
প্রস্তুতি নিলেও ওমরাহ পালন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশির । সৌদি আরব সরকার ওমরাহ ভিসা কমিয়ে দেওয়ায় এই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে । উড়োজাহাজের টিকিট , সৌদি আরবে বাড়ি বা হোটেল বুকিং দিয়েও নির্ধারিত সময়ে ভিসা না পাওয়ায় ওমরাহ পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের পাশাপাশি ওমরাহ এজেন্সিগুলোও আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে । এয়ারলাইনসগুলোও সমস্যায় পড়ছে । হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করলেও এখনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি । হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ( হাব ) সূত্র বলছে , সম্প্রতি সৌদি আরব ওমরাহ ভিসায় কোটা ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এর প্রভাব
বাংলাদেশি ওমরাহ যাত্রীদের ওপরও পড়েছে । আগে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ ওমরাহ ভিসার আবেদন অনুমোদিত হলেও রমজান মাসের শুরুতে এই হার নামে ৮-১০ শতাংশে । রমজানের শেষ দিকে তা আরও কমে ২-৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে ।
হাব বলছে , ওমরাহ পালনে ইচ্ছুক ৩৫ থেকে ৪০ হাজার বাংলাদেশি ভিসার জন্য উড়োজাহাজের টিকিট ও হোটেল বুকিং করেছেন । তাঁদের অনেকে পরিবারসহ ওমরাহ পালনের প্রস্তুতি নিয়েছেন । কিন্তু তাঁরা নির্ধারিত
সময়ে ভিসা পাননি । ভিসা না পাওয়ার বিষয়টি জেনে আরও অন্তত ৫৫ হাজার ব্যক্তি ওমরাহ যাত্রার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন । অবশ্য তাঁরা উড়োজাহাজের টিকিট বুকিং দেননি । ভিসা না মেলায় ওমরাহপ্রত্যাশীদের মতো ওমরাহ এজেন্সিগুলোও বড় আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে । কারণ , বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওমরাহ যাত্রীর জন্য আগাম টিকিট ও হোটেল বুকিং দেয় এজেন্সিগুলো । ক্ষতির কারণে কিছু এজেন্সি এই পরিস্থিতিতে কার্যক্রম স্থগিত রাখার চিন্তা করছে । এয়ারলাইনসগুলোরও একই অবস্থা । কারণ , যাত্রীরা ভিসা জটিলতার কারণে টিকিট বাতিল করছেন বা ফ্লাইট পুনর্নির্ধারণ করতে বাধ্য হচ্ছেন । হাবের মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন , সৌদি সরকারের আকস্মিক সিদ্ধান্তে
ভিসা জটিলতায় অনিশ্চিত ৩৫০০০ মানুষের
ওমরাহ যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে । ভিসা জটিলতায় শত শত এজেন্সি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে । অনেক এজেন্সি আগে থেকে টিকিট কেটেছে , সৌদি আরবে হোটেল ও বাসা ভাড়া করেছে । কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় সব বুকিং বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছে , যা বিপুল আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । সংকট সমাধানে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়েছে । তবে এখনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি । জানা গেছে , সৌদি সরকার ওমরাহ ভিসার ক্ষেত্রে সম্প্রতি কোটার ব্যবস্থা চালু করেছে । এতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিসা বরাদ্দ হচ্ছে । তবে এ সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি । বিশ্লেষকদের মতে , সৌদি কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ও ধর্মীয় স্থানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অতিরিক্ত জনসমাগম ও ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ এড়াতে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয় । কয়েক ওমরাহ যাত্রী বলেন , তাঁরা মাসখানেক আগে আবেদন করেও ভিসা পাচ্ছেন না । এতে আর্থিক ও মানসিক চাপে আছেন । বেশ কয়েকটি ওমরাহ এজেন্সির অভিযোগ , ওমরাহ ভিসার কোটা ব্যবস্থায় বাংলাদেশিদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে খুব কম । ইতিমধ্যে প্যাকেজ বুকিং নেওয়া থাকলেও ভিসা না পাওয়ায় ওমরাহ যাত্রীদের যাত্রা
অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে । এ কারণে তারা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । হাব ওমরাহ ভিসার অনুমোদন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে । সূত্র বলেছে , ধর্ম মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ওমরাহ ভিসার বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে । ঢাকার সৌদি দূতাবাসকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে । ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান , সৌদি আরব বাংলাদেশিদের জন্য ওমরাহ ভিসা পুরোপুরি বন্ধ করেনি । ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন । রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের হজ ও ওমরাহ এজেন্সিগুলোকে সৌদি এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন , যাতে ভিসাপ্রক্রিয়া সহজ হয় । এদিকে ওমরাহ ভিসার খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে । সাধারণ সময়ে একটি ওমরাহ ভিসার খরচ ছিল ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা । কিন্তু বর্তমান সংকটের কারণে একেকটি ভিসার জন্য ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ছে , তা- ও পাওয়া নিশ্চিত নয় । প্রতি ১০ জন আবেদনকারীর মধ্যে বড়জোর একজন ভিসা পাচ্ছেন । ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন ১৮ মার্চ মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান , সৌদি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ওমরাহ ভিসা বন্ধ না করার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন ।
নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত বিষয়টি ধর্মসচিবকে নিশ্চিত করেছেন । টিকিট সংগ্রহকারী কোনো ওমরাহ যাত্রী ভিসা না পাওয়ার কারণে সৌদি আরব যেতে না পারলে তাঁকে বিধি মোতাবেক টাকা ফেরত দিচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস । সাউদিয়াসহ অন্যান্য এয়ারলাইনসকেও একইভাবে ভিসা জটিলতায় ওমরাহ পালনে যেতে না পারা যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দিতে অনুরোধ করা হয়েছে । ধর্ম উপদেষ্টা জানান , বিমানের টিকিট সংগ্রহকারী যাত্রীরা যাতে রমজান মাসেই ওমরাহ পালন করতে যেতে পারেন , সে লক্ষ্যে জেদ্দায় বাংলাদেশ হজ কাউন্সিলর সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন । সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় , সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় চার শতাধিক সৌদি ওমরাহ কোম্পানিকে বিভিন্ন দেশের এজেন্সির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ওমরাহ কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে । এই কোম্পানিগুলোর অনুকূলে প্রতিবছর ওমরাহ যাত্রীর কোটা নির্ধারিত থাকে । এই নির্ধারিত কোটা শেষ হয়ে গেলে ওই কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসা প্রদান কার্যক্রম বন্ধ করা হয় । বাংলাদেশে অনুমোদিত ওমরাহ এজেন্সির পাশাপাশি সৌদি আরবের নুসুক অ্যাপের আইডি ও পাসওয়ার্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান ওমরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে ।