Image description
 

নড়াইলে পাকা টমেটো জমিতেই পচে গলে নষ্ট হচ্ছে। বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে কৃষক। বিনামূল্যে নিতেও নারাজ ক্রেতারা! ফলে টন টন টমেটো ফেলে দেওয়া হচ্ছে ভাঁগাড়ে। নড়াইল সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের রুখালী মাঠের বিস্তীর্ণ জমিতে পাকা টমেটো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিরাশ কৃষকেরা আড়তে নিয়ে বিক্রি করতে না পেরে ভাঁগাড়ে ফেলে দিয়েছে। উৎপাদন মূল্য ঘরে তুলতে না পেরে টমেটো চাষে অনাগ্রহী হয়ে উঠেছে জেলার টমেটো চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে জেলায় ১৮৫ হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ করা হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ১০০ মে: টন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরো বেশি পরিমান জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। মাঠ ফসল, ঘের পাড়ে দেশি ও হাইব্রিড জাতের এ টমেটো আবাদ হয়েছে। যে সকল কৃষক আগাম জাতের টমেটো চাষ করেছে তারা দ্রুত অধিক মূল্যে টমেটো বিক্রি করতে পেরেছে। এখন বাজরে অধিক পরিমান টমেটো জোগান থাকায় দাম কমেছে। টমেটো সংরক্ষণের কোন উপায় না থাকার কারণে এটি পচনশীল দ্রব্য হওয়ায় দাম কিছুটা কম।

উপজেলার রুখালী গ্রামের টমেটো চাষি মাহাবুব হোসেন সময়রে কন্ঠস্বরকে বলেন, ‘আমার জমিতে যে পরিমান টমেটো রয়েছে তা প্রায় ৫/৬ টন হবে। গাছে দেওয়া বেড়া তো ভেঙে পড়ে যাচ্ছে। আমার একা না সবার একই অবস্থা। গত বছর জুস কম্পানি এসে ৫ টাকা কেজি দরে কিনতো। এখান থেকে গাড়ি ভরে নিয়ে যেত। তাতে ও লস হত না। এবছর তারা ও আসছে না। বাজারে টমেটো নিলে ও বিপদ। কোথাও ফেললে বাজার পরিষ্কার করে রেখে আসতে হচ্ছে। টমেটো চাষ আর করব না।’

একই গ্রামের মনির শেখ সময়রে কন্ঠস্বরকে বলেন, ‘আমি ঘেরের পাড়ে ৫ বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করেছি। এক একটা চারার পিছনে ২০ থেকে ২৫ টাকা খরচ হয়েছে। টমেটো অনেক ভাল হয়েছে কিন্তু কেউ কিনছে না। প্রথম দিকে দাম বেশ ভাল ছিল৷ ৫০ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। এখন টমেটো বাজারে নিয়ে গেলে আড়তদাররা বলছে এ গুলো ফিরিয়ে নিয়ে যাও। যায়গা পরিষ্কার করো। টমেটো চাষ করে জা তা মা'র খাইছি। এলাকার কেউকে বললে তারা ও নিচ্ছে না। পচে পচে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাখি খাদ্য এখন টমেটো।’

টমেটো চাষি চন্দন বিশ্বাস সময়রে কন্ঠস্বরকে বলেন, ‘টমেটোর যে দাম এগুলো তুলে নিয়ে ভ্যান খরচ ও হচ্ছে না। চাষ করে এখন বিপদে পড়েছি। বাজারে নিয়ে পাশের খালে ফেলে দিতে হচ্ছে।’

টমেটো চাষি খায়রুল সময়রে কন্ঠস্বরকে জানান, ‘আমার ১ বিঘা জমিতে টমেটো লাগানো। এতে আমার খরচ হয়ছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। আমি ২৫ হাজার টাকা ও বিক্রি করতে পারিনি। ১ টাকা কেজি তা ও কেউ নিচ্ছে না। ৮ টাকা কেজি ও যদি বিক্রি করতে পারতাম তাতে ও লস হত না। আমাদের চালান বেঁচে যেত। আমরা ও বেঁচে যেতাম। এ বিলে ৫০ বিঘা জমিতে টমেটো আছে সবার একই অবস্থা।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. জসীম উদ্দিন সময়রে কন্ঠস্বরকে বলেন, ‘যে সকল কৃষক আগাম জাতের টমেটো চাষ করেছে তারা দ্রুত অধিক মূল্যে টমেটো বিক্রি করতে পেরেছে। এখন বাজরে অধিক পরিমান টমেটো জোগান থাকার কারনে দাম কিছুটা কমেছে। তবে সামনের রমজানে আবার টমেটোর দাম বাড়বে।