
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের উদ্দেশ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বা আইসিটির আসামিপক্ষের ডিফেন্স আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেন। আমার দেশ-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমের নানা দিক তুলে ধরেছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দিক নিয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন। জানিয়েছেন এ পর্যন্ত চারশোর মতো অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে এসেছে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা করে ১৮-১৯টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা হয়েছে দুটি মামলা। একটি হচ্ছে গণহত্যার অভিযোগে।
অন্যটি হচ্ছে তার শাসন আমলে ১৫ বছরে চলমান গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে। তিনি আরো জানিয়েছেন, এ মাসের মধ্যেই কয়েকটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের সাক্ষাতকার নিয়েছেন আমার দেশ এর বিশেষ প্রতিনিধি অলিউল্লাহ নোমান।
আমার দেশ : নতুন সরকার এসে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের পর প্রায় ছয় মাস হয়ে গেছে। এই ছয় মাসে মামলার সংখ্যা কত?
তাজুল ইসলাম : সর্বশেষ আমার জানা মতে, ১৯টির মতো মামলা করেছি কোর্টে। ট্রাইব্যুনালে মামলার সংখ্যাটা নির্ধারণ করে ভিন্নভাবে। অভিযোগের সংখ্যা হয়তো চারশোর কাছাকাছি। কিন্তু আমরা সেগুলো থেকে বাছাই করে মামলা করি। আপনারা জানেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কাজের ধরনটা ভিন্ন। সে কারণেই যেমন, শেখ হাসিনার জন্য একটি মামলা করেছি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের জন্য একটি মামলা করেছি, এমপিদের জন্য একটি মামলা করেছি, পুলিশের যারা অভিযুক্ত তাদের বিরুদ্ধে একটা মামলা করেছি। এভাবে ভাগ ভাগ করে ঘটনাকেন্দ্রিক মামলাগুলো করা হয়েছে।
আমার দেশ : সব মিলিয়ে কটি মামলা করতে পেরেছেন?
তাজুল ইসলাম : সব মিলিয়ে ১৮-১৯টি মামলা এখন পর্যন্ত দাখিল করা হয়েছে।
আমার দেশ : মামলাগুলোর এখন পর্যন্ত অগ্রগতি কেমন?
তাজুল ইসলাম : সবগুলো মামলাই তদন্তপর্যায়ে আছে। কয়েকটি মামলায় যারা প্রধান আসামি, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
আমার দেশ : তদন্ত কতটুকু এগিয়েছে? কত দিন লাগতে পারে তদন্ত শেষ হতে?
তাজুল ইসলাম : তদন্তের বিষয়ে যেটা বলব এটা হচ্ছে, ক্রাইম অ্যাগেইনিস্ট হিউম্যানিটি, যা সবচেয়ে জটিল একটা বিষয় বা সবচেয়ে জটিল তদন্ত এর মধ্যে ইনভলব। বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে দেশের সর্বত্র। অর্থাৎ ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে। এতে দুই হাজারের বেশি লোক শহীদ হয়েছেন। ২৫ থেকে ৫০ হাজারের মতো লোক আহত হয়েছেন। এখানে যারা অপরাধগুলো সংঘটিত করেছেন, তাদের সংখ্যাও হাজার হাজার। এই বিবেচনায় এ মামলাগুলোর তদন্ত অনেক সময়সাপেক্ষ। কিন্তু তার মধ্যেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যারা সুপিরিয়র কমান্ডার ছিলেন, তাদের মামলাগুলো এগিয়ে নিয়ে এসেছি। সেদিক থেকে তদন্ত রিপোর্ট আমরা খুব সহসাই পেয়ে যাব বলে আশা করছি।
আমার দেশ : সহসাই বলতে কত দিন লাগতে পারে?
তাজুল ইসলাম : তদন্ত সংস্থা যে গতিতে কাজ করছে, এ মাসের মধ্যেই আমরা বেশ কয়েকটা মামলার তদন্ত রিপোর্ট পেয়ে যাব বলে আশা করছি।
আমার দেশ : তদন্ত রিপোর্টের পর বিচার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আপনাদের কেমন প্রস্তুতি রয়েছে?
