্দর দিয়ে শুধু পাথর, সিমেন্টের কাঁচামাল এবং এলপিজিসহ কয়েকটি পণ্য আমদানির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাক‌ছে। কনটেইনার পরিবহনের সুযোগ থাকছে না। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার জট কমানোর পাশাপাশি কম সময়ে ঢাকার তৈরি পোশাক পায়রা বন্দর দিয়ে কম খরচে রপ্তানি করা যাচ্ছে না।

 
তবে এই বন্দর দিয়ে শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি তিন হাজার ৩০৬টি জাহাজ থেকে প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করেছে এনবিআর।

 

বরিশাল ক্লাবে সম্প্রতি প্রাক-বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন। তার কাছে কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে পায়রা বন্দরে কাস্টম হাউস নির্মাণের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয়। প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘চ্যানেলের ড্রাফট সমস্যার পাশাপাশি আমদানিকারক সংকটের কারণে কাস্টম হাউস চালু করা যাচ্ছে না।

 
সমস্যা কেটে গেলে খুব দ্রুত কাস্টম হাউসের কাজ শুরু হবে।’ 

 

দেশের তৃতীয় আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর হিসেবে ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পায়রা বন্দর উদ্বোধন করা হয়। ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর পায়রা বন্দরকে কাস্টমস স্টেশন ঘোষণা করা হয়। একই বছরের ২৫ জানুয়ারি বন্দর কর্তৃপক্ষকে পাবলিক বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স প্রদান করে। ওই বছরের ১ আগস্ট বন্দরে প্রথম জাহাজ আসে। পায়রায় গতি আনতে ৪৬টি সিঅ্যান্ডএফ এবং ৩৪টি শিপিং এজেন্ট লাইসেন্স প্রদান করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এনবিআর ২০১৬ সালের ২ আগস্ট পায়রা বন্দরের অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলোকে কাস্টম হাউস পায়রার অধিক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করে।

পায়রা বন্দরের কাছে ইটবাড়িয়ায় কাস্টম হাউস ও অফিস-আবাসিক ভবনের জন্য ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট প্রায় ৪০ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয় এনবিআর। জমি অধিগ্রহণের জন্য পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনের সময় আপত্তি আসায় বিষয়টি আটকে যায়। পরে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে বানাতিপাড়ায় কাস্টম হাউসের জন্য ৩০ একর জমির অনুমোদন দেয়। সেখানে এনবিআরের স্থাপনা নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই।

পায়রা বন্দরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পায়রা কাস্টম হাউস নির্মাণ করার বিষয়ে ২০২৩ সালের ২৫ জুলাই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে একটি আন্ত মন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আধুনিক ও স্মার্ট আন্তর্জাতিক বন্দর হিসেবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দ্রুত পায়রা বন্দরে একটি পূর্ণাঙ্গ কাস্টম হাউস নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ছাড়া পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে ওই বছরের ৮ আগস্ট বন্দরের সভাকক্ষে খুলনা ভ্যাট কমিশনারের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় একটি আন্তর্জাতিক বন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরে দ্রুততম সময়ে পূর্ণাঙ্গ কাস্টম হাউস স্থাপ‌ন জরুরি বলে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেন। সে অনুযায়ী হাউস নির্মাণের জন্য বন্দর জমি প্রদান করে।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (ট্রাফিক) আজিজুর রহমান বলেন, ‘২০১৬ সালে সীমিত পরিসরে পায়রা বন্দরের অপারেশন কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত পায়রা বন্দর পাঁচ শতাধিক বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজসহ তিন হাজারের অধিক জাহাজ হ্যান্ডল করেছে। এর মাধ্যমে সরকার প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে চ্যানেল সচল রাখা হচ্ছে। তবে কাস্টম হাউস স্থা‌পিত না হওয়ায় এই বন্দর দিয়ে কনটেইনার পরিবহন করা যাচ্ছে না, ফলে গতি পাচ্ছে না পায়রা বন্দর।’

পায়রা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বে থাকা পটুয়াখালী ভ্যাট ডিভিশনের উপকমিশনার নেয়ামুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পায়রা বন্দরে মাল্টিপারপাস ভবনে কাস্টমস বিভাগের জন্য অফিস সুবিধা রয়েছে। পাশাপাশি কাস্টমস কর্মকর্তাদের বাসস্থান সুবিধা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।’