Image description
শিশু ধর্ষণ মামলায় নামের ভুল। এজাহারে বাবার নামে ভুল থাকায় এই ঘটনা ঘটেছে । ২০১৭ সালের ৪ জুন পাবনার সুজানগর থানায় মামলা হয় । গত বছর আয়ুবের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত ।

মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে চ বছরের এক শিশু ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা দেশজুড়ে প্রতিবাদ - ক্ষোভের ঝড় তোলে সম্প্রতি । এমন প্রেক্ষাপটে ওই এলাকারই কাছাকাছি থাকা আত্মীয়ের বাড়িকে কেন্দ্র করে ১১ বছরের এক শিশুর ধর্ষণ মামলার ঘটনা সামনে এসেছে । তবে বর্তমানে এ মামলার প্রকৃত আসামি জামিনে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং পরে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটছেন একই নামের অন্য এক নির্দোষ ব্যক্তি । এজাহারে আসামির পিতার নামে ভুল থাকাই এর কারণ বলে জানা গেছে । মাগুরার ৮ বছরের শিশুটির মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ নিয়ে আইনি লড়াই শুরু করেছে সুজানগরের পরিবারটি । মেয়েকে অপহরণ করে ধর্ষণ ও তাতে সহায়তার অভিযোগে ২০১৭ সালের ৪ জুন পাবনার সুজানগর থানায় মামলা করেছিলেন ভুক্তভোগী শিশুটির মা । এজাহারে ওই মা উল্লেখ করেন , ৫ এপ্রিল তাঁর ছেলের মৃত শ্বশুরের

কুলখানির দাওয়াত দিতে আয়ুব নামের অভিযুক্ত ব্যক্তি সুজানগর থানা এলাকার বাড়িতে যান । এই আয়ুব বাদীর পুত্রবধূর বোনের স্বামী । বাদীর অভিযোগ , ওই দিনই সকাল ১০ টার দিকে তাঁর শিশুকন্যাকে স্কুলে যাওয়ার সময় তুলে নিয়ে যাওয়া হয় । ৭ এপ্রিল মেয়েটি বাড়ি ফিরে পরিবারকে জানায় , তাঁকে আয়ুব মাগুরায় নিয়ে ধর্ষণ করে পালিয়ে যান । মামলায় আসামি করা হয় মো . আয়ুব শেখ , পিতা ওমেদ শেখ ( ভুল নাম ) এবং আসামিদের স্বজন দুই নারীকে । ২১ জুন আসামিরা গ্রেপ্তার হন এবং পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয় । তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে দুই আয়ুবের নামই ‘ মো . আয়ুব আলী ' বলে উল্লেখ করা হয়েছে । গত বছরের ১৪ জুলাই মামলার রায় দেন পাবনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল । রায়ে আয়ুবকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয় । অন্য দুই আসামিকে  খালাস দেন আদালত । এর ধারাবাহিকতায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মাগুরা পৌরসভার নিজনান্দুয়ালী পূর্বপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো . আয়ুব আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । বর্তমানে তিনি পাবনা জেলা কারাগারে রয়েছেন । মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এ কে এম শফিকুল আলম আদালতে দেওয়া পুলিশের চালানে উল্লেখ করেছিলেন , এজাহারে প্রধান আসামির বাবার নাম ও ঠিকানা ভুল রয়েছে । তিনি এতে বলেন , প্রধান আসামির প্রকৃত নাম মো . আয়ুব আলী খান ও পিতার সঠিক নাম মো . যদন আলী খান । দুই বছর কারাভোগের পর প্রধান আসামি আয়ুব আলী জামিন পান ২০২১ সালের ২১ মার্চ । তবে জামিননামায় আসামি ও পিতার নাম সঠিকভাবে লেখা হয় । জামিনদার হিসেবে স্বাক্ষর করেন তার বড় ছেলে সাগর খান । এ বিষয়ে সাগর খান আজকের পত্রিকাকে জানান , তাঁর বাবা আয়ুব আলী সেই সময় মাগুরা পৌরসভার নিজনান্দুয়ালীর সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতেন । তাঁর বাবা এরকম একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন । ২০২১ সালে তাঁকে জামিন দেন আদালত । বাবা এরপর কিছুদিন হাজিরা দিয়েছেন । একপর্যায়ে আর হাজিরা না দিলেও পুলিশ তাঁর খোঁজ করেনি । সাগর খান বলেন , পরে তিনি জানতে পারেন নিজনান্দুয়ালীর ওই সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রেরই তৎকালীন বাসিন্দা ওমেদ শেখ নামের এক বৃদ্ধে

ছেলে অন্য এক আয়ুবকে পুলিশ কিছুদিন আগে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে । সাগর বলেন , ‘ যিনি এখন কারাগারে তিনি মামলার প্রকৃত আসামি নন । আমার বাবা আয়ুব আলীই ওই মামলার আসামি ছিলেন । দুজনের নামেই ‘ আয়ুব ’ থাকলেও তাদের বাবার নাম ভিন্ন । ' বর্তমানে কারাগারে থাকা আয়ুব আলী ওরফে আয়ুব শেখের ছেলে শিমুল শেখ সম্প্রতি আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদককে জানান , তাঁর বাবার নাম পুলিশ ভুল করে মামলায় ঢুকিয়ে দিয়েছে । শিমুল বলেন , ‘ আশ্রয়কেন্দ্রের প্রকৃত আসামির কয়েকটা ঘর পরই থাকতেন আমার দাদা ওমেদ শেখ । তদন্ত কর্মকর্তা ঐ আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে অভিযুক্ত আসামির বাবার নাম হিসেবে আমার দাদার নাম উল্লেখ করেন । ফলে আমার বাবা ফেঁসে যান । ' আজকের পত্রিকার প্রতিবেদক আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে ওমেদ শেখের একসময় আসামি আয়ুবের প্রতিবেশী থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন । আজকের পত্রিকা গত সোমবার কথা বলে মামলায় বেকসুর খালাস পাওয়া এক নারী আসামির সঙ্গে । ওই নারী আয়ুবের ছবি দেখে বলেন , ‘ এটাই সেই আয়ুব । আমরা একসঙ্গে জেলে ছিলাম । সে - ই দোষী ছিল । রায়ের পর সে কেন বাইরে তা বুঝলাম না । ' বর্তমানে কারাগারে থাকা আয়ুব আলীর আইনজীবী মো . মাহবুবুল আকবর আজকের পত্রিকাকে বলেন , “ এজাহারে আসামির বাবার নামে ভুল থাকলেও জামিননামায় সঠিক নাম উল্লেখ করা হয় । কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামির বাবার নাম ভুল লিখেই অভিযোগপত্র দেন । বিচারকও সে অনুযায়ী রায় দিয়েছেন । এই গাফিলতির কারণে একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে জেল খাটতে হচ্ছে । জেল কোড অনুসারে আসামির মামলার নথি ও কয়েকটি ছবি যাচাই করলে ভুলটি ধরা পড়বে । ”