তাজুল ইসলাম : তদন্ত রিপোর্টপ্রাপ্তির পর সেগুলো বিশ্লেষণ করে ফরমাল চার্জ আকারে দাখিল করা হবে। ফরমাল চার্জ দাখিলের পর ট্রাইব্যুনাল সেটা এক্সেপ্ট করলে মূল মামলা ট্রায়ালের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক শুরু হয়ে যাবে।
আমার দেশ : আপনি সুপিরিয়র কমান্ডের কথা বলছিলেন। শেখ হাসিনা তো সুপিরিয়র কমান্ডের প্রধান বলা যায়। তার বিরুদ্ধে কতটি মামলা আপনারা প্রস্তুতি নিয়েছেন?
তাজুল ইসলাম : তার বিরুদ্ধে মূলত আমরা দুটি মামলা করেছি। প্রত্যেকটি ঘটনারই নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা। তার যেহেতু সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটি আছে এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর পদ ব্যবহার করে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে একটা অপরাধী সংগঠনে রূপান্তরিত করেছিলেন। ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তাদের নির্মূল করে দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। তার নির্দেশে সারা দেশে ওয়াইড স্পেড এবং সিস্টেমেটিক আক্রমণ হয়েছে ছাত্র-জনতার ওপরে। সে কারণে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে একটি মামলা করা হয়েছে। আরেকটি মামলা করা হয়েছে গত ১৫ বছরে যেসব গুম, ক্রসফায়ারে হত্যা বা এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং ও টর্চার হয়েছে, এই বিষয়গুলোর জন্য। মোটা দাগে বলা যায়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি মামলা এখানে চলমান আছে। একটা জুলাই-আগস্টে গণহত্যার জন্য, আরেকটা তার শাসনামলে গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে।
আমার দেশ : কতগুলো গুমের ঘটনা আপনারা নিশ্চিত হতে পেরেছেন?
তাজুল ইসলাম : আমরা তো গুমের তদন্ত একটু দেরিতে শুরু করেছি। ইতোমধ্যে গুমের বিষয়ে ৩০ থেকে ৪০টি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার বাইরেও আমাদের তদন্ত সংস্থার নলেজে কোনোভাবে যদি আসে এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, তাহলে এ বিষয়ে তদন্ত করতে পারবে। গুমের বিষয়ে জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইট্স ওয়াচসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা রিপোর্ট দিয়েছে। গুমের বিষয়ে যে ঘটনাগুলো আমাদের নলেজে আসবে, সেগুলো অভিযোগ আকারে আসুক বা না আসুক, আমরা তদন্ত করব।
আমার দেশ : জাতিসংঘের রিপোর্টের কথা আপনি বলছিলেন। এই রিপোর্ট কি আপনাদের তদন্ত এবং বিচারে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো কাজে আসবে?
তাজুল ইসলাম : জাতিসংঘের রিপোর্টটা খুবই চমৎকার একটি দলিল হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কারণ, জাতিসংঘ গোটা দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সংগঠন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারা কোনো পক্ষ নয়। তারা ভায়াস নয়। জাতিসংঘের তদন্ত সংস্থা এখানে এসে তাদের তদন্তের মাধ্যমে যে প্রতিবেদনটা তৈরি করেছে, এটা অকাট্য দলিল হিসেবে শেখ হাসিনা এবং তার নির্দেশে যারা হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে।
জাতিসংঘের রিপোর্টে কিন্তু ক্লিয়ারলি বলা হয়েছে, আক্রমণটা হয়েছিল ওয়াইড স্পেড এবং সিস্টেমেটিক। এটা ক্রাইমস অ্যাগেইনিস্ট হিউম্যানিটি হওয়ার জন্য একটা আবশ্যকীয় উপাদান। জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠান যখন বলছে, এটা ওয়াইড স্পেড এবং সিস্টেমেটিক আক্রমণ হয়েছে, তখন ইন্টারন্যাশনালি আমাদের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে প্রচেষ্টা চালাবে অতীত সরকারের দোসররা, তাদের বিরুদ্ধে একটা শক্ত জবাব হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে এই রিপোর্ট। এই রিপোর্ট বিচারের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নেও আমাদের সাহায্য করবে বলে বিশ্বাস করি।
আমার দেশ : গুমের বিষয়ে সুপিরিয়র কমান্ড ছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু শেখ হাসিনার নির্দেশনা যারা বাস্তবায়ন করেছেন, যেমন র্যাব, পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, তাদের আপনারা কীভাবে চিহ্নিত করবেন? বা চিহ্নিত করতে পেরেছেন কি না?
