Image description
ফুরিয়ে আসছে মজুদ, কমে যাচ্ছে উৎপাদন

গ্যাসের চাহিদা প্রতিদিনই বাড়ছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন হচ্ছে না, বরং প্রতিদিনই কমে যাচ্ছে। গত ২১ মার্চ দেশীয় ও বিদেশী কোম্পানি মিলে উৎপাদন হয়েছে ১৯২ কোটি ঘনফুট, যেখানে এক বছর আগে একই সময়ে উৎপাদন হয়েছিল ২০১ কোটি ৪০ লাখ ঘনফুট। এ হিসেবে গ্যাস উৎপাদন কমেছে ৯ কোটি ঘনফুট। অথচ জ্বালানি বিভাগ থেকেই দাবি করা হচ্ছে গ্যাসের বর্তমান চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুট। গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়ায় আমদানি নির্ভরশীলতা বাড়ছে। কিন্তু ডলারের সঙ্কটের কারণে পর্যাপ্ত গ্যাস আমদানি করা যাচ্ছে না। এতে সরবরাহ ও জোগানের মধ্যে ব্যবধান বেড়ে যাচ্ছে। আর এ ব্যবধানের কারণে শিল্পকারখানাসহ আবাসিকে গ্যাস সঙ্কট বাড়ছে ।

এ বিষয়ে গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাসের এমডি প্রকৌশলী শাওনেওয়াজ পারভেজ গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, পবিত্র রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে ১০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হতো, এখন সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ১১০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ছে না। আর এ কারণে শিল্প ও আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। তিতাসের আওতাধীন গ্রাহকের প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা যেখানে ২২০ কোটি ঘনফুট, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে দেড় শ’ কোটি ঘনফুট। চাহিদার বাকি ৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস রেশনিং করা হচ্ছে। অর্থাৎ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। অপর দিকে অনেক এলাকার গ্যাসের সরবরাহ লাইন পুরনো। দেখা যাচ্ছে পাশাপাশি দু’টি রাস্তার একপাশে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে, একই সময়ে অন্য দিকে গ্যাস সরবরাহ কম হচ্ছে। পুরনো লাইনের কারণেও গ্যাস সরবরাহ ঠিকমতো হচ্ছে না।

রমজানের আগে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। কিন্তু প্রতিদিন গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে ১১০ কোটি ঘনফুট। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে শিল্পে ও আবাসিক গ্যাস সরবরাহ কমে যাচ্ছে। এ দিকে কাক্সিক্ষত হারে এলএনজি আমদানি হচ্ছে না।

পেট্রোবাংলার পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, স্থানীয়ভাবে গ্যাস উৎপাদন কমে যাচ্ছে। গত বছরের ২৩ মার্চ দেশীয় তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে গ্যাস উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৭৮ কোটি ঘনফুট। আর বিদেশী দু’টি কোম্পানির মাধ্যমে গ্যাস উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১২৪ কোটি ঘনফুট। দেশী ও বিদেশী কোম্পানি মিলে গ্যাস উৎপাদন হতো প্রায় ২০২ কোটি ঘনফুট। সেখানে এক বছরের মাথায় স্থানীয় গ্যাসের উৎপাদন কমে নেমেছে ১৮৬ কোটি ৬০ লাখ ঘনফুটে। স্থানীয়ভাবে গ্যাস উৎপাদন কমে যাওয়ায় আমদানি নির্ভরশীলতা বেড়ে যাচ্ছে। গত বছর ২৩ মার্চ এলএনজি আমদানি করা হয়েছিল ১০০ কোটি ঘনফুট। এবার রোজার আগে এলএনজি আমদানি করার কথা ছিল ১১০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে ৯৬ কোটি ৭৭ লাখ ঘনফুট। ফলে সামগ্রিকভাবেই ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে।

পেট্রোবাংলার গ্যাস সরবরাহের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ২৪২ কোটি ঘনফুট। বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট। অপর দিকে সরকারি কারখানাগুলোর ৩৩ কোটি ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১২ কোটি ঘনফুট। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে শিল্পকারখানা ও আবাসিক মিলে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ২২০ কোটি ঘনফুট। বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে দেড় শ’ কোটি ঘনফুট। চাহিদা ও সরবরাহের এ বিশাল ঘাটতির কারণে সামগ্রিক উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, রমজান মাসে সাহরি ও ইফতারের আগে বাড়তি রান্নার প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেক এলাকায় এ দুই সময়ে গ্যাস সরবরাহ থাকে না বললেই চলে। এ নিয়ে গ্রাহকের মধ্যে অসন্তোষ বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বিগত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে শুধু একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন দিয়ে কমিশনে বাণিজ্যের মাধ্যমে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। কিন্তু এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানোর জন্য যে প্রাথমিক জ্বালানির প্রয়োজন তার কোনো নিশ্চয়তা করা হয়নি। এর ফলে দেশের মজুদ গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিপরীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য উচ্চ দরের এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। এতে জাতির ঘাড়ে ভর্তুকি ও ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, দেশের সামগ্রিক এ পরিস্থিতি একমাত্র অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস ও কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় বিদ্যমান সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।