Image description
 

গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির শীর্ষ নেতাদের দেশ ছাড়ার হিড়িক পড়ে। এর মধ্যে ১৬ এমপি আমেরিকায় পালিয়ে গেছেন। পলাতকদের ফেরাতে পুলিশ ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেবে বলে জানিয়েছে। ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, দুর্নীতি ও হত্যামামলায় অভিযুক্ত এসব নেতা বিদেশে থেকেও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

ইমিগ্রেশন সূত্র জানিয়েছে, পলাতকদের মধ্যে ১৬ এমপি আমেরিকায় গেছেন। তাদের কেউ কেউ ৫ আগস্টের পর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য কান্টনমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

 

পরে তারা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আমেরিকায় যান। এসব এমপির বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকা এবং হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। আবার কারো বিরুদ্ধে দুদক মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় কারো কারো বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

 

সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা পলাতক এমপিসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের তালিকা করছে। তালিকায় কোন এমপি ও মন্ত্রী কোন সময় দেশ ছেড়েছেন এবং কোন দেশে ও কোথায় অবস্থান করছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তারা কী ভূমিকা পালন করেছেন এবং তাদের নামে কোন থানায় কতটি মামলা রয়েছে— এসব বিষয় হালনাগাদ করা হচ্ছে। ইন্টারপোলে তথ্য দিয়ে তাদের ফেরাতে একাধিক চিঠি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশে ফিরিয়ে তাদের আইনের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

 

কারা সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন ৪২ সংসদ সদস্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইমিগ্রেশনের এক কর্মকর্তা জানান, যারা দেশ ছেড়েছেন, তাদের আগে থেকেই আমেরিকার ভিসা ছিল। তাদের অধিকাংশই ৫ আগস্টের আগেই চলে গেছেন। তবে শুধু তিনজন এমপি গেছেন ৫ আগস্টের পর।

 

ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী ১০ আগস্ট আমেরিকায় যান। সরকার পতনের পর তিনি ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার নামে দিনাজপুরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় মামলা রয়েছে। তার মামলাটি তদন্ত চলছে।

 

সিলেট-১ আসনের সাবেক এমপি একেএমএ আবুল মোমেন আমেরিকায় অবস্থান করছেন। তিনি ২ আগস্ট দেশ ছাড়েন। তার নামে মৌলভীবাজারে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি একেএম শামীম ওসমান আমেরিকায় অবস্থান করছেন। তার মেয়ে কানাডায় এবং ছেলে আমেরিকায় থাকেন। তিনি কখনো আমেরিকায়, কখনো কানাডায় থাকেন। শামীম ওসমান ২৮ জুন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে চলে যান। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে তার নামে মামলা রয়েছে। বিদেশে থাকলেও তার কোনো তৎপরতা নেই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেই কোনো টু-শব্দও।

 

সূত্র জানিয়েছে, ফেনী-১ আসনের আলোচিত এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম আমেরিকায় পালিয়েছেন। গত ২৬ জুন তিনি প্রথমে নেপালে যান; পরে সেখান থেকে আমেরিকায় পালান। তার নামে জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তার নামে হামলার অভিযোগে হত্যার মামলাও দায়ের হয়েছে।

 

বহুল আলোচিত-সমালোচিত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান আমেরিকায় অবস্থান করছেন। আন্দোলন চলাকালীন তিনি বিদেশে অবস্থান করছিলেন। তার নামে মাগুরায় দুটি মামলা দায়ের হয়। সাকিব আল হাসান বহু আগে থেকেই আমেরিকার নাগরিক। এছাড়া খুলনা-২ আসনের এমপি শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল আমেরিকায় অবস্থান করছেন। তিনি ২৫ জুন দেশ ছেড়ে প্রথমে দুবাই এবং পরে আমেরিকায় যান। তাকে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি রেস্টুরেন্টে দেখা গেছে।

 

জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালীন কথিত ‘আলো আসবে’ গ্রুপের সমন্বয়ক চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ আমেরিকায় অবস্থান করছেন। তার নামে ধানমন্ডি থানায় ছাত্র হত্যার ঘটনায় মামলা রয়েছে। ফেরদৌস ও তার পাইলট স্ত্রী আমেরিকার নাগরিক।

 

সূত্র জানিয়েছে, পঞ্চগড়-১ আসনের এমপি নাঈমুজ্জামান ভুঁইয়া যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। গত ২৯ জুলাই তিনি দেশ ছাড়েন। এছাড়া একই দিনে দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি শিবলী সাদিক যুক্তরাষ্ট্রে পালান। এছাড়া সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের এমপি চয়ন ইসলামও আমেরিকায় পালিয়েছেন বলে জানা গেছে।

 

সূত্র জানিয়েছে, ইসলামী ব্যাংক লুটের অন্যতম হোতা যশোর-৩ আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ আমেরিকায় পালিয়েছেন। তার নামে যশোরে মামলা হয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরার এসএম আতাউল হক দোলনও গত ২৫ জুন আমেরিকায় পালিয়ে যান। ১/১১-এর অন্যতম হোতা ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী আমেরিকায় অবস্থান করছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চালাকালে তিনি দেশটিতে অবস্থান করছিলেন। আন্দোলন জমে উঠলে আর দেশে ফেরেননি। এছাড়া কিশোরগঞ্জ-২ আসনের এমপি সোহরাব উদ্দিন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি শাহিদা তারেখ দীপ্তি আমেরিকায় অবস্থান করছেন। তারা দুজনই ৯ আগস্ট দেশত্যাগ করেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনও একই সময় আমেরিকায় পালিয়ে গেছেন।

 

এদিকে দেশ থেকে পলাতক এসব সংসদ সদস্য ও আওয়ামী নেতাকর্মীরা বিদেশে বসেও অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে তারা ভ্রান্ত ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করে বিদেশিদের বিভ্রান্ত করছেন। বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ করতে বিভিন্ন মাধ্যমে তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব রয়েছেন।

 

আওয়ামী লীগ এমপিদের পলায়ন ও তাদের অপতৎপরতা নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন ডিআইজি বলেন, শুধু এমপি নয়, যারাই আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পালিয়েছেন, তাদের ফেরাতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। তাদের অপতৎপরতা সম্পর্কে পুলিশ সজাগ আছে। তাদের দেশে ফেরাতে পুলিশ কাজ করছে। দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।