
গাড়ি কেনার কথা বলে ‘টেস্ট ড্রাইভ’ বা পরীক্ষামূলকভাবে গাড়িটি চালিয়ে দেখতে চান ক্রেতা। কিছুক্ষণ পর গাড়িতে থাকা ব্যবসায়ীর প্রতিনিধির মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গাড়িটি নিয়ে চম্পট দেয় ছিনতাইকারী চক্র। টয়োটা হ্যারিয়ার (হাইব্রিড) ব্র্যান্ডের এ গাড়ির দাম আনুমানিক মূল্য প্রায় ৮৫ লাখ টাকা।
শনিবার (৮ মার্চ) রাত সোয়া আটটার পর রাজধানীর শাহবাগ মেট্রো স্টেশনের নিচ থেকে গাড়িটি ছিনতাই করা হয়।
শাহবাগ থানা সূত্রে জানা গেছে, গাড়ি আমদানি ও বিক্রির ব্যবসা করেন মাশরুর নাঈর। তার প্রতিষ্ঠান হুইল ডিলস থেকে একটি জিপগাড়ি কেনার জন্য যোগাযোগ করেন এক ব্যক্তি।
পরে গাড়ি দেখতে এসে ‘টেস্ট ড্রাইভ’ বা পরীক্ষামূলকভাবে গাড়িটি চালিয়ে দেখতে চান তিনি। ক্রেতার চাওয়া অনুযায়ী গাড়িটি চালাতে দেওয়া হয় ওই ব্যক্তিকে। এরপর অস্ত্র ঠেকিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায় ছিনতাইকারী চক্র।
এ ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর গাড়ির মালিকের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে এ ঘটনায় মামলা না করতে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট না দিতে কয়েকটি বার্তা পাঠায় ছিনতাইকারীরা। আরেক বার্তায় ছিনতাইকারী জানায়, ‘ভাই, গাড়ি পেয়ে যাবেন। এজন্য ৭ দিন সময় লাগবে।’
এ ঘটনায় রোববার (৯ মার্চ) ডিএমপির শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছেন ভুক্তভোগী গাড়ি ব্যবসায়ী মাশরুর নাঈর। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মুনসুর বলেন, গাড়িটি উদ্ধার ও চক্রটি শনাক্তে কাজ চলছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ৭ মার্চ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এক ব্যক্তি গাড়ি ব্যবসায়ী মাশরুর নাঈরকে কল করে টয়োটা হ্যারিয়ার (হাইব্রিড) জিপগাড়ি কিনতে চান। কথাবার্তার একপর্যায়ে ওই ব্যক্তিকে নাঈর তার বাসার গ্যারেজে গাড়ি দেখতে যেতে বলেন। পরদিন ৮ মার্চ রাত পৌনে আটটার দিকে ওই ব্যক্তি নাঈরের পরীবাগের বাসার নিচের গ্যারেজে আসেন। এসময় গাড়িটির বিষয়ে জানতে ওই ব্যক্তিকে চাচাতো ভাই মো. পিয়াল মাহমুদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন নাঈর।
কথাবার্তার একপর্যায়ে গাড়িটি ‘টেস্ট ড্রাইভের’ জন্য চান অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তি। পরে তিনি গাড়িটির চালকের আসনে বসেন। এসময় নাঈরের চাচাতো ভাই পিয়ালও গাড়িতে ওঠেন। তারা পরীবাগ মোড়ে গেলে গাড়ি কিনতে আসা ব্যক্তির সহকর্মী পরিচয়ে আরও দুই ব্যক্তি গাড়িতে ওঠেন। রাত সোয়া আটটার পর পিয়ালের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মাশরুর নাঈর জানান, বিক্রির জন্য রাখা গাড়িতে সবসময় তেল কম রাখতেন। কিন্তু গাড়ি কিনতে আসা ব্যক্তিরা গাড়িতে আরও তেল নিতে চান। তখন তার চাচাতো ভাই তেল নিতে না করেন। নামাজে যাবেন উল্লেখ করে দ্রুত গাড়িটি দেখাতে বলেন। পরে তারা গাড়িটি নিয়ে টিএসসি ঘুরে শাহবাগ মোড়ে এসে মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে থামেন। সেখানে অস্ত্র ঠেকিয়ে তার চাচাতো ভাইকে গাড়ি থেকে নামিয়ে পালিয়ে যান।
মিন্টো রোড হয়ে যখন ছিনতাইকারী চক্রটি পালাচ্ছিল, তখন একটি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল নিয়ে তাদের পিছু নেন পিয়াল মাহমুদ।
মাশরুর নাঈর আরও জানান, পিয়াল তেজগাঁওয়ের একটি পেট্রলপাম্প গিয়ে তেল নেওয়া অবস্থায় গাড়িটিকে শনাক্ত করেন। পাম্পের লোকজনকেও বলতে থাকেন যে গাড়িটি ছিনতাই করা হয়েছে। পাশে থাকা পাঁচজন পুলিশ সদস্যকেও বিষয়টি জানান। তবে তারা তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গাড়ি নিয়ে সরে পড়ে চক্রটি।