
দীর্ঘ ৭ মাস পার হলেও গাজীপুরে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ১৪৭ আসামির খোঁজ মেলেনি। পলাতক এসব আসামিদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে দুএকজন করে ধরাও পড়ছেন। পলাতক এসব আসামির সবাই মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বলে জানিয়েছে কারা সূত্র।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৬ আগস্ট গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৯৯ আসামি পালিয়ে যায়। পলাতক আসামিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে পুলিশ। এখন ১৪৭ জন আসামি পালাতক রয়েছেন। এরমধ্যে আলোচিত বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমিও রয়েছে। তার বন্দি নম্বর ছিল ৫১৭৭।
পালাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমিও (২৬) নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কালিয়ান গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে। ফাঁসির আসামি মুনতাসির আল জেমি কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন।
পুলিশ ও কারাকর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৬ আগস্ট কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থানরত বিভিন্ন দুধর্ষ বন্দি দাঙ্গা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারাবিধি অনুযায়ী প্রথমে সতর্ক করা হলেও তারা দাঙ্গা হাঙ্গামা চালিয়ে ২৫-৩০ কারারক্ষীকে গুরুতর আহত করে। একপর্যায়ে কারাগারের দেয়াল ভেঙে ফেলে এবং বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে ফেলে মই বানিয়ে কারাগারের দেওয়াল টপকে ২০৯ জন বন্দি পালিয়ে যায়। এ সময় বিশৃঙ্খলা ও দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে কারা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে ছয়জন বন্দি নিহত হন।
কারাগার থেকে আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ১৫ আগস্ট কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের জেলার মো. লুৎফর রহমান বাদী হয়ে মহানগরীর কোনাবাড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার পর কোনাবাড়ি থানা পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করে কোনাবাড়ি থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। পরে পুলিশ গ্রেপ্তারকৃত পালিয়ে যাওয়া আসামিদের আদালতে পাঠায়। আদালত থেকে কাশিমপুর কারাগারে ৪৭ জনকে পাঠানো হলেও বাকিরা কোথায় বা কোন হাজতে আছে সেটা জানাতে পারেনি।
থানা পুলিশ ও কারাকর্তৃপক্ষ আরও জানায়, ওই কারাগার থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুনতাসির আল জেমি নামে এক আসামি জেলখানা থেকে পালিয়েছেন। সেটি তার পরিবার হয়তো জানতে পারেনি। সম্প্রতি তার পরিবার বিষয়টি জানতে পারে এবং আবরার ফাহাদের ছোট ভাই ও বুয়েট ছাত্র আবরার ফাইয়াজ সোমবার সন্ধ্যায় তার ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন।
কোনাবাড়ি থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্যদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মামলা দায়ের পর কারাকার্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেনি বা কেউ স্বেচ্ছায় কারাগারে ফিরে এসেছে কিনা সেটিও জানায়নি।’
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘পুলিশ ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করলেও তাদের কারাগারে ফিরে এসেছে ৪৭ জন। অন্যদের হয়তো আদালত ভিন্ন কারাগারে পাঠিয়ে থাকতে পারে।’