Image description
 

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর পরিকল্পিত নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। গত রাতে, পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ফকদাই গ্রামে ইসলামপন্থীরা ৮টি হিন্দু বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ৮টি হিন্দু পরিবারের সমস্ত কিছু আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।” (অনূদিত)

এছাড়াও, ফেসবুকে কিছু পোস্ট উক্ত ঘটনাটির দৃশ্য প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, উল্লিখিত অগ্নিসংযোগটি উগ্রপন্থীরা করেছে। পাশাপাশি ক্যাপশনে প্রশ্ন করা হয়েছে, “সংখ্যালঘুদের উপর এই নির্মমতার শেষ কোথায়?”

অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করতে ইসলামপন্থীরা বা উগ্রপন্থীরা উক্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ইচ্ছেকৃতভাবে উগ্রবাদীদের বা ইসলামপন্থিদের দেওয়া আগুনের ফলে ঘটেনি বরং, হিন্দু ধর্মাবলম্বী একজনেরই রান্নাঘর থেকে অসতর্কতাবশত আগুনটির উৎপত্তি হয়েছিল।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে ‘আতিকুজ্জামান আতিক’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১২ মার্চে প্রচারিত একটি ফেসবুক লাইভ ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটি সম্পর্কে ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, “বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরী ইউনিয়নের ফকদই পাড়া গ্রামে বিনয় দা, শুভাষ দা, শ্যামল এর বাড়ি সম্পূর্ণ এবং চিত্র ও নিরঞ্জন এর একটি করে ঘর পুরেছে। বিনয় দা এর রান্নাঘরের চুলা থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্র।”।

উক্ত ভিডিওতে প্রদর্শিত অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে উক্ত ঘটনাটির বিষয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে ‘বাংলাদেশ সকাল’ নামের একটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে “পঞ্চগড়ে আগুনে বাড়ি পুড়ে যাওয়া পরিবারের পাশে বিএনপি নেতা আজাদ” শীর্ষক শিরোনামে গত ১২ মার্চে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ঘটনাটি সম্পর্কে উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা ঝলইশালশিড়ি ইউনিয়নের খোদকইপাড়া গ্রামের ১০ জন হিন্দু পরিবারের বাড়ি পুড়ে যায়। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে…জানা যায়, ৫ টি পরিবারের সকল আসবাবপত্র, জামা কাপড়, ঘরবাড়ি, টাকাসহ সর্বস্ব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এবং ৫ পরিবারের ঘরবাড়ির কিছু কিছু অংশ পুড়ে গেছে। উল্লেখ্য, অসতর্কতাবশত এ আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং ঘরবাড়ি পুড়ে যায়।”

পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম বোদা থানার অফিসার ইনচার্জ আজিম উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি নিশ্চিত করেন, মুসলিমরা ইচ্ছেকৃতভাবে আগুন লাগিয়েছে বা সনাতনীদের ওপর হামলা ছিল এইসব দাবি পুরোপুরি মিথ্যা৷ তিনি আরো জানান, তিনি নিজেই সেখানে গিয়ে পরিদর্শন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, শশীমোহন নামের এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির ঘরের চুলার আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত।

বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের পঞ্চগড়ের বোদার সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, মুসলমানদের ইচ্ছেকৃতভাবে আগুন ধরানোর বিষয়টি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে সেখানকারই একটি ঘর থেকে অসতর্কতাবশত আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।

এছাড়াও, উক্ত এলাকার ইউনিয়ন সদস্য রতি কান্ত বর্মনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনিও রিউমর স্ক্যানারকে জানান, প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।

এছাড়া, এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, দুর্ঘটনাবশত হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তির রান্নাঘর থেকে উদ্ভূত আগুনে ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ার ঘটনাকে ইসলামপন্থীরা বা উগ্রবাদীরা ইচ্ছেকৃতভাবে আগুন ধরিয়েছে শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।-