
পুলিশ সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কনস্টেবল পদকে এএসআই পদে উন্নীতকরণে প্রথমবারের মতো এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগ কার্যক্রমে সারাদেশে মতামত জরিপ শুরু করেছিল পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশের সব ইউনিট থেকে আসা সেই জরিপের ফল পুলিশ সদর দপ্তরে এসেছে। জরিপ বলছে, মাঠপর্যায়ের বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগ চান না। বেশির ভাগ পুলিশ সদস্যই প্রচলিত নিয়মে শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে এএসআই পদে নিয়োগের পক্ষে মত দিয়েছে। এখন এই মতামত নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে পুলিশ সদর দপ্তর। বর্তমানে পুলিশ বিভাগে কনস্টেবল, এসআই, সার্জেন্ট ও এএসপি- এই চারটি পদে সরাসরি নিয়োগ করা হয়।
পুলিশের একাধিক ইউনিট এবং পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগ এবং পুলিশ কনস্টেবল পদ বিলুপ্ত করতে মতামত জরিপ করতে গত ৪ মার্চ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিটে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে ৬০ শতাংশ
মতামত নায়েক/কনস্টেবলের মধ্য থেকে নিতে বলা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশে বর্তমানে অনুমোদিত কনস্টেবল পদ ১ লাখ ৩০ হাজার ৩০৮ এবং এএসআই (নিরস্ত্র) পদ ১৮ হাজার ৭৩৮টি। এই সংখ্যার বাইরে আরও ৮ হাজার নিরস্ত্র এএসআই পদ সৃষ্টি করা হবে। এই আট হাজারের মধ্যে ৪ হাজার পদ কনস্টেবল থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। বাকি ৪ হাজার পদে সরাসরি এএসআই (নিরস্ত্র) নেওয়া হবে। এই সরাসরি পদে নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে এইচএসসি/সমমান।
৪ হাজার কনস্টেবল পদোন্নতির মাধ্যমে এএসআই (নিরস্ত্র) হলে কনস্টেবলের এই পদগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এভাবে প্রতি বছর এএসআই পদ বৃদ্ধি পাবে আর সমপরিমাণ কনস্টেবল পদ বিলুপ্ত হবে। নতুন এএসআই নিরস্ত্র পদের বেতন স্কেল হবে ২০১৫-এর ১৪তম গ্রেড (১০২০০-২৪৬৮০)।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমান বিদ্যমান পদ এএসআই (নিরস্ত্র) ১৮ হাজার ৭৩৮, এটিএসআই ২০৪৫ এবং এসআই (সশস্ত্র) ৭৭৪৮। এই সকল পদ প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণের জন্য সংরক্ষিত থাকবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে উপরোক্ত প্রস্তাব সমর্থন করলে বা না করলে ‘হ্যা’ বা ‘না’ জবাব দিতে বলা হয়েছে। বিকল্প কোনো প্রস্তাব থাকলে তাও লিখতে বলা হয়।
পুলিশের একাধিক ইউনিটে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ইউনিটের পুলিশ কনস্টেবল, নায়েকগণ প্রস্তাবে একমত নন। যে কারণে বেশির ভাগ জবাব দিয়েছেন ‘না’। তারা এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগের বিপক্ষে মত দেন। তাতে এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগ না করে পুলিশ কনস্টেবল ও নায়েকদের থেকে বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করতে মত দেওয়া হয়। আবার পুলিশ কনস্টেবল পদ বিলুপ্ত না করে পর্যায়ক্রমে সব কনস্টেবল পদ এএসআই পদে উন্নীত করে এন্ট্রি পদ এএসআই করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ মত দিয়েছেন- বর্তমানে নায়েক/কনস্টেবল পদে কর্মরত সব পুলিশ সদস্যের এএসআই নিরস্ত্র পদে পদোন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সরাসরি এএসআই পদে নিয়োগ না দেওয়া, কনস্টেবল পদ থেকে পদোন্নতির হার বৃদ্ধি করা এবং কনস্টেবল পদের গ্রেড দুই ধাপ উন্নতি করারও প্রস্তাব এসেছে মাঠপুলিশ থেকে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম গত ৯ মার্চ আমাদের সময়কে বলেছিলেন, পুলিশ কনস্টেবল পদ বিলুপ্ত ও এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগ করার বিষয়টি আমাদের চিন্তাভাবনার পর্যায়ে রয়েছে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। আমরা মাঠপর্যায়ে মতামত জরিপ করে দেখছি, পুলিশ কনস্টেবলরা কী চান। তারা যদি চান তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আর না চাইলে নেব না। মাঠপর্যায় থেকে কী মতামত আসছে সেটি অবশ্যই আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেব, যোগ করেন আইজিপি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পুলিশ বিভাগে কনস্টেবল, এসআই, সার্জেন্ট ও এএসপি- এই ৪টি পদে সরাসরি নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে কনস্টেবল ও এসআই/সার্জেন্ট নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর এএসপি নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে পাবলিক সার্ভিস কমিশন। বিএনপি পুলিশ সংস্কার কমিশনে দাখিল করা সুপারিশমালায় পুলিশে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে চার স্তরে নিয়োগের পরিবর্তে দুই স্তরে নিয়োগ ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করে। এর মধ্যে প্রথম স্তরে কনস্টেবল পদে নিয়োগ এবং দ্বিতীয় স্তরে সহকারী পুলিশ সুপার পদে নিয়োগ। বিএনপির সুপারিশে সার্জেন্ট এবং এসআই পদে সরাসরি নিয়োগ বন্ধের সুপারিশ করা হয়। কনস্টেবল পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা নির্দিষ্ট চাকরির মেয়াদ শেষে বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে এএসআই, এসআই ও ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পাবেন। এতে ওই পদগুলোয় পদোন্নতির অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে উল্লেখ করা হয় বিএনপির প্রস্তাবে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, কনস্টেবল থেকে এএসআই এবং এএসআই থেকে এসআই পদোন্নতিতে প্রতি বছর পরীক্ষা ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার রীতি বাতিল করে একবার উত্তীর্ণ হলে তাকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা যায়। বিভাগীয় পদোন্নতির নীতিমালা সংস্কার করে কনস্টেবল/এসআই নিয়োগ স্তর থেকে একটি ক্যারিয়ার প্ল্যানিং প্রণয়ন করা প্রয়োজন। যাতে সদস্যদের মধ্যে পেশাদারি উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়।