তাজুল ইসলাম : তদন্ত চলমান অবস্থায় আমরা অনেককেই ফাইন্ডআউট করেছি। যারা গুমের শিকার হয়ে ফেরত এসেছেন, যারা কারাগারে আটক ছিলেন, যারা বেঁচে ফিরেছেন, তারা এসে বলেছেন, তাদের সঙ্গে কারা কী আচরণ করেছে। তারা অনেককেই আইডেন্টিফাই করতে পেরেছেন। আবার কিছু যেমন ধরেন, আইডেন্টিফিকেশন সরাসরি করার প্রয়োজন নেই। আমরা যদি বুঝতে পারি র্যাব তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তাহলে র্যাবের কোন অফিস, ওই সময়ে কে দায়িত্বে ছিলেন এবং কোন ইউনিট তাকে তুলে নিয়েছিল, ইউনিটের দায়িত্বে কে ছিলেন, এগুলো যখন আমরা বের করব, তখন সহজে বের করা যাবে ঘটনার সঙ্গে কে কে যুক্ত ছিলেন।
বিভিন্ন গুমকেন্দ্র বা টর্চার সেল রয়েছে। ভিকটিম যদি আইডেন্টিফাই করতে পারেন, যেমন-আমি টিএফআই সেলে বন্দি ছিলাম, তখন সহজেই বের করা যাবে ওই সময় কারা দায়িত্বে ছিলেন। কারা কারা এই দায়িত্ব পালন করেছেন, এগুলো ধরা সহজ হয়ে যাবে। তখন তাদের এ মামলায় সহজেই আসামি হিসেবে পাওয়া যাবে। সরাসরি ভিকটিমদের আইডেন্টিফিকেশন, তারপর পরিস্থিতি ও ঘটনার পর্যবেক্ষণে পাওয়া সাক্ষ্য এবং অফিশিয়াল ডকুমেন্টস থেকে প্রমাণ করা যাবে কারা জড়িত ছিলেন।
আমার দেশ : অনেকেই বলছেন, আইজিপি শহিদুল হক, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানসহ অনেককেই আপনারা ট্রাইব্যুনালে কোনো মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করছেন না। এটা কারণ কী?
তাজুল ইসলাম : ফারুক খান অলরেডি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে মামলায় অন্তর্ভুক্ত আসামি হিসেবে আছেন। শহিদুল হক শাপলা চত্বরের ঘটনার সময় তিনি আইজিপি ছিলেন। সে ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে অলরেডি প্রসিড হচ্ছে। তিনি র্যাবের মহাপরিচালক এবং আইজিপি থাকা অবস্থায় যে গুমের ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলোতেও তিনি আসামি হবেন। সুতরাং ওনার বিষয়ে তদন্ত চলমান আছে। কেউ রেহাই পাবেন বলে আমরা মনে করি না।
আমার দেশ : একটি পত্রিকায় দেখলাম, জামায়াতে ইসলামী নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মামলায় আপিল বিভাগে শুনানিতে ছিলেন। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, আপনার এই উপস্থিতি কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট কি না? এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
তাজুল ইসলাম : আওয়ামী মিডিয়া সিন্ডিকেট একটা অপপ্রচারের সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মধ্যে লিপ্ত আছে বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি। সেটার অংশ হিসেবেই প্রথম আলো পত্রিকায় একটা মন্তব্য প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। যেখানে তারা বলার চেষ্টা করেছেন, আমি যেহেতু এ টি এম আজহারুল ইসলামের মামলায় তার পক্ষে ট্রাইব্যুনালে আইনজীবী ছিলাম, আজকে চিফ প্রসিকিউটর হওয়ার পর এই মামলায় আপিল বিভাগে থাকতে পারি কি না-এটা একটা প্রশ্ন তুলেছেন তারা। দ্বিতীয় প্রশ্ন তুলেছেন, সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ চলমান আছে, সেই রিভিউতে আমি শুনানি করতে গিয়েছি কি না, সেটা একটা প্রশ্ন। আমি খুব ক্লিয়ারলি বলেছি, সুপ্রিম কোর্টে যখন আজহারুল ইসলাম সাহেবের আবেদন পেন্ডিং রয়েছে, সেই রিভিউ শুনানিতে আমি অংশগ্রহণ করিনি।
আমার দেশ : তাহলে সেদিন আপনি আপিল বিভাগে উপস্থিত ছিলেন কেন?
