Image description

Muhammad Miraj Mia (মুহাম্মদ মিরাজ মিয়া)


 
ওদের হাতের (ইন্টেরিম সরকারের) কোন সংস্কার আমরা মেনে নিবো না, সংস্কার করলেও আমরা ক্ষমতায় এসে চেঞ্জ করে ফেলবো"- মির্জা আব্বাসের এই দাম্ভিক বক্তব্য নতুন কিছু নয়। ইতিহাসের ধারাবাহিকতা মাত্র!
 
নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতনের পর ১৯৯১ সালের শাহাবুদ্দীন সরকার ২৯টি সংস্কার কমিটি গঠন করে। ৯১ এ বিএনপি ক্ষমতায় এসে ২৯টি সংস্কার কমিটির প্রস্তাবিত তেমন কোন সুপারিশই বাস্তবায়ন করেনি।
 
এমনকি এরশাদ পতনের পর তিন দলীয় যে রূপরেখা হয়েছিল, ১৯৯৪ সালের মাগুরার উপ ইলেকশনে বিএনপিই সেই রূপরেখা প্রথম ভায়ালেট করে।
 
তারপর নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে তৎকালীন বিরোধী দলগুলোর নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি করে। সেটি অগ্রাহ্য করে বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নিজেদের অধীনেই নির্বাচন করে।
 
তখন জামাত, আওয়ামী লীগ সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করে। গঠিত হয় জনতার মঞ্চ। আন্দোলনের তোপে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় বিএনপি।
 
তারপর বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসে ২০০১ সালে। ২০০১ সালের লতিফুর সরকারের সময়ে টিআইবি কে দিয়ে ১৬টি সংস্কার কমিটির সুপারিশ করা হয়। বিএনপি সেগুলোও অনুসরণ করেনি।
 
তারপর ২০০৪ সালে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে টার্গেট করে সংবিধানের বিতর্কিত চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিএনপি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অবসরের বয়স বৃদ্ধি করে নেয়। যাতে করে নিজেদের লোক তত্বাবধায়ক সরকারে বসাতে পারে।
 
এই বিতর্কিত সংশোধনীকে কেন্দ্র করেই লগি-বৈঠা আন্দোলন শুরু হয়। আওয়ামী লীগ লাশের উপর নৃত্য করার সুযোগ পায়। পরবর্তীতে এক এগারো সরকার আসে।
 
রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় টিকে থাকার এই অতীত ইতিহাস সম্পর্কে এই প্রজন্ম ভালো করেই জানে। সংস্কার মানি না, সংস্কার চেঞ্জ করে ফেলবো এসব নতুন ইতিহাস নয়। আগেও হয়েছে।
 
তাই ওদের হাতের সংস্কার আমরা মেনে নিবো না বলে মির্জা আব্বাস যে বক্তব্য দিসে, সেটা তাদের দলেরই ঐতিহাসিক রূপকে প্রতিফলিত করে।
 
জুলাই রক্তের উপর দাঁড়িয়ে নির্বাচন সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। সেই কমিশন নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রস্তাবনাও অলরেডি প্রধান উপদেষ্টার কাছে সাবমিট করেছে।
 
বিএনপি পন্থী নির্বাচন কমিশনার নাকি গতকাল জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা তারা অপোজ করে।
 
এই হচ্ছে সংস্কারের হালচাল। হুমকি দিয়ে এভাবে সংস্কার অপোজ করলে ৯১ এর বিএনপি, ২০০১ এর বিএনপি, আর ২০২৪ এর বিএনপির মধ্যে তো তেমন কোন উল্লেখযোগ্য তফাৎ রইলো না!
 
জুলাই যদি ব্যর্থ হয়, সংস্কারকে যদি রাজনৈতিক দলগুলো অপোজ করে তাহলে মনে রাইখেন ইতিহাস সচেতন এই প্রজন্ম আর কাউকে ছেড়ে দিবে না!
 
২৪ এর প্রজন্মকে নব্বইয়ে ফিরে যেতে বাধ্য করিয়েন না!