
ঢাকার রাস্তায় হাঁটবেন আর হকারের সঙ্গে দেখা হবে না, তা কী হয়! তবে সাধারণ মানুষের রোজকারের হকার দর্শন আর কোনো নাট্যকারের চোখে দেখার জায়গাটা যে এক বিষয় নয়, তা নিপুণভাবে প্রকাশ পেলো নাট্যকার ও নির্দেশক জ্যাজি আইয়্যুনের ‘সংস অব হকারস’ নাটকটিতে।
কর্মসূত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন শহরে অবস্থান করে থাকেন প্যারিস শহরের লা মারাইসে জন্মগ্রহণকারী এই পার্সি নাট্যকার। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। রাজধানীজুড়ে ঘুরে বেড়ানোর সুবাদে এখানকার হকারদের বিচিত্র জীবন ও তার বহুমুখী সংগ্রাম নাট্যকারের চোখ এড়ায়নি। নিজের পর্যবেক্ষণকে তিনি রূপ দিয়েছেন মঞ্চে।
গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার (২০ ও ২১ মার্চ) আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার প্রযোজনায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হলো রম্য নাটক ‘সংস অব হকারস’ বা ‘হকারদের গান’। নাটকটি লেখার পাশাপাশি নির্দেশনায়ও ছিলেন জ্যাজি আইয়্যুন।
নাটকটিতে ঢাকার হকারদের আটপৌরে কর্মকাণ্ডকে হাস্যরসাত্মক সুরে দর্শকদের সামনে হাজির করেন এই পার্সি নাট্যব্যক্তিত্ব। নৃত্য, গান, অ্যাক্রোব্যাটিকসহ নানান অনুষঙ্গে প্রযোজিত নাটকটি দেখতে দর্শকের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো
ঢাকার হকার প্রসঙ্গে জ্যাজির ভাষ্য, এখানকার হকাররা সুর বা তাল-ছন্দ না শিখেও যে চমৎকার সুরে, ছন্দে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে, সেটা সত্যিই অভিনব। তারা নিজের অতীতের কোনো গল্প বা ঘটনাকে মনের মাধুরি মিশিয়ে শোনায় ক্রেতাদের। এরই ফাঁকে গল্পচ্ছলে বিক্রি করে নিজেদের পণ্য।
পার্সি নাট্যকার আরও বলেন, এর মাঝেই হকারদের কখনও পুলিশের ধাওয়া খেতে হয়, কখনও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে দিতে হয় উৎকোচ বা উপঢৌকন। কখনও অন্য হকারের সঙ্গে বাধে ন্যায্য হিস্যার লড়াই। বিবিধ প্রতিকূলতাকে সে অতিক্রম করে নানান কায়দায়। তবু দিনের শুরু থেকে শেষ, সে নিরলস সুরে গাইতেই থাকে ক্রেতা আকর্ষণের গান।
‘সংস অব হকারস’ নাটকটিতে জ্যাজি আইয়্যুন রোজকার জীবনের পরিচিত তিনটি গল্প আলাদা ঢংয়ে সাজিয়েছেন– ‘দ্য সিক্রেট’, ‘দ্য থিফ রিওয়ার্ডেড’ ও ‘দ্য কম্পিটিশন’।
এক ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের এই নাটকের সংগীত আয়োজনে ছিলেন সংগীতশিল্পী ও কম্পোজার রাহুল আনন্দ। মূল কুশীলব ছিলেন এম এস রানা, পি কে ফজল, ইমাম হোসেন এবং সুরাইয়া মৌ প্রমুখ।