
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সহজ সরল বেওয়ারিস মেয়েটির বাড়ি কোথায়, কোথায় থেকে এসেছে কোন কিছুই বলতে পারছে না। বাস্তবিক নিয়মে পৃথিবীতে পাগলের ঠিকানা রাস্তা, হাট বাজার। পাগল পথে পথে ঘুরে বেড়ায় এটাই তার স্বভাব।
কিন্তু পাগল হলেও নিজের গর্ভের সন্তানকে ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ করে সদ্য প্রসব করেছেন। বুধবার (১২ মার্চ) দিবাগত রাতে বেওয়ারিস পাগলি আকলিমা কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
বর্তমানে শিশুটি সুস্থ আছে। তবে এর পেছনে কৃতিত্ব আশ্রয়দাতা বিধবা আয়েশা বেগম এর। একজন পাগলীকে শত কষ্টের মাঝেও আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। প্রতিদিন অস্বাভাবিক আচরণের করত পাগলীটি। মারধর করত আয়েশা বেগমকে। কি মানবিক মানুষ নিজের কেউ না হওয়ার পরেও পাগলীর মারধর ও অস্বাভাবিক আচরণ মেনে নিয়েছেন।
আজ পরিচয়হীন অজ্ঞাত আকলিমা নামে পাগলীটি কন্যা সন্তানের মা হয়েছে, বাবা হয়নি কেউ। ফুটফুটে কন্যা সন্তান। সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটির দুনিয়া সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই, তার পিতাকে যেটাও জানা নেই। আর ভবঘুরে পাগলীটিও বলতে পারছে না তার গর্ভের সন্তান কার। কিভাবে বলবে সেও তো দিন দুনিয়ায় খবর নেই। তবে এতটুকুই বলতে পারে তার নাম আকলিমা আক্তার।
তিনি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের ঘোষঘর গ্রামের আয়েশা বেগম। নিজেও ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। স্বামী পরিত্যক্ত থাকেন বাবার বাড়িতে। আয়েশা বেগম উপজেলার ঘোষঘর গ্রামের (জব্বার আলী মুন্সি বাড়ির) মৃত আব্দুল হাকিম মুন্সির মেয়ে। ৩-৪ মাস আগে সরকারি অনুদানের কম্বল আনতে গিয়ে পথে পাগলের সাথে দেখা। রাস্তায় মাটি খাচ্ছে দেখে তিনি তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। এলাকার মানুষ বিভিন্ন কথা বললেও নিজের মানবিক দৃষ্টিকোণ দেখে দায়িত্ব নেন পাগলীটির।
আয়েশা বেগম জানান, তার স্বামী একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করেন। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি পাগলি মেয়েটিকে আশ্রয় দেন। প্রতিদিন তাকে কিল, ঘুসি ও ধাপ্পর, মারধর করত পাগলি আকলিমা।
তিনি আরো জানান, আজ অজ্ঞাত পরিচয়হীন পাগলি মেয়েটি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে। এখন আমি বিপাকে আছি পাগলি ও তার সন্তান নিয়ে। আমি চাই সরকার তার দায়িত্ব গ্রহণ করুক।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল হাসনাত খান বলেন, আগে থেকেই উপজেলা প্রশাসন পাগলীর আশ্রয়দাতা আয়েশাকে সহযোগিতা করছে। আজ সাংবাদিক এর মাধ্যমে বেওয়ারিস পাগলীর কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার খবর পেয়েছি। প্রশাসনের পক্ষে থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান ও শিশুটির দায়িত্ব গ্রহণ করা হবে।