
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) রেজিস্ট্রার অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার সুরাইয়া ইয়াসমিন কবিতার পদোন্নতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়োগ সংক্রান্ত আইনে পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে ঢাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে। তবে ঢাবি প্রশাসনের দাবি, এই আইনের পরিবর্তন নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী, প্রার্থীকে ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ/জিপিএ ৫ স্কেলে ন্যূনতম ৩.৫ এবং সিজিপিএ ৪ স্কেলে ন্যূনতম ৩.০০সহ স্নাতকোত্তর পাশ হতে হবে। শিক্ষা জীবনে কোনো স্তরেই কোনোভাবে ৩য় বিভাগ (জিপিএ/সিজিপিএ ১.০০ থেকে ২.০০ এর কম) গ্রহণযোগ্য নয়। প্রার্থীকে সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কাজে অফিসার পদে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে অভ্যন্তরীণ প্রার্থীর ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর যোগ্যতাসহ ১০ বছর অথবা স্নাতক (সম্মান) যোগ্যতাসহ ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে ছয় মাসের কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ কম্পিউটার পরিচালনায় দক্ষ হতে হবে।
ঢাবির সিন্ডিকেট সদস্য সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারির সিন্ডিকেট সভায় শূন্য পদে আবেদনের ক্ষেত্রে পূর্বের নিয়ম পরিবর্তন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ‘অভ্যন্তরীণ প্রার্থীর ক্ষেত্রে যেকোনো একটি শর্ত শিথিলযোগ্য’। এই ধরনের আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এবারই প্রথম।
একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, কবিতাকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দিতেই এই শর্ত শিথিল করা হয়েছে। শর্ত শিথিল করে কবিতা আবেদনের যোগ্য হওয়ার পরই রেজিস্ট্রার অফিসে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
এদিকে ডেপুটি রেজিস্ট্রারের এই পদে শুক্রবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বলা হয়, ‘বিধি মোতাবেক প্রদেয় অন্যান্য ভাতাসহ ৫০,০০০-৭১,২০০/- বেতন স্কেলে (জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারের অফিসের ১টি শূন্য ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদ পূরণের জন্য ৫০ টাকার বিনিময়ে রেজিস্ট্রারের দপ্তরে প্রাপ্তব্য নির্ধারিত ফরমে বাংলাদেশি স্থায়ী নাগরিকদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা যাচ্ছে। প্রার্থীকে ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ/জিপিএ ৫ স্কেলে ন্যূনতম ৩.৫ এবং সিজিপিএ ৪ স্কেলে ন্যূনতম ৩.০০সহ স্নাতকোত্তর পাশ হতে হবে। শিক্ষা জীবনে কোনো স্তরেই কোনোভাবে ৩য় বিভাগ (জিপিএ/সিজিপিএ ১.০০ থেকে ২.০০ এর কম) গ্রহণযোগ্য নয়। প্রার্থীকে সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কাজে অফিসার পদে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে অভ্যন্তরীণ প্রার্থীর ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর যোগ্যতাসহ ১০ বছর অথবা স্নাতক (সম্মান) যোগ্যতাসহ ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে ছয় মাসের কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ কম্পিউটার পরিচালনায় দক্ষ হতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য যোগ্যতার (যদি থাকে) সনদপত্রগুলো আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। গোপনীয় প্রতিবেদন সন্তোষজনক সাপেক্ষে চাকরির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। অভ্যন্তরীণ প্রার্থীর ক্ষেত্রে যেকোনো একটি শর্ত শিথিলযোগ্য। রেজিস্ট্রারের অনুকূলে প্রদেয় ১০০০/- (এক হাজার) টাকা মূল্যের পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট এবং সব সার্টিফিকেট ও প্রশংসাপত্রের সত্যায়িত প্রতিলিপিসহ ৮ সেট দরখাস্ত আগামী ১৬ এপ্রিলের মধ্যে রেজিস্ট্রারের (২০৩নং কক্ষে) কাছে পৌঁছাতে হবে। সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রার্থীদেরকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দরখাস্ত করতে হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডেপুটি রেজিস্ট্রার বলেন, কবিতা বর্তমানে যে পদে আছেন (সহকারী রেজিস্ট্রার) সেটি ৭ম গ্রেডের।তিনি সহকারী রেজিস্ট্রার হয়েছেন দুই বছরের কম। অথচ সেখান থেকে তিনি ডেপুটি রেজিস্ট্রার হতে যাচ্ছেন, যেটি চতুর্থ গ্রেডের চাকরি আর এটা হতে তার দরকার ৫ থেকে ৬ বছর। এ ছাড়া সব পরীক্ষায় কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণি থাকতে হবে, যা কবিতার নেই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত যদি নেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে সেটা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়নি। অনেক সময় নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে ফাঁকা পদ পূরণের জন্য শর্ত শিথিল করে নিয়োগ দেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে টার্গেট করে এই সিদ্ধান্ত (সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত) নেওয়া হয়েছে, এটা আমি মনে করতে পারছি না। অনেকগুলো জেনারেল নীতি আছে। এই সিদ্ধান্তও একটি জেনারেল নীতিতে এসেছে। কাউকে ব্যক্তিগতভাবে টার্গেট করে করা হয়েছে বলে আমি জানি না।’