তাজুল ইসলাম : আমি কেন অংশগ্রহণ করতে পারব না, এ মামলায় সেটা সেদিন আদালতকে জানাতেই উপস্থিত ছিলাম। আমি সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়িয়ে বলেছি, যেহেতু এই মামলায় আমি একসময় আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলাম, এখন আমি চিফ প্রসিকিউটর। তাই এই মামলায় শুনানিতে অংশ নিতে পারছি না। যদিও অফিশিয়ালি ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর এই মামলার রেসপন্ডেন্ট। চিফ প্রসিকিউটরের অফিস থেকেই রিভিউর বিরুদ্ধে আর্গুমেন্ট করতে হবে। সে ক্ষেত্রে অফিশিয়াল পজিশন যাই থাকুক, ব্যক্তিগতভাবে আমি এই মামলায় শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে পারি না এবং করিনি। আমাদের ট্রাইব্যুনালের একজন প্রসিকিউটর গাজী তামিম হাসান এই মামলার শুনানিতে অংশ নিয়েছেন।
তার আর্গুমেন্ট চলমান। সামনে হয়তো তিনি আরো করবেন। এটা জানা সত্ত্বেও তারা প্রশ্ন তুলেছে, আমি যেহেতু আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলাম, আমি কীভাবে রিভিউ শুনানিতে অংশ নিয়েছি! বলার চেষ্টা করছেন, এখানে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট রয়েছে। আমি বারবার বলার চেষ্টা করেছি, আমি শুনানিতে অংশগ্রহণ করছি না। আর যেহেতু আমি শুনানিতে অংশগ্রহণ করছি না, আমার অফিশিয়াল দায়িত্বের কারণেই এটা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হবে না। এটা বিশ্বজুড়েই একটা বাস্তব জিনিস। ধরুন, যিনি আজকে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল আছেন, তিনি তো অনেক মানুষের মামলা পরিচালনা করেছেন। তার ক্লায়েন্টের মামলাগুলো এখনো হয়তো হাইকোর্ট বিভাগ এবং সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
তাই বলে কি তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না? অ্যাটর্নি জেনারেল তো বাংলাদেশের সব মামলায় রাষ্ট্রের পক্ষে আইনজীবী। আমার পজিশনও একই। আমার পজিশন যেহেতু অ্যাটর্নি জেনারেলের, সে কারণে অফিশিয়ালি এ টি এম আজহারুল ইসলামের মামলার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি এই মামলার আইনজীবী ছিলাম বলেই দাঁড়াতে পারব না। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এ মামলায় অংশগ্রহণ করছি না। যারা প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন, তাদের মতলব আসলে বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং বিচার যাতে না হয় সেই চেষ্টা করা। আমরা তাদের সেই সুযোগটা দেব না।
আমার দেশ : গাজী তামিম তো আপনার প্রসিকিউশন টিমের সদস্য। তিনি কীভাবে আজহারুল ইসলামের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে অংশ নেবেন?
