Image description
 

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সমাজে একটি জেন্ডার-সাম্যমূলক পরিবেশ তৈরির অংশ হিসেবে গণমাধ্যমে জেন্ডার-সাম্যের বিষয়টিতে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে মনে করে। গণমাধ্যমে সবপর্যায়ে জেন্ডার-সাম্য বজায় রাখতে নারীকে কীভাবে উপস্থাপনা করা হবে, তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা এবং নিয়মাবলি রচনা করাসহ কয়েক দফা সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (২২ মার্চ) গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার হাতে এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করে।

গণমাধ্যমে জেন্ডার-সাম্যমূলক পরিবেশ তৈরিতে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে—

ক. গণমাধ্যমের সব পর্যায়ে সব জেন্ডারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য নিয়োগ, পদায়ন ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে জেন্ডার-বৈষম্য দূর করা;

খ. প্রতিটি গণমাধ্যমে জেন্ডার সংবদেনশীল আচরণবিধি প্রস্তুত করতে হবে এবং আচরণবিধি কার্যকরভাবে পালনের জন্য তথ্যদান, আলোচনা, প্রশক্ষিণ ও মনিটরিং-এর ব্যবস্থা রাখা; সব জেন্ডারের সাবলীল অংশগ্রহণের জন্য অবকাঠামো (যেমন: ভিন্ন টয়লেট, শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র) ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে।

গ. নারীর প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে জেন্ডার নির্বিশেষে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতার ব্যবস্থা; নিরাপদে যাতায়াতের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা রাখা;

ঘ. হাইকোর্ট প্রণীত যৌন নিপীড়ন রোধ নির্দেশ (২০০৯) অনুযায়ী প্রতিটি গণমাধ্যম কার্যালয়ে একটি অভিযোগ প্রতিকার সেল তৈরি করা;

ঙ. সাংবাদকিতায় নানা ধরনের চাপ মোকাবিলায় মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া;

চ. নারী যেন যথাযথভাবে মাতৃত্বকালীন ছুটি পায় এবং ছুটি শেষে কাজে ফিরে কোনও বৈষম্যের মুখোমুখি না হয়, তা নিশ্চিত করা;

ছ. নারীকে কীভাবে উপস্থাপনা করা হবে তার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা এবং নিয়মাবলি রচনা করা; নারীর প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ বা বিরূপ মনোভাব তৈরি করে কিংবা সব ক্ষেত্রে তার সাবলীল পদচারণায় বাধা সৃষ্টি করে- এমন গৎবাঁধা ধারণা প্রকাশ ও প্রচার না করার বিষয়ে নীতিমালা প্রস্তুত করা;

জ. সমাজে নারীর বহুমুখী ভূমিকা ও অংশগ্রহণ তুলে ধরা; কোনও একটি সংবাদ বা ফিচারের ক্ষেত্রে নারীর কণ্ঠস্বর ও দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে কিনা, তা খেয়াল রাখা;

ঝ. ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা প্রস্তুত করা, যাতে শব্দ বা বর্ণনার মাধ্যমে নারীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবমাননা না হয়।

গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে গত ১৮ নভেম্বর সরকার ১১ সদস্যের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কমিশনের প্রধান করা হয় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদকে। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, দ্য ফিন্যানসিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধি শামসুল হক জাহিদ, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন ওনার্স (অ্যাটকো) প্রতিনিধি মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সচিব আখতার হোসেন খান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ, মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক সাংবাদিক জিমি আমির, ডেইলি স্টারের বগুড়া জেলা প্রতিনিধি মোস্তফা সবুজ, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর টিটু দত্ত গুপ্ত এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন।