Image description

আওয়ামী সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের রাজশাহীর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪ সমন্বয়ককে কৌশলে আটকে রেখে ‘মব’ তৈরির চেষ্টার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর চন্দ্রিমা এলাকায় বারিন্দ মেডিকেল কলেজে এ ঘটনা ঘটে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমের (সিআরটি) সদস্যরা খবর পেয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর তাদের উদ্ধার করেন। 

সমন্বয়কদের অভিযোগ, মেডিকেল কলেজে কতিপয় আওয়ামীপন্থী কর্মচারী তাদের চাঁদাবাজ হিসেবে অপপ্রচার করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছিল।

এই চার সমন্বয়ক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জি কে এম মেশকাত চৌধুরী মিশু, সংগঠনের জেলা কমিটির মুখ্য সংগঠক সোহাগ সরদার, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল বারী ও ছাত্রনেতা আল-সাকিব। তাদের মধ্যে মিশু ও সাকিব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আব্দুল বারী ও সোহাগ সরদার পড়াশোনা করেন রাজশাহী কলেজে। মিশু জুলাই আন্দোলনে রাবিতে মুখ্য ভূমিকা পালনকারীদের অন্যতম।

জানা গেছে, আজ চার সমন্বয় বারিন্দ মেডিকেল কলেজে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাবা মো. শামসুদ্দিনের কক্ষে কথা বলছিলেন। এ সময় বাইরে থেকে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা দিয়ে লোকজন জড়ো করেন। এ নিয়ে সেখানে হট্টগোল তৈরি হয়। পরে তারা সেখানে সমন্বয়কদের আটকে রাখে।

বারিন্দ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. বেলাল উদ্দীন বলেন, ‘এই চারজন গতকাল সোমবার এসে আমাদের সচিবের সঙ্গে কথা বলে গিয়েছিলেন। আজ আমার সঙ্গে বসার কথা ছিল। কিন্তু আমার সঙ্গে না বসে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষে যান। তারা বিভিন্ন কথাবার্তা বলছিলেন। এখন আমাদের কলেজেও তো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আছে। তারা এসবের প্রতিবাদ করেন।’

অধ্যক্ষ জানান, তার কলেজে অনুষ্ঠান চলছে। তাই আগে থেকেই পুলিশ ছিল। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশ সেনাবাহিনীকে খবর দেয়। পরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কুইক রেসপন্স টিমের (সিআরটি) সদস্যরাও আসেন। তারা চারজনকে চন্দ্রিমা থানায় নিয়ে যায়।

বারিন্দ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মালিক আওয়ামী সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বাবা মো. শামসুদ্দিন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বর্তমানে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

মো. শামসুদ্দিন বলেন, ‘এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। তারা (সমন্বয়করা) আমার সঙ্গে কঠোর ভাষায় কথাবার্তা বলেছে।’

তবে চাঁদা দাবির বিষয়ে কিছু বলেননি শামসুদ্দিন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।  

আরএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তাই ছাত্র নেতাদের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

ঘটনার বিষয়ে আজ সন্ধ্যায় মেশকাত মিশু গণমাধ্যমে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন। এতে তিনি লেখেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশের ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকদিন ধরে বারিন্দ মেডিকেল কলেজ থেকে আমাদের কাছে বেশকিছু অভিযোগ আসতে থাকে। সেখানে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাবার (যিনি শাহরিয়ার আলমের অবর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন) আশ্রয়ে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কর্মরত রয়েছেন।’

তিনি আরও লেখেন, ‘চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে আমরা সেখানে তথ্য সংগ্রহ করতে যাই। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত সচিব তাজুল ইসলাম রনির সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনায় বসি। আলোচনার একপর্যায়ে সেখানে কর্মরত বেশ কয়েকজন অফিস স্টাফ (যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত) এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ঢুকে পড়েন এবং আমাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু করেন। এর মধ্যে রুম এবং প্রতিষ্ঠানটির বাইরে মব তৈরি করে আমাদের আটকে ফেলা হয় এবং ইচ্ছেকৃতভাবে চাঁদাবাজ বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়।’

মিশু আরও লেখেন, ‘এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি। অনতিবিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’