তাজুল ইসলাম : তামিম সাহেব অংশ নিতে পারবেন। কারণ, তিনি কখনোই এ টি এম আজহারুল ইসলামের মামলায় সম্পৃক্ত ছিলেন না। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কোনো মামলার সঙ্গে যদি সম্পৃক্ততা না থাকেন, কোনো মামলায় যদি অংশগ্রহণ করে না থাকেন, তাহলে তিনি যেকোনো পক্ষে দাঁড়াতে পারবেন। সে ব্যাপারে আইনগত কোনো সমস্যা নেই। বার কাউন্সিলের যে নীতিমালা এবং প্রফেশনাল যে নিয়মকানুন রয়েছে, সে অনুযায়ী তার দাঁড়াতে কোনো বাধা নেই।
আমার দেশ : ট্রাইব্যুনালের প্রতি তো সাধারণ মানুষের অনেক প্রত্যাশা। ১৫ বছরের গুম-খুন এবং সর্বশেষ জুলাই-আগস্টের গণহত্যা। আপনার কথা অনুযায়ী বুঝলাম এখনো তদন্তাধীন রয়েছে সবকিছু। কবে নাগাদ বিচার শুরু হবে বলে আপনি ধারণা করছেন?
তাজুল ইসলাম : সুনির্দিষ্টভাবে বিচার শুরুর দিন-তারিখ ঘোষণা করা চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে আমার উচিত নয়। সবকিছু দেখে বিচার শুরুর তারিখ নির্ধারণ করবে ট্রাইব্যুনাল। এটা আমি করতেও পারি না। আমি যেটা করতে পারি আমার তদন্ত সংস্থার অগ্রগতি কী আছে এবং অগ্রগতি যখন বুঝতে পারব এ সময় যদি তদন্ত রিপোর্ট পাই, তাহলে কত দিনের মধ্যে আমি ফর্মাল চার্জ আদালতে উপস্থাপন করতে পারব।
আমার দেশ : আপনি শুরুতে বলছিলেন এ মাসেই তদন্ত রিপোর্ট পাবেন। এ মাসে কয়টা তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?
তাজুল ইসলাম : এ মাসে কয়টা তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যাবে সেটা স্পষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে এ মাসে যে কয়টা তদন্ত রিপোর্টই পাব, সেগুলো পর্যালোচনা শেষে আগামী মাসেই ফর্মাল চার্জ দাখিল করা সম্ভব হবে। ফর্মাল চার্জ দাখিল হওয়ার পরপরই বিচার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে যাবে।
সুতরাং যদি মার্চ মাসের শেষেও কোনো ফর্মাল রিপোর্ট তদন্ত সংস্থা দিতে পারে, এপ্রিল মাসের মধ্যেই আমরা চার্জশিট দাখিল করতে পারব। ফর্মাল চার্জ দাখিল হলেই বলা যাবে বিচারের কাজটা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে গেল। এ জন্য দেশবাসীকে বলব, মানবতাবিরোধী অপরাধ যেটা এত বিস্তৃত এবং এত বড় স্কেলে সংঘটিত হয়েছে, ছয় মাস সময় এটা তদন্তের জন্য যথেষ্ট নয়। তারপরও প্রায়োরিটি দিয়ে এবং স্পেশালি নিয়ে তদন্তগুলো অলমোস্ট অনেকগুলো কেইসে অগ্রসর হয়েছি।
সবগুলো কেইসে সম্ভব নয়। কারণ, সারা বাংলাদেশ সব জায়গায় অপরাধগুলো হয়েছে। এগুলো কম্পাইল করে তদন্তকাজ যেভাবে চলমান থাকার কথা, সেটা অব্যাহত আছে। তবে মার্চ মাস থেকে যেহেতু কয়েকটি মামলার তদন্ত রিপোর্ট পাব, এপ্রিল-মে থেকে ফুলস্কেলে বিচারকাজ শুরু হবে বলে আশা করছি। তবে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো টাইমলাইন বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আমার দেশ : আপনি তো প্রসিকিউশনের প্রধান হিসেবে তদন্ত সংস্থার তদারকি করেন। তদন্ত সংস্থা প্রসিকিউশনের অধীনেই কাজ করে। এ পর্যন্ত আপনার পর্যালোচনা থাকে কতটুকু আশাবাদী মার্চ মাসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার বিষয়ে?
