Image description

ঈদ এলেই অতিরিক্ত লাভের আশায় ফিটনেসবিহীন ও লক্কড়ঝক্কড় বাস মেরামত ও রং করান মালিকরা। এতে বাইরে থেকে বাস দেখে ভালো লাগলেও বস্তুত বিপজ্জনকভাবে চলে এগুলো। দূরপাল্লার সড়কে অনেক সময় এসব গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। খুশির ঈদ যাত্রায় বাড়ে আহত আর নিহতের সংখ্যা। ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা, সড়কে তৈরি হয় যানজট। এমন পরিস্থিতিতে ঈদুল ফিতরের আগে লক্কড়ঝক্কড় বাস রাস্তায় না নামাতে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে রেখেছেন পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বিঘ্নে বাড়িফেরা নিশ্চিত করতে নজরদারি বাড়াতে হবে। আগামীকাল সোমবার থেকে ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করবে ঘরমুখো মানুষ। ঈদ যাত্রাকে সামনে রেখে এরই মধ্যে নতুন করে সাজছে বিভিন্ন রুটের গণপরিবহন। যাত্রীর চাপ সামাল দিতে দৌরাত্ম্য বাড়ে ফিটনেসবিহীন গাড়িরও। অন্যদিকে ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে যাত্রী হয়রানি বন্ধ ও মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পরিবহন নেতাদের।

এদিকে সায়েদাবাদ, গাবতলীসহ বিভিন্ন জায়গায় ওয়ার্কশপে নতুন রূপে রাস্তায় নামতে তৈরি হচ্ছে বাস। চলছে মেরামত। রঙিন আবহে সাজছে মহাসড়কের যাত্রীবাহী গাড়ি। নতুন বাসের জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন সিট। গাবতলী এলাকায় বাস মেরামতের কাজে নিয়োজিত এক শ্রমিক বলেন, আমরা পুরনো বাসগুলোকে রং ও মেরামত করে ডেলিভারি দিই। নতুন বাসও থাকে।

জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ছাড়া সাভারের আমিনবাজার, বলিয়ারপুর হেমায়েতপুর, বিশমাইল ও আশুলিয়ার নিরিবিলি, নয়ারহাট, বাইপাইল, জিরানীসহ বিভিন্ন এলাকার ওয়ার্কশপের শ্রমিকদের ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। কালের কণ্ঠের সাভার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ফিটনেসবিহীন ভাঙাচোরা গাড়িগুলোতে জোড়াতালি, রং, ঝালাই দেওয়া হচ্ছে। এখন রমজানের শেষ সময় ঘনিয়ে আসায় মিস্ত্রিরা পুরনো গাড়ি মেরামতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। কারণ ঈদের আগে গাড়ি নতুন দেখিয়ে সড়কে নামাতে হবে। 

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, এবার ঈদে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর থেকে গ্রামে ফেরা মানুষের প্রায় ৭৫ শতাংশই ফিরবে সড়কপথে। এতে বাড়বে গণপরিবহনের চাহিদা। তবে ঈদে চাহিদার তুলনায় গণপরিবহন সংকট নতুন নয়। আর এই সংকটকে পুঁজি করে বেশ কিছু ফিটনেসবিহীন গাড়ি মহাসড়কে যাত্রী পরিবহন করে। পথে পথে সৃষ্টি হয় দুর্ভোগ, যানজট। ঘটে দুর্ঘটনাও।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, গত বছর ঈদে ৩৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৩৬৭ জন। আহত হয়েছে অন্তত দেড় হাজার মানুষ, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৩৯.২০ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এবার ১১ হাজার বাসসহ ছয় লাখ ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় যানবাহনের পাশাপাশি পাঁচ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজি বাইকের কারণে দুর্ঘটনা বাড়বে। পাঁচ লাখ ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল এবং প্রায় ১৫ লাখ রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল সড়ক পরিবহন বহরে থাকবে। এ কারণে দুর্ঘটনা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়তে পারে। দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা প্রবল হলেও কিছু মানুষ আর্থিক লাভের জন্য অনেক মানুষের জীবন হুমকিতে ফেলছে।

ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, আমরা স্পস্ট বলে দিয়েছি ফিটনেসবিহীন বাস যাতে না নামানো হয়। পুলিশকে অনুরোধ করেছি এমন বাস রাস্তায় পেলে ডাাম্পিংয়ে দিয়ে দিতে। আর আমরা টার্মিনাল থেকে এসব বাসের সিরিয়াল দেব না।

বিআরটিএর অভিযান

গতকাল শনিবার ফিটনেসবিহীন বাসের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) অভিযান চালিয়েছে। বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে গাবতলী এলাকার ওয়ার্কশপগুলোতে ফিটনেসবিহীন বাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালান। ওয়ার্কশপগুলো ঘুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যরা কাজ চলমান থাকা গাড়িগুলোর নম্বর টুকে নেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই অনলাইন সিস্টেমে ফিটনেস আছে কি না, সেটা চেক করছেন।