
Arshad Mahmud (আরশাদ মাহমুদ)
গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের বাংলাদেশ নিয়ে একটা মন্তব্য বেশ জোরেশোরে প্রচার হচ্ছে।
বিভিন্ন মাধ্যমে জানলাম যে তুলসী বাংলাদেশে সম্ভাব্য ইসলামী খিলাফত শাসন ও সংখ্যালঘুস সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য যে এটা ছিল এক ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব।
আমি পরে তার ভিডিও ক্লিপটা দেখলাম। এখানে পরিষ্কার বোঝা গেল যে NDTVর ওই সাংবাদিক তাকে প্রোভোক করার চেষ্টা করছেন। আমি যেটা বুঝতে পারলাম সেটা হল তুলসী গ্যাবার্ড প্রশ্নটা ভালোভাবে বুঝতে পারেননি এবং বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পরে অনেকটা গৎবাঁধা উত্তর দিয়েছেন যেটা সাধারণত ভারত সরকার এবং মিডিয়া প্রায়ই প্রচার করে।
এরপর দেখলাম বাংলাদেশ সরকার এর প্রতিবাদ জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। আমি হোয়াইট হাউস এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট কাভার করেছি। এখানে যারা ব্রিফিং করেন তারা সাধারণত হট বাটন ইস্যু গুলোর উপর যে প্রশ্ন হবে সেটা চিন্তা করে সেই ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসেন। সেখানে আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা থাকে। স্বভাবতই তারা তাদের নিজের দেশের সম্পর্কে আমেরিকার মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন করেন। আমি লক্ষ্য করেছি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই spokesperson রা একটা গৎবাধা উত্তর দেন। কারণ এ ব্যাপারে তাদের কোন পূর্ব প্রস্তুতি থাকে না। বাংলাদেশ নিয়ে আমি যতবার প্রশ্ন করেছি ঠিক ততবারই এই গৎবাধা উত্তর পেয়েছি।
তুলসী গ্যাবার্ডের ব্রিফিং এর সময় ঠিক একই অবস্থা দেখলাম। তিনি ভারতীয় সাংবাদিকের ওই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য খুব একটা প্রস্তুত ছিলেন বলে মনে হলো না।
এখন প্রশ্ন হল এটা নিয়ে আমেরিকার গণমাধ্যম কি বলেছে? আজ সকালে নিউ ইয়র্ক টাইম সহ অন্যান্য পত্রপত্রিকায় তুলসী গ্যাবার্ডের বাংলাদেশ নিয়ে দেওয়া মন্তব্যের কোন কিছুই দেখলাম না। এর অর্থ হল আমেরিকার কাছে এই মুহূর্তে এটা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না।
কিন্তু যাদের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ তারাই সেটা নিয়ে হইচই শুরু করেছে। অর্থাৎ ভারত। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সরকার এবং গণমাধ্যম খুব জোরেশোরে এই সরকারের বিরোধিতা করে আসছে। এটা অবশ্য খুব বিস্ময়কর না। কারণ শেখ হাসিনা ছিল দিল্লির সেবাদাসী এবং তার আকস্মিক পতন ভারত সরকার এবং সাংবাদমাধ্যম কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।
আমি আগের কয়েকটা পোস্টে উল্লেখ করেছি যে এ ব্যাপারে ভারতকে বোঝানো বা তাদের প্রত্যেকটা বক্তব্যের জবাব দেওয়া শুধুমাত্র সময়ের অপচয়। তারা এভাবে ইউনুস সরকারকে নানাভাবে ব্যস্ত রাখছে যাতে করে বাংলাদেশে সত্যিকারের যে সংস্কারগুলো দরকার সেটাতে ডঃ ইউনুস বেশি সময় দিতে না পারেন।
কিন্তু মনে হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ভারতের এই কুটকৌশল টা ঠিক বুঝতে পারছেন না। তা না হলে তাদের প্রত্যেকটা প্রোপাগান্ডার উত্তর দিতে হবে কেন?
মনে হচ্ছে ভারতের এই ডিসইনফরমেশন ক্যাম্পেইন ডক্টর ইউনুসের জন্য একটা বড় থ্রেট। তা না হলে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে এটা কাউন্টার করার জন্য কেন তার সাহায্য চাইলেন।
বর্তমান আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ভারত একটা বড় সামরিক এবং অর্থনৈতিক শক্তি। এ কারণে তারা কাউকেই তেমন কোন পাত্তা দেয় না। জাতিসংঘ তাদের কাছে একটা অথর্ব প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কিছুই না। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করি ১৯৪৮ সাল থেকে জাতিসংঘ কাশ্মীরে প্লেবেসাইট করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। আজ পর্যন্ত সফল হয়নি শুধুমাত্র ভারতের একগুঁয়েমির কারণে। বিশ্বের বড় বড় শক্তি যেমন রাশিয়া, আমেরিকা, ইউরোপ কেউই নির্যাতিত কাশ্মীরীদের পাশে দাঁড়ায়নি। বছর দুয়েক আগে আমি কাশ্মীরের শ্রীনগরে জাতিসংঘের একটা অফিস দেখলাম। আমার এক সাংবাদিক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম তারা এখানে কি করে? বলল তারা কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছে। আমি হেসে বললাম জাতিসংঘের এই কর্মকর্তারা কি জানেনা যে এটা সম্ভব না? আমার বন্ধু হেসে বলল জানবে না কেন। তারপর বলল বিনা কাজে দশকের পর দশক এই কর্মকর্তারা উচ্চ বেতন ভাতা নিয়ে ভালোই আছে।
পরিশেষে আবারও বলি ভারতের ডিস ইনফর্মেশন ক্যাম্পেন কে কাউন্টার করার জন্য সময় নষ্ট না করে দেশের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব স্থিতিশীলতা আনা যায় সেটার চেষ্টা করা। একই সঙ্গে দেশের সার্বিক উন্নতি হলেই ভারতকে মোক্ষম জবাব দেওয়া হবে। সাথে সাথে তাদের হাসিনা পুনর্বাসন প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে যাবে।