তাজুল ইসলাম : কয়েকটা মামলাতেই মার্চ মাসে রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি। আশা করছি, কয়েকটা মামলার তদন্ত রিপোর্ট মার্চ মাসেই পেয়ে যাব।
আমার দেশ : আপনি যে মামলাগুলোর তদন্ত রিপোর্ট পেয়ে যাবেন বলে আশা করছেন, সেগুলোর মধ্যে কি শেখ হাসিনার মামলাও আছে?
তাজুল ইসলাম : শেখ হাসিনার একটা মামলা থাকবে। গণহত্যার রিলেটেড একটা মামলা থাকবে বলে আশা করছি।
আমার দেশ : অন্য অপরাধীদের বিষয়ে অগ্রগতি কতটুকু।
তাজুল ইসলাম : সবগুলোই তদন্ত চলমান আছে। আমরা ব্যক্তির জন্য আলাদা আলাদা তদন্ত করছি। সে জন্য একটু সময় লাগছে। প্রত্যেকের ব্যাপারে আলাদা আলাদা তদন্ত করতে হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ ডকুমেন্ট। এখানে শত শত ভিডিও ফুটেজ আছে। প্রত্যক্ষদর্শী লাইভ উইটনেস আছে হাজার হাজার। বিভিন্ন সংস্থার ডকুমেন্টারি আছে। এর বাইরে সরকারি দলিলপত্র আছে। বিভিন্ন ডিজিটাল এভিডেন্স আছে। কলরেকর্ড আছে।
এই সবকিছু একসঙ্গে করে এগুলো বিচারের উপযোগী করে উপস্থাপন করা একটু সময়সাপেক্ষ। এটাতে তাড়াহুড়া করা ঠিক হবে না। যেমনÑএক হাজার ভিডিও ফুটেজ যাচাই করতে হলে, প্রথমে দেখতে হচ্ছে কোন ভিডিওটা কত তারিখের। কোন জায়গায় ভিডিওটা করা হয়েছিল। কে ভিডিও করেছিলেন। জিও ডাটা, মেটাডাটা ঠিক আছে কি না। এগুলো ফরেনসিক করা। এসব যাচাই-বাছাইয়ের পর উপযোগী করে একটা ফরমেশনের মধ্যে নিয়ে আসা। এগুলোতে এক্সপার্ট লাগে। এ কাজগুলো সময়সাপেক্ষ। এগুলো তাড়াহুড়া করে হয় না। এ কাজগুলো করতেই অনেক সময় লাগছে। এগুলো শেষ হলেই তদন্ত শেষ হবে এবং তদন্ত-পরবর্তী আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে।
আমার দেশ : আমরা কি আশা করতে পারি, এ বছরের মধ্যেই দু-একটি মামলার বিচার শেষ হবে?
তাজুল ইসলাম : এটা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। আমার পক্ষ থেকে বললে অন্য বিতর্ক তৈরি হবে। তবে এটা বলা যায়, শুরু করা যাবে বিচার। আর শুরু করা গেলে সময় বেশি লাগবে না। যেহেতু এ মামলার বিষয়ে আইনে বলা আছে বিচারকাজ বিরতি ছাড়া কন্টিনিউয়াসলি চলবে। বিরতি ছাড়া যদি বিচার চলে, অবশ্যই এ বছরের মধ্যে বিচার হতেই পারে এবং হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটা বলা যায়, আমাদের দিক থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে।
আমার দেশ : দণ্ডবিধির ৩৪ ধারায় বলা আছে কম ইনটেনশনের বিষয়ে। কেউ অপরাধের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না। কিন্তু ঘটনা সংঘটিত করার বিষয়ে উৎসাহিত করেছেন বা সম্মতি জানিয়েছেন। শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ চলমান অবস্থায় অনেক অর্গানাইজেশন তার সঙ্গে দেখা করে উৎসাহ দিয়েছেন। গণহত্যাকে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এ ধরনের ব্যক্তিদেরও কি অপরাধের ট্রাইব্যুনালে ৩৪ ধারা অনুযায়ী আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে?
