
রংপুর সদরের বালাকুমর এলাকার জামাল মিয়া এবার ২০ দোন (আট বিঘা) জমিতে আলু চাষ করেছেন। প্রতি দোনে তার খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মত। কিন্তু সে জমি থেকে তোলা আলু এখন বিক্রি করতে পারছেন ২৭-২৮ হাজার টাকায়। অর্থাৎ দোন প্রতি তার লোকসান হচ্ছে ১২ হাজার টাকা।
অন্যদিকে বেড়ে গেছে হিমাগারে আলু সংরক্ষণের খরচ।
তাই হতাশা প্রকাশ করে রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বালাকুমর এলাকার এই চাষি বলেন, “না পারি বাইরে রাখতে, না পারি স্টোরে রাখতে।এই আলু এখন গলার কাঁটা হইছে।”
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এবারে এক লাখ ১৯ হাজার ৮৩৯ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩০০ হেক্টর বেশি।
অন্যদিকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২৮ লাখ টন। যা গতবারের চেয়ে কয়েক হাজার টন বেশি।

এবার পরিবেশ অনুকূলে থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। মাঠে মাঠে আলু তোলাও শুরু হয়েছে। তবে সে আলু বিক্রি করতে গিয়ে হতাশ হচ্ছেন কৃষক।
তারা বলছেন, রংপুরে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ২৪ টাকা হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ টাকায়। ফলে চরম লোকসানে পড়ছেন তারা।
আলু চাষি জামাল মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১০ লাখ টাকা খরচ করে ২০ দোন জমিতে আলু আবাদ করেছেন তিনি। ফলন ভালো হলেও বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ তিনি।
খরচের অর্ধেকও কপালে জুটবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “দাম না পাওয়ায় কোল্ড স্টোরে রাখতে চাই, কিন্তু ওখানে আবার ৮ টাকা কেজি প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করছে। তাহলে আলুটা কীভাবে স্টোরে রাখব?”
আলু চাষি রহিম উদ্দিন বেপারী বলেন, “কি আর কবো তোক রে বাবা, গতবার একটু আলুর দাম পাইছি এবার তো একেবারেই দাম নাই। আমরা তো কৃষক মানুষ, কি করব যেদিকে যাই সেদিকে ক্ষতি আর ক্ষতি।

“আলুর বীজ কিনছি কেজি ১২০ টাকায়, লেবার খরচ করে লজ হইছে। সে হিসাবে কেজি প্রতি উৎপাদন খরচ প্রায় ২৪ টাকা। আর বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৬ টাকায়। ২৪ শতাংশ জমিতে প্রায় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা ঘাটতি।”
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “এত কষ্ট করে ফলন ফলানোর পর যদি আমাদের ঘাটতি হয় তাহলে আমরা বড় বিপদে পড়ছি। আমাদের দিকে নজর নাই কারোই।”
এদিকে এমন পরিস্থিতির জন্য সরকারের অপরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থাপনাকে দুষছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক পলাশ কান্তি নাগ বলেন, “বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা।
“জুলাই অভ্যুত্থানে সরকারের পরিবর্তন হলেও বাজারে তো ন্যূনতম কোনও পরিবর্তন হল না। আজ আলুর বাজারে যে ভয়াবহ দরপতন এ বিষয়ে মনে হচ্ছে সরকারের কোনও দায় নেই।”

তিনি বলেন, আলুর বাম্পার ফলন হওয়ার পরেও কিন্তু কৃষক উৎপাদন খরচ তুলতে পারছে না। তাহলে প্রতি বছর কৃষক যে সর্বস্বান্ত হচ্ছে আসলে এর দায় কার?”
তবে আলুর ন্যায্য দাম নিশ্চিতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণের কথা জানিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শাকিল আকতার বলেন, “যেহেতু এবার চাহিদার থেকে আলুর উৎপাদন বেশি। সেহেতু আমরা আমাদের রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের একটা সংযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আলু যেন দেশের বাইরে রপ্তানি করা যায়। সেটাও একটা পরিকল্পনা চলছে।”