তাজুল ইসলাম : অবশ্যই। এটাকে বলে জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইস। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে যারা যুক্ত ছিলেন, তারা প্রত্যেকেই ইক্যুয়ালি লায়াবল হবেন এবং সে আইন এখানেও প্রযোজ্য। এখানে দণ্ডবিধির ধারা উল্লেখ করা হয়নি। তবে আমাদের যে আইন আছে, সে আইনের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে এবং জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইস রোমবিধি থেকে ইন্টারন্যাশনালি স্বীকৃত। রোম বিধি অনুযায়ী একজন ব্যক্তির সঙ্গে যদি সবাই মিলে কোনো অপরাধ করেন, তবে সবাই ইক্যুয়ালি লায়াবল হবেন।
আমার দেশ : গণহত্যা চলাকালে বিভিন্ন অর্গানাইজেশন গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গেছে। তারা শেখ হাসিনার গণহত্যাকে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দিতেও দেখা গেছে সেখানে। তাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন সমর্থন জানিয়ে। তারাও কি সমান অপরাধী?
তাজুল ইসলাম : যারা যারা গণহত্যায় প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন বা উৎসাহিত করেছেন, গণহত্যাকে যারা উসকানি দিয়েছেন এবং মহৎ কাজ বলেছিলেন, তাদের সবাই এ মামলায় আসামি হিসেবে আসবে। তারা বিচারের আওতায় আসবেন ধীরে ধীরে।
আমার দেশ : আপনি এতক্ষণ যেসব কাজের কথা বললেন, এই কাজগুলো করতে গিয়ে, বিশেষ করে তদন্তের ক্ষেত্রে আপনি কি কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন?
তাজুল ইসলাম : সরকারের তরফ থেকে সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। তবে আমাদের তদন্ত সংস্থার যে টেকনিক্যাল নলেজ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপারে যে ধরনের সাপোর্ট দরকার, সেই টেকনোলজিগুলো তাদের কাছে নেই। তারা ট্রেডিশনাল পুলিশ বাহিনী থেকে এসেছেন। ফলে ডিজিটাল তদন্ত করা, ফরেনসিক করা, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম অ্যাক্ট ১৯৭৩ যেটা আন্তর্জাতিক ব্যাপার, এ বিষয়গুলো তাদের বোঝাতে আমাদের সময় লেগেছে। কারণ, তারা সাধারণত আমাদের ফৌজদারি দণ্ডবিধির মামলাগুলো তদন্ত করে অভ্যস্ত। তাদের যখন ক্রাইম অ্যাগেইনিস্ট হিউম্যানিটি বোঝানো হয়, এটা আত্মস্থ করতে তাদের জন্য একটু সমস্যা হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে এই টেকনিক্যাল সাপোর্টের জায়গায় আমাদের ঘাটতি রয়েছে।
দ্বিতীয় হচ্ছে, বিশেষ করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার ব্যাপারে। যেহেতু রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল, সেখানে পুলিশকে দিয়েই গ্রেপ্তার করতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারের জায়গায় খানিকটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পুলিশ সবাইকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না। পুলিশ বাহিনী নিজেরাই আতঙ্কিত ছিল। তারা ঠিকমতো ফাংশন করছিল না। সে কারণে অনেকেই পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। পুলিশ বাহিনীর মতো আরো দু-একটি জায়গায় কিছুটা অসহযোগিতার মুখোমুখি হয়েছি। বাস্তব কারণ ছিল হয়তো রাষ্ট্রের প্রশাসন যখন ভেঙে পড়েছে, তখন কে কাকে সাহায্য করবে, সে ব্যাপারে কিন্তু তাদের মধ্যে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে। ফলে অনেক কাজ এখানে স্লো হয়ে গেছে। তা না হলে আমরা আরো অ্যাডভান্স করতে পারতাম।
আমার দেশ : গুমের সঙ্গে অনেকগুলো এজেন্সি জড়িত ছিল। যেমনÑর্যাব, সিটিটিসি, ডিজিএফআইসহ অনেক রাষ্ট্রীয় এজেন্সি জড়িত ছিল। এই গুমের তদন্ত করতে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন কি?
তাজুল ইসলাম : এটা বলতেই হবে, আমরা যে স্ট্যান্ডার্ডে সহযোগিতা পাওয়ার কথা ছিল, সেটা কিন্তু পাইনি। কারণ, আমাদের গুমের যে সেন্টারগুলো, বিশেষ করে টিএফআই সেল, জেআইসি, এই জায়গাগুলোয় এক্সেস পেতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে এবং সময় লেগেছে। এরপর গুমের যে সেন্টারগুলো ছিল, টর্চার সেলগুলো ছিল, আয়নাঘরগুলো ছিল, সেগুলোতে কিন্তু আলামত ধ্বংস করা হয়েছে ব্যাপকভাবে।
স্ট্রাকচার চেইঞ্জ করে ফেলা হয়েছে, যেসব টর্চারের উপাদান ব্যবহার করা হতো, সেগুলো লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। গুমের সেলগুলোয় যে খাঁচা ছিল, সেগুলো বের করে ফেলা হয়েছে। সেখানে দেয়াল তুলে দিয়ে রুমগুলোর স্ট্রাকচার চেইঞ্জ করে দেওয়া হয়েছে। যাতে করে কোনো চিহ্ন না থাকে। আমাদের ম্যাপ এঁকে বের করতে হয়েছে, এই জায়গায় একটা রুম আছে। ওয়াল তুলে রুম বন্ধ করা হয়েছে। ওয়াল ভেঙে রুমে ঢুকতে হয়েছে। ঢুকে দেখলাম ভেতরে যা কিছু ছিল সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। ডিটেনশন সেন্টারগুলোয় যাতে না ঢোকা যায়, সেখানে ময়লা-আবর্জনা ও ফার্নিচার রেখে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে।
নানা ধরনের ভারী বস্তু রাখা হয়েছে, যাতে রুমগুলো এক্সেস করা না যায়। এর বাইরে আমরা বলব, একটা জায়গায় তাজা বোমা পেয়েছি। প্রথম কয়েক দিন যখন আমরা ভিজিট করি, তখন কিন্তু বোমাটা পাওয়া যায়নি। এই বোমাটা এখানে কীভাবে এলো, নাশকতার কোনো পরিকল্পনা ছিল কি না, এ বিষয়গুলো কিন্তু আমাদের ভাবতে হচ্ছে। সুতরাং খুব ইজিভাবে আমরা যেসব তদন্ত করতে পারছি, সব জায়গায় এক্সেস পাচ্ছি বিষয়টা সে রকম নয়।
এখনো বিভিন্ন সংস্থা থেকে রিপোর্টপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। বেসরকারি টেলিফোন কোম্পানিগুলো থেকে ডকুমেন্টস পাওয়ার ক্ষেত্রে তারাও কিন্তু সঠিকভাবে তথ্য দিতে চাচ্ছে না। তারাও বলে যে আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়েছিল। যেটা গণহত্যার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি আলামত। সেই জায়গায় আইসিটি মন্ত্রণালয়ের যারা আছেন তারাও কিন্তু সহজে এক্সেস দেয়নি।
আমাদের বিকল্প পন্থায় এই জিনিসগুলো বের করতে হয়েছে। সুতরাং অতীত সরকারের যে ছায়া, অপচ্ছায়া, আমাদের প্রশাসনের বিভিন্ন রন্ধ্রে রন্ধ্রে আছে, তাদের দিক থেকে অসহযোগিতা এখনো অব্যাহত আছে। যদিও সরকার এটা ওভারকাম করার চেষ্টা করছে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অসহযোগিতা করতে থাকে, সরকারের পক্ষে আইডেন্টিফাই করতে করতে অনেক সময় চলে যায়। সেই সময়টা তারা লাগিয়ে দিচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়াটা যাতে স্লো ডাউন হয়, এ জন্য তাদের প্রচেষ্টা চলমান আছে।